মঙ্গলবার গভীর রাতে রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে চা বাগানের নালায় পড়ে এক হস্তি শাবকের মৃত্যু ঘটেছে মাল ব্লকের কুমলাই গ্রাম পঞ্চায়েতের নেবুছাপুর চা বাগানের ভন্ডাঢিপা শ্রমিক লাইনে। জানা গেছে, গত কয়েকদিন যাবত প্রায় পঞ্চাশটি হাতির একটি দল বেতগুড়ি, নেপুছাপুর চা বাগান সহ আশেপাশের এলাকায় খাবারের সন্ধানে ঘোরাফেরা করছিল। মঙ্গলবার শেষ রাতে কুমলাই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নিজাম বাড়ি সেনপাড়া এলাকায় খাবারের সন্ধানে হানা দিয়ে বেতগুড়ি চা বাগান হয়ে চেল নদী পেরিয়ে আপালচাদ বনাঞ্চলের দিকে ফিরে যাচ্ছিল হাতির দলটা। সেই সময় নেপুছাপুর চা বাগানের ভন্ডাডিপা শ্রমিক মহল্লা সংলগ্ন চাবাগানের ৩৬ নম্বর সেকসনে নালা পারাপার হতে গিয়ে বছর দুয়েকের একটি হস্তি শাবক নালার মধ্যে পড়ে যায়। জঙ্গল থেকে সারা রাত ভেসে আসে মা হাতির আর্তনাদ। মা হাতি তাকে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু বিফল হয়ে দলের সাথে বনাঞ্চলে ফিরে যায়। বুধবার সকালে চা বাগানের নালায় হাতির শাবকটিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন বাগানের শ্রমিকরা। খবর ছড়িয়ে পড়তেই ঘটনাস্থলে ভিড় জমান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় মালবাজার থেকে বন্যপ্রাণ স্কোয়ার্ডের কর্মীরা। আসে পুলিশ ও অন্যান্য বন কর্মীরা। বন দপ্তরের কর্মীরা মৃত হস্তি শাবকের দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। বন দপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, হস্তি শাবকটির বয়স প্রায় দুই বছর এবং পুরুষ।
হস্তি শাবকের মৃত্যু প্রসঙ্গে গ্রীন ডুয়ার্স স্বেচ্ছাসেবি সংগঠণের পক্ষে পরিবেশ কর্মী তানিয়া হক জানান, ‘‘বুধবার সকালেই ঘটনাটি স্থানিয় সূত্রে তারা জেনেছেন, খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। শুধুই কি মাটি চাপা , নাকি মৃত্যুর পেছনে রয়েছে আরও কোন ঘটনা রয়েছে। হস্তি শাবকের মৃত্যুতে প্রশ্ন তুলছেন ডুয়ার্সের পরিবেশ সংগঠনের সদস্যরাও। ইতিমধ্যেই পরিবেশ কর্মী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যার মধ্যে এক হচ্ছে হাতির করিডোরে কি ভাবে এত বড় গভীর নালা তৈরি করা হলো? দ্বিতীয়ত ঘটনাস্থলে বিদ্যুতের তারের উপস্থিতি কি কাজে ব্যবহারের জন্য রাখা হয়েছিল? তৃতীয়ত গভীর রাতে এত গুলো হাতির ঘোরাফেরা করল অথচ বন বিভাগ টেরই পেলো না কেনো? বন দপ্তর সুত্রে জানাগেছে গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে তারা। প্রশ্ন উঠেছে আপালচাঁদ রেঞ্জের জঙ্গল ছেড়ে হাতির দলটি বেরিয়ে এলেও সেখানে থাকা বনকর্মীর ভূমিকা নিয়ে। পরিবেশপ্রেমীদের দাবি, হয়তো হাতির দলটিকে বিরক্ত করার কারণে চেল নদী পেরিয়ে নেপুচাপুর চা বাগানে দিকে আশ্রয় নেয়, আর এতেই ঘটে যায় এমন মর্মান্তিক ঘটনা।
স্থানীয় বাসিন্দা মঙ্গল ওরাও, সুনীল ওরাও জানান, গত কয়েকদিন যাবৎ এই হাতির দলটি এখানে ঘোরাফেরা করছে। গতকাল শেষ রাতে বনাঞ্চলে ফেরার পথে এই ঘটনাটি ঘটেছে।
Elephant calf died
চা বাগানের নালায় পড়ে হস্তি শাবকের মৃত্যু

×
Comments :0