EDITORIAL

বিরোধীমুক্ত ভারত!

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial bjp rss congress opposition less india bengali news

একদা মোদী-শাহদের ঘোষিত লক্ষ্য ছিল কংগ্রেসমুক্ত ভারত গড়ার। এখন কয়েক ধাপ এগিয়ে তাঁরা বিরোধীমুক্ত ভারত গড়ার লক্ষ্যে পা বাড়িয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলনেত্রী অবশ্য অনেক আগেই বিরোধীমুক্ত পঞ্চায়েত গড়ার ডাক দিয়েছিলেন এবং কীভাবে বিরোধীমুক্ত পঞ্চায়েত গড়া যায় তার নমুনাও হাজির করেছিলেন গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে। ভাবা যায় কংগ্রেসমুক্ত ভারত গড়ার আরএসএস-বিজেপি’র অন্যতম প্রধান মুখ নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম বিকশিত হয়েছিল যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে এবং যে ঝান্ডা হাতে নিয়ে, স্বাধীন ভারতের জন্ম হয়েছিল যাঁদের লড়াইয়ের উত্তাল তরঙ্গ শীর্ষে, যাঁদের হাতে শুরু হয়েছিল স্বাধীন ভারতের নির্মাণ যজ্ঞ সেই কংগ্রেসকেই নাকি দেশ থেকে নির্মূল করে দিতে হবে। এমনটাই বলছে আরএসএস-বিজেপি।

কারা এ‍‌ই আরএসএস-বিজেপি ? সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামে যাদের কোনও ভূমিকা নেই, অবদান নেই। বরং আছে ব্রিটিশদের দালালি করার কদর্যতা। স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মবলিদান করেছে এমন একজনকেও পাওয়া যাবে না যিনি আরএসএস ঘনিষ্ট। বরং এমন আরএসএস অনেক আছে যারা ব্রিটিশ শাসকদের কাছে মুচলেকা দিয়ে ব্রিটিশ বিরোধিতা থেকে সরে আসার এবং ব্রিটিশদের সাহায্য সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছেন।


এহেন আরএসএস আজ কংগ্রেসমুক্ত ভারত গড়ার ডাক দিয়ে ব্রিটিশ বিরোধী ভারতের মুক্তি সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে মুছে ফেলে প্রতারকদের ইতিহাস লিখতে চাইছে। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো যে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভারত নির্মাণের ভিত্তি হিসাবে সংবিধান তৈরি হয়েছিল এবং যে সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুবাদে বিজেপি ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছিল এখন সেই সংবিধানকে অস্বীকার করে হিন্দুত্ববাদী প্রভুত্বকামী রাজত্ব কায়েম করতে চাইছে। সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুবিধা নি‍‌য়ে এখন সংসদকেই শাসক দলের দপ্তরে পরিণত করতে চাইছে। পদে পদে দলিত হচ্ছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। 

দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধাপে ধাপে আরএসএস’র শাখায় পরিণত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অবাধ স্বাধীনতার বদ‍‌লে সংবাদ মাধ্যম হয়ে উঠছে শাসকের মুখপত্র। সংসদ চলে গেছে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু আধিপত্যবাদীদের দখলে। নির্বাচন কমিশন কার্যত শাসকের জোহুঁজুরে হয়ে পড়েছে। অতঃপর বিচার ব্যবস্থার দখল নিতে শাসকরা মরিয়া।


নির্বাচনে জনগণের ভোট মূল্যহীন। টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার সংস্কৃতি চালু হয়ে গেছে। তেমনি কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে অন্য দলের সাংসদ-বিধায়ক, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি গোরু-ছাগলের মতো কিনে ক্ষমতা দখল করছে এবং বিরোধী শক্তিকে ক্ষীণ ও দুর্বল করছে। দলীয় তহবিলে টাকার জোগান বাড়াতে বেছে নেওয়া হয়েছে চরম অস্বচ্ছ পথ— নির্বাচনী বন্ড। কারা কোটি কোটি টাকা ঢালছে বিজেপি’র তহবিলে গণতান্ত্রিক ভারতের জনগণের তা জানার অধিকার নেই।


এইভাবে সর্বত্র একচেটিয়া ক্ষমতা দখলের উদগ্র বাসনা থেকে জন্ম নিয়েছে বিরোধীমুক্ত ভারত গড়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা। মোদী-শাহরা চায় না দেশে বিজেপি ছাড়া আর কোনও দল থাকুক। থাকলেও ক্ষমতার ত্রিসীমানায় নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানে তারা যেন না থাকে। সেই লক্ষ্যেই পরিচালিত হচ্ছে ইডি, সিবিআই, আয়কর বিভাগ। বিরোধিতার বা সমালোচনার কণ্ঠ শোনা গেলেই এদের লেলিয়ে দেওয়া হয়। ভীত-সন্ত্রস্ত করা হয়। হয়রানি করা হয়। এমনকি জেলে পোরা হয়। অর্থাৎ বিরোধিতার সমস্ত পরিসরটাকেই গ্রাস করে শাসকের একাধিপত্য কায়েম করার লক্ষ্য। বিরোধীমুক্ত হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ত ভারত।
 

Comments :0

Login to leave a comment