Editorial

ডাবল ইঞ্জিন সঙ্কটে

সম্পাদকীয় বিভাগ

আগামী ১০ মে কর্ণাটক বিধানসভার ভোট। মোদী-শাহের নেতৃত্বে বিজেপি’র নেতা কর্মীরা ক্ষমতায় ফেরার জন্য মরিয়া। কিন্তু পরিস্থিতি যেভাবে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে তাতে নেতাদের দুঃস্বপ্ন তাড়া করে বেড়াচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সাধের ডাবল ইঞ্জিন বেলাইন হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। তাছাড়া ১৯৮৫ সাল থেকে কর্ণাটকে কোনও দলই পরপর দু’বার ভোটে জেতেনি। এবার সেই ধারা উলটে দেবার প্রাণপণ চেষ্টা করলেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে বলে মনে হয় না।
বর্তমানে বিজেপি’র নেতৃত্বে যে সরকার চলছে সেটা কর্ণাটকের মানুষের ন্যায়সঙ্গত ভোটে জেতা সরকার নয়। কর্পোরেট অর্থে বলীয়ান বিজেপি মোটা টাকার বিনিময়ে অন্য দলের বিধায়ক কিনে সরকার গঠন করেছে। অসততা, কপটতা, প্রতারণা করে অ‍‌বৈধ পথে যে সরকারের জন্ম সেই সরকার আর যাই হোক জনস্বার্থে কাজ করতে পারে না। গত নির্বাচনে কোনও দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কংগ্রেস ও জেডি(এস) জোট করে সরকার গঠন করে। কিন্তু বেশিদিন সেই সরকার টেকেনি। দল ভাঙানোর খেলায় সবচেয়ে পারদর্শী অমিত শাহের হাতযশে মোটা টাকায় বিক্রি হয়ে যায় কংগ্রেস ও জেডি(এস)’র কিছু বিধায়ক। ফলে পতন হয় সরকারের। সেই কেনা বিধায়কদের নিয়ে সররকার গড়ে বিজেপি।
জনগণের রায়কে প্রত্যাখ্যান করে যারা টাকার জোরে সরকার গড়ে তাদের কাছে গণতন্ত্র মূল্যহীন, জনস্বার্থ পরিত্যাজ্য। আত্মস্বার্থ সিদ্ধির ধান্ধার জন্য যে সরকারি ক্ষমতা তা দুর্নীতিতে ঢাকা পড়বে সেটাই স্বাভাবিক। একের পর এক দুর্নীতির ঘনঘটায় নাজেহাল অবস্থা। দুর্নীতির দায়ে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছে অনেককে। অভিযুক্তের তালিকা দীর্ঘ। অন্যদিকে কাজ নেই। বেকারি তীব্র। আয় কম। আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি। সঙ্কটে জর্জরিত মানুষের ক্ষোভ ক্রমবর্ধমান। এই অবস্থায় ক্ষোভের প্রশমনে বার বার মুখ্যমন্ত্রী বদলানো হয়েছে। মন্ত্রীকে সরানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও সরকার বিরোধী ক্ষোভের মাত্রা কমার লক্ষণ নেই।
আরএসএস গোড়াতেই বুঝে গেছে স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কর্ণাটকে বিজেপি’র জমি পোক্ত করা যাবে না। তাই তারা বিভাজনের রাজনীতিকেই আশ্রয় করেছে। কখনো টিপু সুলতান, কখনো হিজাব, কখনো গোরক্ষা ইত্যাদিকে ইস্যু করে গেরুয়া বাহিনীকে নামানো হয়েছে বিদ্বেষ বিষ ছড়ানোর কাজে। উগ্র ধর্মান্ধ হিন্দুত্ববাদীরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে গেছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সংঘাত তৈরি করতে। সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও হিংসাকে একমাত্র অবলম্বন করে এগিয়েছে বিজেপি’র রাজনীতি। ভোটের মুখে এসেও সেই বিভাজনের রাজনীতি সরকারি ইন্ধন জোগানো হয়েছে। ৪ শতাংশ মুসলিম কোটা প্রত্যাহার করে লিঙ্গায়েত ও ভোক্কালিগা সম্প্রদায়কে ২ শতাংশ করে দেওয়া হয়েছে।
অসততা ও দুর্নীতির সরকারে আত্মস্বার্থসিদ্ধির প্রতিযোগিতা দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বকে তীব্র করেছে। ফলে বহু নেতা এমনকি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীরাও দল ছেড়ে চলে গেছেন। অনেকেই যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসে। কেউ কেউ গেছে জেডি(এস)-এ। আবার কেউ কেউ নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে প্রার্থী হতে পারেননি বহু নেতা। অন্য দলে গিয়ে তাঁরা প্রার্থী হয়েছেন। বাকিদের অনেকে হয় নির্দল প্রার্থী হয়েছেন অথবা ঘনিষ্ঠ কাউকে নির্দল প্রার্থী করেছেন। ফলে দক্ষিণ ভারতের একমাত্র রাজ্যে বিজেপি তরী ডোবার উপক্রম।
কর্ণাটকে ভোটের রাজনীতিতে লিঙ্গায়েত সম্প্রদায় প্রভাব উপেক্ষা করার উপায় নেই। এই লিঙ্গায়েতদের মধ্যে বিজেপি’র ধসের পূর্বাভাস স্পষ্ট। সেই দিক থেকে অনেকটাই সুবিধাজনক জায়গায় কংগ্রেস। এখন একমাত্র মোদী মাহাত্ম্যই বিজেপি’র ভরসা। তাই স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে দুর্নীতির দায়ে পদচ্যুত লিঙ্গায়েত মন্ত্রীকে ফোন করে প্রশংসা করতে হচ্ছে যাতে ভোটে বিপদ না বাড়ান।
 

Comments :0

Login to leave a comment