Editorial

কেমন যেন সাজানো

সম্পাদকীয় বিভাগ

বন্ধু আদানিকে বাঁচাতে এবং আদানির সঙ্গে সম্পর্ক আড়াল করে নরেন্দ্র মোদীর অস্বস্তি কমাতে একেবারে ছক কষে চিত্রনাট্য বানিয়ে খারিজ করা হয়েছে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ। শুধু বিরোধী মহলেই এখন আর এই চর্চা সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পড়েছে আমজনতার মধ্যে। সাম্প্রতিক ঘটনা পরম্পরা এবং একটার সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত অন্য একটি ঘটনার আবির্ভাব এটাই স্পষ্ট করে দেয় এর কোনোটাই কাকতালীয় নয়।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে কর্ণাটকে মোদী পদবি নিয়ে করা রাহুল গান্ধীর মন্তব্যে মানহানি হয়েছে বলে মনে করেন গুজরাটের এক বিজেপি বিধায়কের। অতি অবশ্যই তার পদবিও মোদী। তাই তিনি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন গুজরাটের সুরাটের নিম্ন আদালতে। ওই মন্তব্যে নরেন্দ্র মোদীর মানহানি হয়েছে কিনা তিনি তা জানাননি। আইন অনুযায়ী যিনি মানহানি হয়েছে বলে মনে করেন মামলা করতে হয় তাকেই। নরেন্দ্র মোদী মামলা করেননি। তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যায় তাঁর মানহানি হয়নি। অথবা তাঁর হয়ে বকলমে তাঁর রাজ্যের তাঁর দলের এক বিধায়ক মামলা করেছেন। দীর্ঘদিন মামলাটি আদালতে ঝুলেছিল। আচমকা বিস্ময়করভাবে মামলাটি নিয়ে দুরন্ত তৎপরতা শুরু হয়ে যায় রহস্যজনকভাবে মাসাধিককাল আগে থেকে। বিশেষ করে লোকসভায় আদানি কাণ্ড নিয়ে সংসদীয় সর্বদলীয় তদন্তে বিরোধীদের দাবি পক্ষে রাহুল গান্ধীর জোরালো সওয়াল এবং আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কের কথা প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে শোনার দাবি জানানোর পর থেকে। রাহুলের এই বক্তৃতা প্রবল অস্বস্তিতে ফেলে প্রধানমন্ত্রীকে। তাই রাহুলের বক্তৃতার যে অংশে আদানিদের উল্লেখ আছে তার সবটাই কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। তারপর আদানি প্রশ্নে বিরোধীর অনড় থাকায় নতুন চাল চালে মোদীর দল।


বিদেশে ভারতের গণতন্ত্রের অন্তর্জলি যাত্রা নিয়ে রাহুলের মন্তব্যকে অজুহাত করে দ্বিগুণ উৎসাহে সংসদীয় গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরে শাসক দল। রাহুলকে ক্ষমতা চাইতে হবে বলে হল্লা জুড়ে দিনের পর দিন সংসদ অচল করে রাখে। বি‍শ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে শাসকর অচল করা সংসদে কোনোরকম বিতর্ক আলোচনা ছাড়াই ১২ মিনিটে পাশ করা হয় বাজেট। একই কায়দায় গিলোটিনে যায় সব দপ্তরের স্বতন্ত্র বাজেটও। গণতন্ত্রের জননী দেখছে আক্ষরিক অর্থেই একদলয়ে গণতন্ত্রে বিরোধিতার অধিকার নেই। মোদী সরকার যা চায় সেটাই হয়েছে। এই সরকার বিরোধিতা সমালোচনা সহ্য করে না। সংসদেও সেটা বাস্তবাগিত করা হলো। রাহুল দা‍‌বি করেন তার বিরুদ্ধেই যখন অভিযোগ তখন তাকে বলতে দেওয়া হোক। কিন্তু বলতে দেওয়া হয়নি। এরই ফাঁকে সুরাটের মামলা চলে যায় ফাস্ট ট্র্যাক কোটে এবং শুনানি শুরু হয়ে যায় ঝড়ের গতিতে। শুনানিতে হাইকোর্টের স্থ‍‌গিতাদেশও উঠে যায়। দ্রুত শুনানি সেরে সাজা ঘোষণা হয় দু’বছরের জেল। একদিনও কম নয়। দু’বছর জেল হলে সাংসদ পদ খারিজ হবার বিধান আছে। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবার জন্য ৩০ দিন সময় দিয়েছে আদালত। কিন্তু ততদিন অপেক্ষা করলে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই রায় ঘোষণার পর ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই পড়ি কি মরি করে সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়া হলো। রায়ের কপি হাতে আসার আগেই সম্ভবত অতি প্রত্যাশিত কাজটি সেরে ফেলা হলো! এবার হয়তো আরও তৎপরতায় পুনর্নির্বাচনের ঘোষণাও হয়ে যেতে পারে।
এই ঘটনা পরম্পরা কোনও কাকতালীয় বা স্বাভাবিক ঘটনা প্রবাহ বলে মেনে নেওয়া কার্যত অসম্ভব। উদ্দেশ্য পরিষ্কার। মোদীদের লক্ষ্য শুধু কংগ্রেস মুক্ত ভারত নয়, পুরোপুরি বিরোধীমুক্ত বি‍‌জিপি’র ভারত। পদে পদে গণতন্ত্রের ডানা ছেঁটে পঙ্গু করে শেষে কবরে পাঠিয়ে তাদের স্বস্তি। সেই পথে রাহুল অন্যতম টার্গেট এবার একে একে নিশানায় আসবে অন্য ‍বিরোধীরাও। 
 

Comments :0

Login to leave a comment