জাতিগত বিদ্বেষমূলক গালাগালির প্রতিবাদ করায় ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত ত্রিপুরার ২৪ বছরের এক এমবিএ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। দেরাদুনের একটি হাসপাতালে টানা ১৪ দিনের বেশি মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর শুক্রবার শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অঞ্জেল চাকমা। ঘটনার ন্যায়বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে উত্তরাখণ্ডে। এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেছে বিরোধীরা। সোমাবর লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এবং রাজ্যসভার সাংসদ কপিল সিব্বল এটিকে ‘‘ঘৃণামূলক অপরাধ’’ বলে অভিহিত করেছেন এবং সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী অ্যাঞ্জেল চাকমার হত্যার তীব্র নিন্দা করে বলেন,‘‘ শাসক দল ঘৃণাকে স্বাভাবিক করে তুলেছে, যার ফলে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।’’
টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘দেরাদুনে অ্যাঞ্জেল চাকমা এবং তাঁর ভাই মাইকেলের সঙ্গে যা ঘটেছে তা ঘৃণার এক ভয়াবহ উদাহরণ। ঘৃণা রাতারাতি জন্মায় না, বরং প্রতিদিনই তা লালন করা হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক যে আমাদের যুবসমাজ বিষাক্ত বিষয়বস্তু এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রচারের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে, যা সমাজে এই ধরনের হিংসাকে স্বাভাবিক করে তুলছে। ভারত ভিত্তি শ্রদ্ধা ও ঐক্যের উপর প্রতিষ্ঠিত, ভয় ও ঘৃণার উপর নয়। আমরা বৈচিত্র্য ও ভালোবাসার একটি জাতি। আমাদের সহ-ভারতীয়দের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে দেখে নীরব দর্শক হয়ে থাকা উচিত নয়। আজ, আমাদের দেশকে আমরা কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছি তা নিয়ে আমাদের চিন্তা করা দরকার। চাকমা পরিবার এবং ত্রিপুরা সহ সমগ্র উত্তর-পূর্বের জনগণের প্রতি আমার সমবেদনা।’’
রাজ্যসভার সাংসদ কপিল সিব্বলও এই ঘটনাকে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেছেন। তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে ঘৃণামূলক অপরাধের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার আবেদন জানিয়েছেন। সিব্বল এক্স-এ লিখেছেন, ‘‘অ্যাঞ্জেল চাকমার হত্যাকাণ্ড ঘৃণামূলক অপরাধ এবং ধর্মান্ধতার এক মর্মান্তিক উদাহরণ। এই ঘটনাটি কেন্দ্রের সরকার এবং তাদের নিষ্ক্রিয়তার মাধ্যমে এই ঘটনায় জড়িত নেতাদের নীরবতারও প্রমাণ।’’ সিব্বল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে ঘৃণামূলক অপরাধের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার আবেদনও করেছেন।
গত ৯ ডিসেম্বর উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেরাদুনের সেলাকুই এলাকায় ছোট ভাই মাইকেল চাকমাকে নিয়ে বাজারে গিয়েছিলেন অঞ্জেল। সেখানেই একদল যুবক তাঁদের উদ্দেশে জাতিগত কটূক্তি ছোড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তখনই অঞ্জেল শান্ত কিন্তু দৃঢ় স্বরে বলেন, “আমরা চাইনিজ নই… আমরা ভারতীয়। প্রমাণ করতে হলে কোন সার্টিফিকেট দেখাবো?” এই কথার কয়েক মিনিটের মধ্যেই অভিযুক্তরা হিংস্র হয়ে ওঠে এবং ছুরি নিয়ে হামলা চালায় তাঁদের উপর।
অ্যাঞ্জেলের বাবা, অভিযোগ করেছেন যে আক্রমণকারীরা তাঁর ছেলেকে ‘‘চাইনিজ মোমো’’ বলে বিদ্বেষমূলক গালাগালি করেছে। অ্যাঞ্জেল যখন প্রতিবাদ করে বলে যে সেও ভারতীয়, তখন তার উপর আক্রমণ করা হয়। তবে পুলিশ বিদ্বেষমূলক আক্রমণের দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। দেরাদুনের এসএসপি অজয় সিং’র আজব যুক্তি দিয়ে বলেন, অভিযুক্তদের মধ্যে একজন নিজেই মণিপুরের বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, ২১ বছর বয়সি মাইকেল চাকমার অভিযোগের ভিত্তিতে ১২ ডিসেম্বর মামলা রুজু হয়। ১৪ ডিসেম্বর ছয় অভিযুক্তের মধ্যে পাঁচ জনকে— যার মধ্যে দু’জন নাবালক— আটক করা হয়।
সেলাকুই থানার সিনিয়র সাব-ইনস্পেক্টর জিতেন্দ্র কুমার রবিবার জানান, ‘‘মূল অভিযুক্ত যজ্ঞ আওয়াস্থি নেপালে পালিয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ। তাকে ধরতে দু’টি পুলিশ দল পাঠানো হয়েছে এবং ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অঞ্জেলের মৃত্যুর পর মামলায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৩(১) (খুন) ও ৩(৫) (সাধারণ উদ্দেশ্যে অপরাধ) ধারাও যুক্ত করা হয়েছে।’’
Tripura student's killing
ত্রিপুরার ছাত্র খুনে আক্রমণাত্মক বিরোধীরা
×
Comments :0