তিনি আরও বলেন, ‘‘বর্তমান দেশের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ২০ মে’র বদলে ৯ জুন ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে নেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন গুলোর পক্ষ থেকে।’’
সিআইটিইউ’র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অনাদি সাহু বলেন, ‘‘শ্রমিক কর্মচারীদের দাসত্বের শৃংখলে বাঁধার লক্ষ্যে, কেন্দ্রীয় সরকার দেশের ২৯ টি শ্রম আইন বাতিল করে মালিক শ্রেণীর অবাধ শোষনের স্বার্থে যে শ্রমকোড নিয়ে এসেছে সেই শ্রমিক কর্মচারীর স্বার্থ বিরোধী শ্রম কোড বাতিল সহ ১৭ দফা দাবিতে দেশের কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি এবং শিল্প ও ক্ষেত্রভিত্তিক ফেডারেশন সমূহ ২০ মে, ২০২৫ দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটে ডাক দিয়েছিল। কিন্তু, দেশে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জন মানুষের দুঃখজনক মৃত্যু ও পরবর্তীতে যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, গত ১৫ মে ২০২৫, দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্তরের কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি ও শিল্প ক্ষেত্রভিত্তিক ফেডারেশন সমূহের সভা ২০ মে ২০২৫ এর পরিবর্তে এই সর্বভারতীয় ধর্মঘটকে পিছিয়ে ৯ জুলাই, ২০২৫ অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’’
শ্রমিক সংগঠন গুলোর নেতৃত্বের কথায়, গত কয়েক মাস ধরে এরাজ্যেও এই ধর্মঘটের সমর্থনে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন সমূহ ও শিল্প ও ক্ষেত্রভিত্তিক ফেডারেশন গুলি বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে এসেছে। যা রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছোতে সাহায্য করেছে। এই ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়েছে রাজ্যের কৃষক, খেতমজুর সংগঠণসমূহ ও মেহনতি মানুষের বিভিন্ন সংগঠন। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সংযুক্ত কিষান মোর্চাও ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছে।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, দেশের বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার করেই কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন সমূহ ও ক্ষেত্র ও শিল্পভিত্তিক ফেডারেশন গুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ২০ মে ২০২৫ এর পরিবর্তে, দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট আগামী ৯ জুলাই ২০২৫ অনুষ্ঠিত হবে। তবে ২০ মে ২০২৫, সারা দেশের সাথে আমাদের রাজ্যেও সর্বত্র সমস্ত শিল্প- কল-কারখানায় ডেপুটেশন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিক বিরোধী, দেশ বিরোধী নীত ও দূর্নীতিগ্রস্ত রাজ্য সরকারের শ্রমিক ও জনবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে।
এর পাশাপাশি, সমস্ত জেলা, অঞ্চল, কল-কারখানা এবং শিল্পক্ষেত্রগুলিতে ৯ জুলাই দেশব্যাপী সাধারন ধর্মঘটকে বিপুল হবে সফল করতে নিবিড় প্রচার কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে। এর সাথে সাথে ধারাবাহিকভাবে, ধর্মঘটের ১৭ দফা দাবির সমর্থনে বিভিন্ন কর্মসূচি সমস্ত ভরেই রূপায়িত হবে।
সিআইটিইউ নেতৃত্ব বলে এই ধর্মঘট কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি এবং রাজ্য সরকারের নীতির বিরুদ্ধে। তাদের কথায়, যারা দেশের সম্পদ লুঠ করেছে সেই সব পুঁজিপতিদের কর ছাড় দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে শ্রম কোডের মাধ্যমে। তাদের দাশে পরিনত করা হচ্ছে। কৃষকদের ঋণ মুকুব করা হচ্ছে না। রাষ্ট্রায়াত্ব শিল্প গুলোকে শেষ করে দিচ্ছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। এই রাজ্যে একই কাজ করেছে তৃণমূল সরকার। রাজ্যের বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা গুলো খোলার কোন উদ্যোগ নেই। শ্রমদের ওয়েল ফেয়ার বোর্ডের যেই টাকা সেই টাকা নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছে সরকার। সেই টাকা দিয়ে চলছে খেলা মেলা। এই দুই সরকারের বিরুদ্ধে ৯ জুলাইয়ের ধর্মঘট।
গতকালের বিকাশ ভবনের ঘটনা প্রসঙ্গে অনাদি সাহু বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাত্রে সল্টলেকে বিকাশভবনের সামনে শিক্ষা দপ্তরের সামনে আন্দোলনরত চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের ওপর রাজ্যের সরকার, নারকীয় পুলিশি অত্যাচার নামিয়ে এনেছে। বিনা প্ররোচনায় পুলিশের এই বেপরোয়া লাঠিচার্জের ফলে প্রায় ৩০ জনেরও বেশি আন্দোলনকারী শিক্ষক শিক্ষিকা আহত হয়েছেন, যার মধ্যে বেশ কয়েকজনের আঘাত গুরুতর। বহু শিক্ষক শিক্ষিকা রক্তাক্ত হয়েছেন। যা আমাদের সমাজের পক্ষে অত্যন্ত উদ্বেগের ও লজ্জার। এছাড়াও, গতকাল সকালে এই শিক্ষক শিক্ষিকাদের আন্দোলনকে ভাঙতে এবং তাদের অবস্থান তুলে দিতে, শাসক দলের এক নেতা সব্যসাচী দত, তার দলের বেশ কিছু সমাজবিরোধী নিয়ে এসে আন্দোলন স্থলে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে এবং পুরুষ-নারী নির্বিশেষে বেশ কিছু আন্দোলনকারীদের শারীরিকভাবে হেনস্থা করেছে। এছাড়াও সংবাদমাধ্যমে আমরা দেখেছি শাসক দলের ওই নেতা বিদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টার এবং তার সহকারীদের শারীরিকভাবে হেনস্থা করেছেন। আমরা এই আক্রমণের তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এই প্রেক্ষিতে আমরা দাবি করছি অবিলম্বেযোগ্য শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশ করে চাকরি ফেরত, অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি বাতিল করতে হবে ও দোষীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। আ আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপরে পুলিশের হিংস্র আক্রমণের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা রাজ্যের সমস্ত কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং ক্ষেত্র ও শিল্পভিত্তিক ফেডারেশন সমূহ দাবি করছি এই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর আক্রমণ চালানোর জন্য বিধান নগরের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সব্যসাচী দত্ত সহ সমস্ত দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’’
Comments :0