MOHUN BAGAN ISL

কলকাতায় আইএসএল ট্রফি,
অনন্য যাত্রা সবুজ-মেরুণের
দেখুন ভিডিও

খেলা

MOHUN BAGAN ISL রবিবার কলকাতায় আইএসএল জয়ী মোহনবাগান।

শুভঙ্কর দাস 

জেদ, ভরসা এবং আত্মবিশ্বাস সবকিছুই যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল গোয়ার ফতোরদা স্টেডিয়ামে। রবিবার কলকাতায় ফিরল মোহনবাগান। নিয়ে এসেছে আইএসএল ট্রফি। সেই আত্মবিশ্বাস সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছে গোটা দল। 

শনিবারের আইএসএল ফাইনালে ছিল টানটান রোমাঞ্চ। ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ, প্রতি আক্রমণ এবং সঙ্গে অবশ্যই কিছুটা ফিজিক্যাল। খুব স্বাভাবিক, কারণ এই ধরণের হাই টেম্পারমেন্ট গেমে এই বিষয়গুলো থাকবেই। তবে এটিকে-মোহনবাগান একাদশে আশিক কুরনিয়ানের অন্তর্ভুক্তি এবং খুব আকস্মিক ছিল বেঙ্গালুরু এফসি প্রথম একাদশে সুনীল ছেত্রীর না থাকা। কিন্তু ম্যাচের একেবারে শুরুতেই শিবশক্তির চোটের দরুণ ফোর্স পরিবর্তন করতে হয় বেঙ্গালুরু কোচকে এবং নামেন ছেত্রী।

কিন্তু লড়াই ছিল তুল্যমূল্য। কিছু জায়গায় রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়েও অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। এছাড়াও ম্যাচের মাঝে বেঙ্গালুরু কিছুটা হারিয়েও গেছিল। কিন্তু পাল্টা ফিরেও আসে। সবুজ মেরুন লড়াই থেকে কখনোই হারিয়ে যায়নি। প্রতিটা ফুটবলারের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে, তারা যেন ট্রফি জিততেই মাঠে নেমেছে। 

বেঙ্গালুরুর হয়ে সন্দেশ ঝিঙ্গান, প্রবীর দাস প্রচুর ওয়ার্কলোড নিয়েছিলেন। সাথে রোশান, সুরেশ, জাভি, রয় কৃষ্ণ এবং শিভাশক্তি তাদের সেরাটাই উজাড় করে দিয়েছেন। তিনকাঠির নীচে গুরপ্রীত ছিলেন অনবদ্য। কিন্তু শেষরক্ষা করতে পারলেন না। অন্যদিকে সবুজ মেরুনের হয়ে স্লাভকো, কার্ল ম্যাঘাউ, দিমিত্রি পেত্রাতোস, হুগো বুমোস, মনবীর সিং, শুভাশিস, আশিক, অধিনায়ক প্রীতম কোটাল,আশিস রাই এবং গ্লেন মাটিন্স অসাধারণ ফুটবল খেলেছেন। কাকে ছেড়ে কার কথা বলা যাবে? একেকজন যেন সবুজ মেরুন যোদ্ধা, জিততেই মাঠে নেমেছিলেন। গোলরক্ষক বিশাল কেইথ যেন অপ্রতিরোধ্য, সাফল্যের চুড়ায় রয়েছেন। 

জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে, ম্যাচের ১৪ মিনিটে পেনাল্টি বক্সে বল হাতে লাগে বেঙ্গালুরুর অন্যতম ভরসা রয় কৃষ্ণের। সঙ্গে সঙ্গে বাঁশি বাজে রেফারি হরিশের। পেনাল্টি থেকে গোল করে সবুজ মেরুনকে এগিয়ে দেন দিমিত্রি পেত্রাতোস। ম্যাচে ১-০ এগিয়ে গিয়ে আরও মুডে চলে আসে গোটা বাগান শিবির। কিন্তু পাল্টা লড়াই দেয় বেঙ্গালুরুও। প্রথমার্ধের একেবারে শেষে, ম্যাচের ৪৫ মিনিটে টপ বক্সে রয় কৃষ্ণকে অফ দ্যা বল চ্যালেঞ্জ করেন শুভাশিষ এবং তৎক্ষণাৎ পেনাল্টি পায় বেঙ্গালুরু। পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা ফেরান অধিনায়ক সুনীল। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-১ ফলাফল নিয়ে। 

দ্বিতীয়ার্ধের বেশ কিছুটা সময় ম্যাচ নিষ্প্রভ লাগলেও, ৭৮ মিনিটে কর্নার থেকে কৃষ্ণর হেডে গোল হতেই ম্যাচ জমে যায়। অন্যদিকে দিমিত্রির একটি শট গোললাইন সেভ করেন প্রবীর দাস। কিন্তু ঠিক ৮৫ মিনিটের মাথায় পরিবর্ত হিসেবে নামা কিয়ান নাসিরিকে পেনাল্টি বক্সে ফাউল এবং পেনাল্টি পায় এটিকে-মোহনবাগান। গোল করে সমতা ফেরান সেই পেত্রাতোস। শেষপর্যন্ত দ্বিতীয়ার্ধ শেষ হয় ২-২ ফলাফল নিয়ে। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়তে। কিন্তু সেখানেও ফলাফলের কিছু পরিবর্তন ঘটেনি। অবশেষে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।     

এই টাইব্রেকারে অনেকেই এগিয়ে রেখেছিলেন গুরপ্রীতকে। তার কারণও ছিল। দেখা গেছে বেশীরভাগ পেনাল্টি কিকেই ঠিক দিকেই ঝাঁপিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেভ করার ক্ষেত্রে ভিশাল কেইথ এগিয়ে। এই ম্যাচেও তাই হয়েছিল। সিলভার শট রুখে দেন তিনি। প্রথম দুটি শটে দুই দলই গোল করে। এর মধ্যে একটি পেত্রাতোসেরও ছিল। ফলে হ্যাট্রিক হয়ে যায় তার। কিন্তু বেঙ্গালুরু এফসির তিন নম্বর শটটিই রুখে দেন ভিশাল এবং আত্মবিশ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। সবুজ মেরুন হেডস্যার জুয়ান ফেরেন্দোর অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে এমনকি অনেক পরিবর্তন নিয়েও প্রশ্ন ছিল। কিন্তু না, প্রমাণ করলেন তিনি সঠিক। কিয়ান নাসিরির ঠাণ্ডা মাথায় পেনাল্টি কিক মারা দেখেই বোঝা গেল যে, কতটা শক্তিশালী অনুশীলন ছিল তাদের। শেষপর্যন্ত বেঙ্গালুরুর পাবলো পেরেজের শট মিস হতেই চ্যাম্পিয়ন এটিকে-মোহনবাগান। 

আর এরপরই উল্লাসে মেতে ওঠেন ফুটবলার, কোচিং স্টাফ এবং কর্মকর্তারা। জয়ের আনন্দ, একটা গোটা ইউনিট হিসেবে এত লড়াই, এত কঠিন সময় পেরিয়ে আসা, খারাপ সময়ে বাজে কথা, কিন্তু সবকিছুর ওপর সেই লড়াই। অনবদ্য লড়াই, জেদ এবং আবারও হার্ড ওয়ার্ক। আর কিছু নেই, জয়ের পর ফেরেন্দোর মুখে সেই শৈশবের হাসি, কত চাপ সহ্য করে এগিয়ে চলা। পারলেন, তিনি পারলেন। হিমশীতল মানসিকতা, ম্যাচ বের করে আনলেন। গ্যালেগোর সুপার কামব্যাক। লিস্টন, হামতে সবাই, সবাই। একঝাঁক স্বপ্নের উত্থান। একটা গোটা দলকে এককাট্টা করে লীগ টাইটেল জয়। সবুজ মেরুন প্রতিটা যোদ্ধার পরিশ্রম মিশে আছে। সবশেষে কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা ঘোষণা করলেন যে, পরের মরশুম থেকে মোহনবাগান নামের আগে আর এটিকে থাকছেনা। সমর্থকদের মন জিতল টিম ম্যানেজমেন্ট। নাম হবে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস। ট্রফি জয় এবং মনের কষ্ট উধাও সমর্থকদের। 

টাইব্রেকারে সবুজ মেরুন জয়ী ৪-৩ ব্যবধানে। ম্যাচের সেরা হ্যাট্রিক বয় দিমিত্রি পেত্রাতোস। 

গোল্ডেন গ্লাভস পেলেন বিশাল কেইথ, তিনকাঠির নীচে কি অনবদ্য পারফরম্যান্স। লীগের সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হলেন ছাংতে। সোনার বুট পেলেন দিয়েগো মরিসিও। বেঙ্গালুরু এফসি হেডস্যার সিমন গ্রেসনকে ধন্যবাদ জানাতেই হয় একটি বিষয়ে। শিবশক্তির মতো একজন প্রতিভাবান ফুটবলারকে তিনি সুযোগ দিয়েছিলেন। লিগের এমারজিং ফুটবলার নির্বাচিত হলেন তিনি। সব মিলিয়ে দারুণ একটা যাত্রা শেষ হলো। 

(রবিবার কলকাতায় অচ্যুৎ রায়ের তোলা ছবি।)

Comments :0

Login to leave a comment