Editorial on yogi adityanath

যোগীর রাজ্যে জঙ্গলরাজ

সম্পাদকীয় বিভাগ

এটা এখন আর কথার কথা নয়, গেরুয়াধারী মুখ্যমন্ত্রীর জমানায় উত্তর প্রদেশে যথার্থ অর্থেই জঙ্গলরাজ কায়েম হয়েছে। যোগীর বরাভয়ে উত্তর প্রদেশ এখন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য। সর্বত্র অস্ত্রের ঝনঝনানি। কথায় কথায় গুলি। খুনের পর খুন। গোটা সমাজ সন্ত্রস্ত। মানুষের নিরাপত্তার ন্যূনতম প্রত্যাশাটুকুও দিন দিন মিলিয়ে যাচ্ছে। আরএসএস-বিজে‍‌পি শাসনে মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসেই যোগী আদিত্যনাথ দুষ্কৃতী দমনে জিরো টলারেন্সের নামে আইন ও বিচার ব্যবস্থা বহির্ভূত খতম অভিযানে পুলিশকে ব্ল্যাঙ্ক চেক লিখে দিয়েছেন। অর্থাৎ যাদের নামে অপরাধের অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মমাফিক পুলিশি তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবার রাস্তা থেকে সরে গিয়ে বিচারের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে পুলিশের হাতে। পুলিশ সে কাজ সারছে এনকাউন্টারের আড়ালে। অভিযুক্তকে ধরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করে আদালতের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী সাজা দেবার জটিলতায় যাচ্ছে না। সরাসরি অভিযুক্তকে লক্ষ্য করে গুলি করে হয় খুন করছে অথবা পঙ্গু করে দিচ্ছে। যোগীর পুলিশের এইভাবে খুন করার পোশাকি নাম ‘ঠোক দো’, ‘অপরারেশন ল্যাঙড়া’ ইত্যাদি। ক্ষমতায় আসার পর যোগীর ‍নির্দেশে এমন দশ হাজারেরও বেশি এনকাউন্টার করেছে পুলিশ। তাতে পুলিশের সরাসরি গুলিতে খুন হয়েছে ১৬৯ জন। অহত বা জখম অথবা চিরতরে পঙ্গু হয়েছে বেশ কয়েক হাজার। লক্ষণীয় তথাকথিত এই এনকাউন্টারে যাদের টার্গেট করা হয়েছে তাদের সকলেই প্রায় সংখ্যালঘু বা দলিত। অর্থাৎ এনকাউন্টারের মাধ্যমে সংখ্যালঘু ও দলিত হত্যাই যেন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যোগীরাজের বিধান অনুযায়ী অভিযুক্তকে হয় সরাসরি গুলি করে মেরে ফেল অথবা এমন জায়গায় গুলি কর যাতে বাকি জীবন পঙ্গু হয়ে থাকে।
সম্প্রতি দুই দিনের ব্যবধানে তিন তিনটি গুলি করে খুনের ঘটনা ঘটেছে যোগীর রাজ্যে। প্রথমে আতিক পুত্র আসাদ ও সঙ্গী গুলামকে খুন করা হয় এনকাউন্টারে। দু’দিনের মাথায় পুলিশি নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে তিন দুষ্কৃতী কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে খুন করে আতিক ও তার ভাই আশরাফকে। একটি হাতকড়ায় বাঁধা দুই ভাইকে পুলিশের সামনে গুলি করে মারা হলেও পুলিশ বাধা দেয়নি। উলটে খুনিরা খুন করে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে পুলিশের সঙ্গেই থেকে যায় ঘটনাস্থলে। তার দু’দিন পর প্রকাশ্য দিবালোকে সকলের সামনে দুই দুষ্কৃতী গুলি করে খুন করে এক কলেজ ছাত্রীকে। দেখা যাচ্ছে খুনিরা এতটাই বেপরোয়া যে তাদের বীরত্ব প্রমাণ করছে জনসমক্ষে। সেই খুনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে সমাজ মাধ্যমে। আতিক খুনের ঘটনা তো লাইভ টেলিকাস্ট হয়ে অনেক টিভি চ্যানেলে। পুলিশের এনকাউন্টারে খুনে দারুণ উৎসাহিত অপরাধ জগৎ। তারা দ্বিগুণ উৎসাহে পুলিশকে অনুসরণ করছে। আধুনিক দামি আগ্নেয়াস্ত্রও সহজলভ্য। সামাজিক মূল্যবোধ, মানবিকতা, আইন-আদালতে আস্থা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। সমাজকে আদিম বর্বরতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment