গত পাঁচ বছরে কর্পোরেট ঋণ মকুব হয়েছে দশ লক্ষ কোটি টাকা। ব্যাঙ্কের হিসাবের খাতায় যেটা অনাদায়ী ঋণ, অর্থাৎ কর্পোরেট মালিকরা যে টাকা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ হিসাবে নিয়ে ফেরত দেয়নি সেই টাকাই ছাড় বা মকুব করে দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাঙ্কগুলির পুঞ্জিভূত মোট অনাদায়ী ঋণের থেকে দশ লক্ষ কোটি টাকা যদি ছাড় বা মকুব করে দেওয়া হয় তাহলে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ কমে যায়। ব্যাঙ্কগুলি তখন দাবি করতে পারে তাদের এনপিএ বা অনাদায়ী ঋণের বোঝা অনেকটাই কমে গেছে। একে তারা তাদের পরিচালনগত সাফল্য বা দক্ষতা হিসাবেই দেখাতে চায়। আর অর্থমন্ত্রী বক্তৃতা দিয়ে বড়াই করেন তার চেষ্টার ফলেই ব্যাঙ্কগুলি এই সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
দেখা যাক, নির্মলা সীতারামনের সাফল্যটা ঠিক কেমন। ব্যাঙ্কের টাকা, যে টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ হিসাবে দেয় সেটা অর্থমন্ত্রী বা ব্যাঙ্ক কর্তাদের ব্যক্তিগত টাকা নয়। দেশের মানুষ তাদের কষ্টার্জিত টাকা ব্যাঙ্কে সঞ্চয় করেন। সেই টাকাই ব্যাঙ্ক ঋণ হিসাবে দেয় কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের। অর্থাৎ জনগণের উপার্জিত অর্থ ঋণ হিসাবে কর্পোরেট মালিকরা পায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। সেই টাকা যথারীতি তারা শোধ না করে হাত গুটিয়ে বসে থাকে। এইভাবেই বাড়তে থাকে ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ। ব্যাঙ্কের আয়ের একমাত্র উপায় দেওয়া ঋণের সুদ। কর্পোরেট সংস্থা ঋণ শোধ না করলে আয় যেমন মার খায় তেমনি মূলধন লোপাট হয়ে যায়। এই অবস্থায় সরকারের যখন উচিত কড়া পদক্ষেপ নিয়ে ঋণ আদায় করা, তখন তা না করে মোদী সরকার ঋণ মকুব করে দিয়ে কর্পোরেটকে বিপুল টাকা লুটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। বাইরে প্রচার করছে ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণ কমে যাচ্ছে।
লক্ষণীয় মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ধাপে ধাপে কর্পোরেটের ঋণ মকুবের বহর হু হু করে বেড়েছে। ক্ষমতায় আসার প্রথম বছরে (২০১৪-১৫) ঋণ মকুব হয় ৫৮ হাজার কোটি টাকা। ঠিক আগের বছর ঋণ মকুব হয়েছিল মাত্র ৩২ হাজার কোটি টাকা। নোট বাতিলের বছর এক ধাক্কায় ঋণ মকুব বেড়ে হয় এক লক্ষ আট হাজার কোটি টাকা। আর যে বছর নির্বাচনী বন্ড চালু করা হয় সে বছর আরও বেড়ে ১.৬১ লক্ষ কোটি টাকা হয়ে যায়। তারপরের তিন বছর গড়ে মকুব হয় বছরে সোয়া দুই লক্ষ কোটি টাকা করে। তাহলে ‘ক্রোনোলজি’টা স্পষ্ট করে দিচ্ছে জনগণের টাকা বন্ধু কর্পোরেটের সেবায় কীভাবে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা হয়েছে।
নির্বাচনী বন্ড চালু হবার পর থেকে কর্পোরেট ঋণ মকুব যে গতিতে বেড়েছে, তার সঙ্গে প্রায় সঙ্গতি রেখে কর্পোরেট সংস্থাগুলি নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিপুল টাকা বিজেপি’র তহবিলে চালান করেছে। আরও লক্ষণীয়, কর্পোরেট করের হারও অনেকটা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে নির্বাচনী বন্ড চালু হবার সময় থেকেই।
Comments :0