২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লিতে সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সময় বিজেপি নেতাদের উস্কানিমূলক ভাষণ ও উত্তেজনা ছড়ানোর জেরে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিল। সেই হিংসায় বলি হয়েছিল অন্তত ৫৩জন। আহত-জখমের সংখ্যা সহস্রাধিক। অসংখ্য বাড়ি-ঘর, ঝুপড়ি-বস্তি, দোকান-পাট ভেঙে তছনছ এবং পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল। সহায়সম্বল, রুটি-রুজি হারিয়েছিলেন হাজার গরিব শ্রমজীবী নিরীহ মানুষ। সেই ভয়াবহ ঘটনাকে সামনে রেখে অমিত শাহর দিল্লি পুলিশ প্রায় ৭০০ মামলা রুজু করে। বেশিরভাগ এফআইআর-ই বেছে বেছে সংখ্যালঘু আন্দোলনকারী এবং তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। গণ্ডগোলের সময় ত্রিসীমানায় না থাকলেও আগে কোনোদিন প্রতিবাদী সভায় বক্তব্য রাখার জন্য মামলায় ফাঁসানো হয় অনেককে। উমর খালিদ, শারজিল ইমামরা তেমনভাবে আজও বন্দি আছে কার্যত বিনা বিচারে। তাদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইনের ধারা চাপিয়ে বছরের পর বছর জেলে আটকে রাখার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
বার বার আবেদন করার পরও তাদের জামিন মঞ্জুর করছে না দিল্লি হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের পরও বারবার শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে সেই মামলা প্রত্যাহার হয়। সর্বশেষ ফের সর্বোচ্চ আদালতে মামলা হলে শুনানির দিন ফের শুনানি স্থগিত হয়ে যায়. সম্প্রতি দেশের প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন বিচার প্রক্রিয়ায় জামিন স্বাভাবিক। জামিন না হওয়া ন্যায় বিচার নয়। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, শারজিলদের ক্ষেত্রে জামিন না পাওয়াটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু কেন কার্যত বিনা বিচারে তাদের বছরের পর বছর জেলের অন্ধকারে আটকে রাখা হয়েছে তা আন্দাজ করা যায় দিল্লি হাইকোর্টে তাদের আইনজীবীদের সওয়াল থেকে। তাতে বলা হয়েছে এফআইআর প্রহসনের জন্যই তাদের ৫ বছর ধরে জেলে আটকে থাকতে হচ্ছে। প্রমাণ জালিয়াতি করে ফাঁসানো হয়েছে। খালিদের আইনজীবী বলেছেন এই এফআইআর’র কোনও আইনি বৈধতা নেই। আগে ঠিক করে নেওয়া হয়েছে এই লোকটাকে ধরতে হবে। তারপর উল্টো পথে সাজানো হয়েছে।
এই চাঞ্চল্যকর সওয়ালই যেন মূর্ত হয়ে উঠেছে একটি সর্বভারতীয় দৈনিকের দিল্লির দাঙ্গার মামলাগুলি নিয়ে পরিবেশিত সংবাদে। দিল্লির দাঙ্গা নিয়ে দিল্লি পুলিশ ৬৯৫টি  কেসে অভিযুক্ত বেকসুর খালাস হয়েছে। মাত্র ১৯টি কেসে সাজা হয়েছে। ৯৩টি বেকসুর কেস যাচাই করে দেখা গেছে (১) অভিযোগ লিপিবদ্ধ হয়েছে পুলিশের নির্দেশে অথবা পুলিশের লেখা বয়ানে। (২) ভুয়া সাক্ষী হাজির করা হয়েছে। (৩) জাল নথি পেশ করা হয়েছে। (৪) তদন্ত অফিসার সাক্ষীর বয়ানের সঙ্গে অতিরিক্ত তথ্য যোগ করেছে জোরালো করার জন্য। (৫) কনস্টেবলকে দিয়ে বানানো ও দাবি করানো যে তিনি ঘটনাস্থলে অভিযুক্তকে দেখেছেন। (৬) অভিযুক্তকে চিহ্নিতকরণ ছিল সন্দেহে মোড়া। (৭) প্রতারণামূলকভাবে অভিযোগ চাপিয়ে কেস সাজানো হয়েছে।
এরপর অমিত শাহর পরিচালনাধীন দিল্লি পুলিশের সততা, আইনের প্রতি দায়বদ্ধতা, সত্য উন্মোচনের ন্যূনতম প্রয়াস আছে বলা যাবে কি? স্পষ্ট দিল্লি পুলিশ সংবিধান ও আইনকে অনুসরণ না করে হিন্দুত্ববাদী সরকারের নেতাদের হুকুম তামিল করে চলেছে।
Editorial
দিল্লি পুলিশ কি অমিত শাহর পুলিশ
                                    
                                
                                    ×
                                    
                                
                                                        
                                        
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
Comments :0