Bangladesh

বাংলাদেশে মৌলবাদী তাণ্ডবের বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ

রাজ্য

জলপাইগুড়িতে মিছিলের ছবি।

 বাংলাদেশে উগ্র মৌলবাদী আগ্রাসন, শ্রমিক দিপু দাসের নৃশংস হত্যা, শিক্ষা-সংস্কৃতি-সংবাদমাধ্যমের অঙ্গনে ব্যাপক তাণ্ডবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অংশের মানুষ। শনিবারের পর রবিবারেও কলকাতা সহ জেলায় জেলায় প্রতিবাদ মিছিলে পা মিলিয়েছে রাজ্যবাসী। অংশ নিয়েছে একাধিক সমাবেশে। ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সিপিআই(এম) সহ বাম দলগুলি। আগামী মঙ্গলবার এন্টালি থেকে বেকবাগানে বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন ভবন পর্যন্ত বামপন্থী দলসমূহের ডাকে কেন্দ্রীয় মিছিল হবে। বাংলাদেশে ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক সংখ্যালঘু এবং প্রগতিশীল মানুষের ওপর নৃশংস মৌলবাদী আক্রমণের প্রতিবাদে ওইদিন এই মিছিল হবে বলে জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।    
এর আগেই এক সাংবাদিক বৈঠকে বাংলাদেশের ঘটনাবলিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সেলিম বলেন, এদেশে যারা ধর্মের নামে যুক্তিবাদীদের আক্রমণ করছে, কালবুর্গী, পানসারে, গৌরী লঙ্কেশদের হত্যা করেছে, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশে যুক্তিবাদী ব্লগারদের হত্যাকারী, সাংবাদিকদের আক্রমণকারীদের কোন তফাৎ নেই। ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতিতে যারা খুন ধর্ষণ অগ্নিসংযোগ করছে, তাদের ধর্ম এবং ধর্মীয় স্লোগান দুই দেশে আলাদা হতে পারে, কিন্তু রাজনীতি ও আদর্শ একই। এরা ধর্মের নামে সমস্ত বিরুদ্ধ মত, বিরোধী রাজনীতি দমন করতে চায়। আমরা বামপন্থীরা সব ধরনের ধর্মীয় উসকানি ও হিংসার বিরুদ্ধে, সেটা এদেশেই হোক আর বাংলাদেশে। 
সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লক বাংলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় এক বিবৃতিতে বলেন, দেশভাগের যন্ত্রণা দুই দেশের মানুষকে এখনও বহন করতে হচ্ছে। মানুষের আর্থিক সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থার ব্যাপকতম উন্নয়ন বা পরিবর্তন কোনটাই উভয় দেশে হয়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। বাংলার সংস্কৃতির ওপর যেভাবে আক্রমণ নেমে আসছে, সংখ্যালঘুদের ওপর মৌলবাদীদের আক্রমণ চলছে, তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক।  
উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদীদের হিংসা উন্মত্ততা, বাংলাদেশের  সংবাদপত্রের দপ্তরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া, সাংবাদিককে নিগ্রহ, গুলি, নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে খুন, শ্রমিককে পুড়িয়ে মারা, রবীন্দ্রনাথের নজরুলের সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্র ভেঙে দেওয়া, বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া সহ সেখানকার সংখ্যালঘুদের ওপর  অত্যাচারের বিরুদ্ধে রবিবার উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে মিছিল, সমাবেশ হয়। কলকাতার উত্তরে এবং দক্ষিণে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। কাশিপুর, শ্যামপুকুর অঞ্চলে এদিন সিপিআই(এম)’র ডাকে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে টালিগঞ্জ-১ এরিয়া কমিটির ডাকে।
অন্যদিকে বহরমপুরে এক প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেন অসংখ্য মানুষ। মিছিল বহরমপুরে সিপিআই(এম) জেলা দপ্তর থেকে শুরু হয়ে শহর পরিক্রম করে। এছাড়া দক্ষিণ দিনাজপুর জুড়ে সিপিআই (এম)’র প্রতিবাদ মিছিল, পথসভা হয়েছে। পার্টির কুমারগঞ্জ এরিয়া কমিটির উদ্যোগে কুমারগঞ্জ ও  গোপালগঞ্জে প্রতিবাদ মিছিল ও পথসভা হয়। 
সিপিআই(এম) দেশপ্রিয় নগর টেক্সম্যাকো এরিয়া কমিটির ডাকে উপেন সেন স্মৃতিভবন থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে এদিন। বিভা মোর, ওল্ড নিমতা রোড, এসপি মুখার্জি রোড, মিলিটারি রোড, শহীদ বেদীর মোড়, আদর্শ পল্লি হয়ে দেশপ্রিয় নগর কলোনি বাজারে মিছিল শেষ হয়। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সভা হয়। একই সঙ্গে বরানগরে দুটি এরিয়া কমিটির যৌথ কেন্দ্রীয় মিছিল হয়েছে। শহীদ ভবন থেকে শুরু হয়ে গোপাল লাল ঠাকুর রোড সহ বিভিন্ন অঞ্চল মিছিল পরিক্রমা করে। একই ভাবে সিপিআই (এম) পূর্ব বেলঘরিয়া এরিয়া কমিটি দপ্তরের সামনে সমাবেশ হয়েছে। অন্যদিকে বেলঘরিয়া স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের সামনে থেকে শুরু হয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পর বিটি রোডের রথ তলার মোড়ে এসে শেষ হয়। এছাড়া পার্টির আড়িয়াদহ—  দক্ষিণেশ্বর এরিয়া কমিটির নেতৃত্বে আড়িয়াদহে শনিবার একটি প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। 
বাংলাদেশে মৌলবাদী বর্বরতার প্রতিবাদে মিছিল হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। রবিবার সিপিআই(এম) বজবজ এরিয়া কমিটির উদ্যোগে বজবজের চড়িয়াল মোড় থেকে পোকপারী পর্যন্ত মিছিল হয়। এছাড়া সিপিআই(এম) মধ্য যাদবপুর এরিয়া কমিটির উদ্যোগে ১১০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল পথ পরিক্রমা করে। এছাড়াও উস্থির খাঁপুর মোড় থেকে সংগ্রামপুর হাট পর্যন্ত মিছিল হয়েছে। বিষ্ণুপুরের আমতলা, ডায়মন্ডহারবার, কাকদ্বীপ সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় এদিন প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হন মানুষ। সিপিআই(এম) মহেশতলা ২ এরিয়া কমিটির আহ্বানে মোল্লারগেটে প্রতিবাদ সভা হয়। 
শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানিয়ে সিপিআই(এম) হলদিয়া জোনাল সাংগঠনিক কমিটির ডাকে মিছিল হয়েছে এদিন। হলদিয়ার উৎসব ভবনের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়ে, পৌরসভা, বিগ বাজার, বাবাজিবাসা হয়ে হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির গেটের সামনে শেষ হয়।  রবিবার জলপাইগুড়ি শহরে কদমতলা মোড়ে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে সংখ্যালঘু নিধনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা হয় এবিটিএ ও এবিপিটিএ-র উদ্যোগে। এছাড়া এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই- এর উদ্যোগে প্রতিবাদ মিছিল জলপাইগুড়ি শহরের ডিবিসি রোড জেলা দপ্তরের সামনে থেকে শুরু করে শহর পরিক্রমা করে কদমতলা মোড়ে এসে শেষ হয়। 
এদিন নৈহাটি পার্টি অফিসের সামনে থেকে এক প্রতিবাদ মিছিল শহর পরিক্রমা করে। এই মিছিল গৌরীপুরে গিয়ে শেষ হয়। এছাড়া পলতা পার্টি অফিসের সামনে থেকে মিছিল কন্ঠাধার গিয়ে শেষ হয়। বীজপুর-পানপুর গ্রাম এলাকার ধানকল বাজার থেকে শুরু হয়ে অপর একটি মিছিল ডিফেন্স কলোনি, নাগদা হয়ে বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে। মশাট বাজারেও সিপিআই (এম)'র ডাকে মিছিল ও পথসভা হয়। দক্ষিণ দমদম (২) এরিয়া কমিটির উদ্যোগে এক প্রতিবাদ মিছিল দমদম রোড ঘুঘুডাঙ্গা অঞ্চল থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে দমদম রোড ছাতাকলে শেষ হয়। শান্তি সম্প্রীতি রক্ষার আবেদন জানিয়ে সিপিআই (এম)বর্ধমান শহর ৪ এরিয়া কমিটির উদ্যোগে নীলপুর অঞ্চলে এদিন মিছিল হয়।

Comments :0

Login to leave a comment