Mrinal Sen Birth centenary

প্রশ্ন করতে শিখিয়েছিলেন পদাতিক, মৃণাল সেন শতবর্ষের অনুষ্ঠানে বললেন বিশিষ্টরা

কলকাতা

 

আমৃত্যু পদাতিক মৃণাল সেনের ছবি নিয়ে পশ্চিমী অভিমত ছিল তিনি ‘মার্কসিস্ট’। আমরা তাঁকে চিনেছি আজন্ম প্রশ্ন করতে শেখানো একজন সমাজ বিশেষজ্ঞ চিত্র পরিচালক হিসাবে। বিগত শতাব্দীর চারের দশকে অধুনা বাংলাদেশ থেকে এপার বাংলায় এসেও নাড়ির সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। তিনি দেখেছেন দেশভাগ, মন্বন্তর, সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়। তাঁর ছবিতে বারেবারে সেসব প্রসঙ্গ ফিরে ফিরে এসেছে। তিনি সমাজকে দেখতে চিনিয়েছেন, তিনি প্রশ্ন করতে শিখিয়েছেন। ছবির মধ্য দিয়ে বারে বারে বিতর্ক তুলেছেন। মৃণাল সেনের ছবির চরিত্ররা সেসব প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে কখনও নীরব থেকেছেন, আবার কখনও নতুনতর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন। মৃণাল সেন জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি আয়োজিত আলোচনাসভায় আলোচকরা দর্শক মননে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়ে গেলেন।
‘মৃণালের ভুবনে মৃণাল-সন্ধান’ করতে গিয়ে এক পদাতিক শিল্পীর জীবন ও সৃষ্টিকে মেলে ধরেছেন নবীন পরিচালক মনীষ ঘোষ তাঁর ‘ইন কোয়েস্ট অব মৃণাল সেন’ ছবিতে। শ্যামা রহমানের সূচনা সঙ্গীতের পর পর্দায় যখন ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছিল তখন পরিপূর্ণ সরলা রায় মেমোরিয়াল হলের দর্শকদের নিবিড় চোখ অন্বেষণ করে চলেছিল মৃণাল সেনকে। বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতে মৃণাল সেনের ভুমিকা প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বাংলাদেশের বিশিষ্ট পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল বলেন, মৃণাল সেনের ছবি দেখে বড় হয়েছি, চলচ্চিত্রে সমাজ রাজনীতি বুঝতে শিখেছি। ছবির মধ্যে এক সংবেদনশীল সৃজনশীল মানবিক মুখ খুঁজে পেয়েছি। ঔপনিবেশিক শাসনের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হলেও তার ছেড়ে যাওয়া আমলাতন্ত্র কীভাবে সমাজ ও জীবনকে ক্ষতবিক্ষত করছে তার একটা দিগন্ত মৃণাল সেনের ছবিতে ধরা পড়েছে। দেশভাগ, দারিদ্র, দাঙ্গা তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন, ছবিতে তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। ঘরে বাইরে শত্রুকে চিহ্নিত করেছেন। 
মৃণাল সেনের বেশ কিছু ছবির সহ পরিচালক পথিক ভাট জানান, চলচ্চিত্র জগতে মৃণাল সেনই আমার প্রথম শিক্ষক। যাঁর কাছ থেকে ছবিতে মানুষের জীবন যন্ত্রণার কথা কীভাবে শিল্পিত রূপে ফুটিয়ে তুলতে হয় শিখেছি। আমি চেষ্টা করবো দিল্লি মুম্বাইতে অনুরূপ সভা করার। 
অভিনেতা ও পরিচালক অঞ্জন দত্ত বলেন, সৃষ্টিশীল প্রতিটি মানুষকে একটা সময় অবসর নিতে হয়। মৃণাল সেনও একটা সময় ছবি করা থেকে বিরত ছিলেন। দীর্ঘ বিরতির পর নির্মাণ করেন আমার ভুবন। সমসময়কে চিহ্নিত করণ ও যুগযন্ত্রণার এক অসামান্য ব্যঞ্জনা ছবিটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে। তিনি আমাদের থেমে না থেকে প্রশ্ন করতে শিখিয়েছেন। ‘মহাপৃথিবী’র দিকে একবার চোখ মেলে তাকালে আমরা সেই সত্যটা খুঁজে পাই। মমতাশঙ্কর জানান, মৃণাল সেনের হাত ধরেই আমার জীবনে প্রথম অনেক কিছু পাওয়া। প্রথম পারিশ্রমিক, প্রথম অভিনয়, প্রথম নিজের যোগ্যতায় ফার্স্ট ক্লাসে বিদেশযাত্রা। তিনি সবসময় আমার খোঁজ খবর রাখতেন। নিয়মিত ফোনালাপ চলত। শেষদিকে রাতের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফোন করলে বলতেন, বেঁচে আছি। এখনও যেন সেই কথাগুলি নীরবে শুনতে পাই। 
মৃণাল পুত্র কুণাল সেনের সঙ্গে বাবার সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতন। এমনকি তিনি বাবাকে বন্ধু বলেই সম্বোধন করতেন। বললেন, বাবার প্রয়াণের পর একটা বই লিখি। সেখানে অনেক অন্তরঙ্গ কথা আছে। ছোটবেলায় বাবা মা’র কাছে অনেক গল্প শুনেছি। কিন্তু আমি যখন ছোট ছোট টুকরো ঘটনা নিয়ে গল্প বলি বন্ধু তখন অবলীলায় সেসব গল্পের অবয়র পালটে দিতেন। আসলে পালটে যাওয়া পৃথিবীটা তিনি বারে বারে ছবির মধ্যে তুলে ধরেছেন। দেবজ্যোতি মিশ্র সঙ্গীত জীবনে মৃণাল সেনকে যেমন দেখেছেন তার কিছু টুকরো ছবি মেলে ধরেন। পরে মৃণাল সেনের ছবিতে ব্যবহৃত সঙ্গীত নিয়ে কিছু গান শোনান।
 

Comments :0

Login to leave a comment