গল্প
প্রতিজ্ঞা
------------------------
সৌরীশ মিশ্র
------------------------
নতুনপাতা
{ad]
টুকাই আর টুকটুকি ভাই-বোন। টুকাই-এর বয়স এগারো আর টুকটুকির নয়। দুই ভাই-বোনে এখন পার্ক থেকে খেলাধুলা করে বাড়ি ফিরছে। প্রতিদিন বিকেলে ওরা এই পার্কে আসে ওদের বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে। ওদের দু'জনেরই অনেক বন্ধু। পার্কটা ওদের বাড়ির এক্কেবারে কাছেই।
এখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হবে হবে করছে। দুই ভাই-বোন নানান রকম গল্প-স্বল্প করতে করতে হাঁটছে। বোনের হাতটা ধরে রেখেছে টুকাই। এই রাস্তায় বাস বা চার চাকার গাড়ি না চললেও সাইকেল, রিক্সা, বাইক, চলে প্রচুর। আর তাছাড়া এই রাস্তাটায় ফুটপাথ বলেও কিছু নেই। তাই টুকাই আর টুকটুকি পার্কে যাওয়া আসার সময়ে রাস্তার একেবারে সাইড দিয়ে দিয়ে যায় আসে। যেমন এখন যাচ্ছে ওরা।
আর কিছুটা এগোলেই একটা মোড়। আর সেটা ঘুরলেই টুকাই-টুকটুকিদের বাড়ি। বেশ এগোচ্ছিল ওরা, হঠাৎই টুকাই দাঁড়িয়ে পড়ল থমকে কেন জানি! দাদাকে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে টুকটুকি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে সাথে সাথে, "দাদা, দাঁড়ালি যে!"
'ঐ দ্যাখ্ বোন।" ডান হাতটা উঁচিয়ে সামনের দিকে দেখায় টুকাই।
টুকটুকি দেখে, ওদের থেকে আর একটু খানিক দূরে, সামনে, রাস্তার উপর পড়ে আছে একটা কলার খোসা।
"কে কলা খেয়ে চোকলা ফেলেছে রে বোন। যে কেউ ওতে পিছলে পড়তে পারে।"
"তো কি করবি রে দাদা?"
"ওটা তুলে নিয়ে ফেলব সামনের মোড়টায় যে নোংরা ফেলার বিনটা আছে না, সেটায়।"
"তুই ঐ নোংরা চোকলাটায় হাত দিবি দাদা?"
"তাতে কি হয়েছে! বাড়ি গিয়ে তো সাবান দিয়ে হাত ধোবোই। কিন্তু এখন এটা এখান থেকে না সড়ালে যারই পা পড়বে ওতে সেই পড়ে যাবে। আর তার লাগবে খুব।" কথাগুলো বলা শেষ করেই টুকাই এগিয়ে যায় সামনে। পিছন পিছন টুকটুকি। বাঁ-হাতে কলার খোসাটা তুলে নেয় টুকাই। তারপর ফের দুই ভাই-বোন পা বাড়ায় ওদের বাড়ির দিকে।
গল্পটা কিন্তু এখানেই শেষ হোলো না। কারণ, এই গল্পে, টুকাই আর টুকটুকি ছাড়াও আরও একটি মুখ্য চরিত্র আছে। তার নাম রনিতা। কলেজে পড়ে সে। রাস্তায় যেখানটায় কলার খোসাটা দেখতে পেয়েছিল টুকাই, তার ঠিক সামনের দোতলা বাড়িটাই ওদের। ওই রনিতাই, টুকাই আর টুকটুকি আসার একটু আগে ওদের বাড়ির একতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে কলা খেয়ে খোসাটা ছুঁড়ে ফেলেছিল রাস্তায়।
টুকাই আর টুকটুকি এতোক্ষণ নিজেদের মধ্যে যা যা কথা বলল আর তারপর টুকাই কলার খোসাটা তুলেও নিয়ে গেল বিন-এ ফেলবে বলে, এই পুরো ব্যাপারটাই সব শুনল, সব দেখল, ঐ একতলার বারান্দাটা থেকেই রনিতা। নিজের কাজের জন্য সে লজ্জিত হোলো যারপরনাই। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, এমন ভুল আর কক্ষনো হবে না ওর।
----------------------------------
{ad]
Comments :0