DOMESTIC HOUSE WORKERS

গৃহ পরিচারিকাদের জীবন যন্ত্রণা বেহালা ক্লাবের মন্ডপে

রাজ্য কলকাতা

Domestic workers

"ভাত জোটে তো নুন জোটেনা, কোমড় বেধে রাখি

চোখের জলের নুন দিয়ে রোজ ভাতের দলা মাখি।"

বেহালা ক্লাবের মন্ডপে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে কানে ভেসে এল আবহ সঙ্গীতের ছেড়া ছেড়া টুকরোগুলো। আর তার মধ্যে এই দুই লাইন যেন বুকের ভেতরে একটা মোচড় দিয়ে গেল। আসলে এই গানে, এবং ভাবনা সৃজনের মাধ্যমে বেহালা ক্লাব সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি, তাঁদের ৭৯ তম বর্ষে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে গৃহ পরিচারিকাদের জীবন যন্ত্রণা, তাঁদের কাহিনী।

গৃহ পরিচারিকা। আরও চালু ভাষায় কাজের লোক, অথবা কাজের মহিলা। কাকভোরে, দিনের প্রথম ট্রেনে, কিংবা বাসে করে একঝাঁক ভেঙে পড়া শরীরের অবয়ব শহর কলকাতায় 'কাজ' করতে আসেন। পেটের দায়ে। তাঁদের শ্রম ছাড়া মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চ মধ্যবিত্ত গেরস্থলী অসহায়। 

কিন্তু কোন অবস্থায়, কোন পরিস্থিতির জন্য তাঁরা রাত ভোর হওয়ার আগেই ক্যানিং, বারুইপুর লোকাল কিংবা এসডি-৮, ৭৫ নম্বর বাসে করে শহরে ছুটে আসেন সেটা কি আমরা ভেবে দেখেছি?  একটা বড় অংশ আসে  শহরের মাঝে থাকা 'বস্তি'গুলি থেকেও।

এবারের শারদোৎসবে সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বেহালা ক্লাব। তাঁদের এবারের থিম 'ভাত কাপড়'। রূপায়নে শিল্পী অদিতি চক্রবর্তী। তাঁর ভাবনায়, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কম বয়সে বিয়ে করে আনা 'বউ'দের উপর স্বামীদের মন উঠে যায় বড্ড তাড়াতাড়ি। 

এক সংসার ছেড়ে সেই পুরুষরা পাড়ি জমান অন্য কোথাও। 'স্বামী' মশাই অগ্নিসাক্ষী করে 'ভাত কাপড়ের' দায়িত্ব নিলেও, পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে কোলের একরত্তি শিশু সন্তানের, এবং নিজের পেটের ভাত জোগাড়ের দায় পুরোপুরি এসে বর্তায় মায়ের উপর। এবং সেই ভাত জোগাড়ের পথ হিসেবেই তাঁকে বেছে নিতে হয় বাবুদের বাড়িতে 'কাজ'কে।

প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে গোটা মন্ডপ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এই শ্রমজীবী মহিলাদের ঘর গেরস্থলীর ছাপ। মন্ডপের ঠিক মাঝখানে রয়েছে একটি স্তম্ভ। সেটি গোটা মন্ডপের ভার বহন করছে। আর সেই স্তম্ভের সামনে গোল করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কিছু ক্ষয়াটে মূর্তি, যারা সমাজের ভার বহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছেন। আর তাঁদের সামনের হাঁড়িতে রাখা রয়েছে চাল।  

আবার মন্ডপের এককোণে দাঁড়িয়ে রয়েছে একইরকম দেখতে কিছু রুগ্ন মূর্তি, যাঁদের পেটের হাঁড়িতে আগুন জ্বলছে।  প্রতিমার চালচিত্রও দৈনন্দিন জীবনের টুকিটাকি, যেমন ঝুড়ি, চিরুনি, স্টোভ দিয়ে সাজানো। মন্ডপে প্রবেশ পথকে সাজানো হয়েছে নিম্নবিত্ত অঞ্চলের মানুষের বাসস্থানের খেলনা মডেল দিয়ে।

ক্লাবের তরফে ক্লাব  রঞ্জন দলুই, দেবব্রত বর্মন রায়, তরুনাভ চৌধুরী, নির্মাল্য প্রতিম পান্ডা'রা জানাচ্ছেন, "যেই মানুষগুলির জন্য আমাদের প্রতিদিনের রুটিন ঘড়ির কাঁটা মেনে চলতে পারছে, আমরা কিন্তু তাঁদের জীবনের করুণ কাহিনী নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন বোধ করিনা। সেই নেপথ্যে থাকা মানুষগুলিকে সামনের সারিতে তুলে আনতে আমাদের এই প্রয়াস।"

বেহালা ক্লাবের এই বছরের প্রতীমা তৈরি করেছেন শিল্পী অদিতি চক্রবর্তী এবং রাজেশ মাইতি। আবহ নির্মাণ করেছেন অর্পণ ঠাকুর চক্রবর্তী। মন্ডপ নির্মাণের দায়িত্ব সামলেছে পঞ্চানন ডেকরেটার্স। আলো'র বিষয় সামলেছে দাস ইলেক্ট্রিক।

Comments :0

Login to leave a comment