আগামী দেড় মাস রাজ্যের প্রতিটা বুথে বৈঠকি সভা করবে সিপিআই(এম)। শুক্রবার সিপিআই(এম) রাজ্য সদর দপ্তর মুজফিআফর আহমেদ ভবনে জানালেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি জানিয়েছেন আগামী দশ দিনে দশ হাজার বৈঠকি সভা করবে সিপিআই(এম)।
সেলিম বলেন, ‘রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষের মধ্যে ভয় তৈরি করেছে তৃণমূল। লোকে মন খুলে কথা বলতে পারেন না। আমরা গণতন্ত্রকে রাজ্যে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আগামী দশ দিনে রাজ্যে জুড়ে দশ হাজার বৈঠকি সভা করবে সিপিআই(এম)। আর আগামী দেড় মাসে প্রতিটা বুথে বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত মানুষের সাথে হবে বৈঠকি সভা। তাদের সমস্যার কথা জানা হবে।’
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘দেড় মাস আগে আমার জানিয়েছিলাম বাংলা বাঁচাও যাত্রা তুফাঙ্গঞ্জ থেকে শুরু হবে। তা কামারহাটিতে শেষ হয়েছে। এই যেই যাত্রা তার পাশাপাশি রাজ্য জুড়ে চলেছে বাংলা বাঁচাও যাত্রা। এখনও চলছে। জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। ২০-২২ দিনের প্রস্তুতিতে সংগঠিত ভাবে রাজ্য জুড়ে এই অভিযান হয়েছে। মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গিয়েছে।’ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির বৈঠকে ছিলেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক এমএ বেবি। সেলিম জানিয়েছেন, গত দুই মাসের কর্মসূচির পর্যালোচনা যেমন হয়েছে বৈঠক, তেমন ভাবে আগামী দুই মাসের কর্মসূচি নিয়েও হয়েছে আলোচনা। এসআইআর পর্বে রাজ্য জুড়ে যেই ভোটার সহায়তা কেন্দ্র সিপিআই(এম) এর পক্ষ থেকে করা হয়েছে তা আরও সময় চলবে বলে জানিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক।
সেলিম বলেন, ‘বিজেপি তৃণমূল ভয় আর সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করার চেষ্টা করেছে এসআইআরকে কেন্দ্র করে। মন্দির মসজিদের রাজনীতি শুরু হয়েছে। আমাদের কর্মীরা সব সময় মানুষের পাশে থেকেছে। কমিশনকে বিভিন্ন বিষয় বার বার অভিযোগ জানানো হয়েছে। বড় অংশের বামপন্থী কর্মী সমর্থক এই কাজে হাত বাড়িয়েছেন। ফর্ম ফিলাপ করার ক্ষেত্রে মানুষ বামপন্থীদের ওপর ভরসা করেছে। কমিশন এই কাজে তৈরি ছিল না। বাধ্য হয়ে সময় বাড়ায় তারা।’
বিজেপিকে আক্রমণ করে সেলিম বলেন, ‘বিজেপির যেই প্রচার অনুপ্রবেশ নিয়ে করেছে তা খসড়া তালিকায় দেখা যায়নি। একাধিক জায়গায় যাদের নাম বাদ গিয়েছে তারা মৃত।’
সেলিম বলেন, ‘গোটা দেশে ৪০ বছর ধরে আরএসএস মন্দির মসজিদ করতো। তখন বাংলায় এই রাজনীতি করার পানি পেতো না। তখন ওরা অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রচার চালাতো। বিজেপি জনগণনা করছে না, তাই ওরা অনুপ্রবেশ নিয়ে কথা বলছে।’ তিনি আরও বলেন, খসড়া তালিকায় এখনও অনেক মৃতের নাম রয়েছে। তাদের নাম যাতে বাদ যায় সেই ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, ‘কমিশন আরএসএসের হয়ে কাজ করছে। মানুষের হয়ে কোন কাজ করছে না তারা। ভোটার লিস্ট থেকে গণনা পর্যন্ত ভোট লুঠ করা হচ্ছে। মতুয়া, পরিযায়ী শ্রমিক, উদ্বাস্তুদের নাম সব থেকে বেশি ম্যাপিংয়ে পাওয়া যায়নি। এদের অধিকার কেড়ে নিতে চায় আরএসএস।’
সেলিম বলেন, ‘মানুষ কাজের কথা শিক্ষার কথা বলছে কিন্তু তৃণমূল বিজেপি মানুষকে ভুলিয়ে রাখতে চাইছে ধর্মের নামে। গোরস্তান মাজার মন্দিরের রাজনীতি আটকাতে হবে। মানুষের আসল সমস্যা নিয়ে আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’
বাংলা বাঁচাও যাত্রা চলাকালিন একাধিক জায়গায় বিভিন্ন মানুষের সাথে বৈঠকি সভা করেছে সিপিআই(এম) নেতৃত্ব। সেই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে সেলিম বলেন, ‘গণতান্ত্রিক পরিসরকে ধৃহ করার জন্য এই সভা। মানুষের সাথে কথায় চাকরি, সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশার কথা উঠে এসেছে। ড্রপ আউটের কথা সামনে এসেছে। ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা ছেড়ে কাজের সাথে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। মানুষ রোজগার চায়। মমতা বলছে বউকে ঘুগনি বানিয়ে দেওয়ার কথা। পরিবেশ নিয়ে কথা হয়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোর অবস্থা নিয়ে কথা হয়েছে।’
নিরাপত্তার জন্য সিইও’র কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রসঙ্গে এবং বিজেপির রাজ্যের রাষ্ট্রপতি শাসনে বিষয় জানতে চাওয়া হলে সেলিম বলেন, ‘কমিশন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত। মানুষের নিরাপত্তার কথা ভাবে না। রাষ্ট্রপতি শাসন আগে মনিপুরে দরকার ছিল। উত্তর ভারতের যেই রাজ্য গুলোয় অশান্তি হচ্ছে সেখানে দরকার। নবান্নকে শায়েস্তা করতে কোন ৩৫৬ পারবে না।’
এসআইআরের শুনানিতে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক থাকার প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রশাসন যদি দলদাস হয়ে যায় তখন এই সব কথা আসে। এখানকার কোন আধিকারিক যখন দিল্লিতে যায় তখন সে কেন্দ্রের লোক হয়ে যায়। মমতা প্রথম এই কেন্দ্র পুলিশ, রাজ্য পুলিশকে ভাগ করেছিল। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্য পুলিশের নিরাপত্তা নেয়নি।’
বাংলাদেশে অশান্তি প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশে যারা ধর্মের নামে যেই কাজ করছে তার সাথে এই বিজেপির কোন ফারাক নেই। রং আলাদা। কিন্তু মানুষ মারার ধর্ম এক। এখানে প্যাটিস বিক্রি করার জন্য মারে। এই দেশে গৌরি লঙ্কেশ, কালবুর্গীকে খুন করা হয়েছে। ওখানে হচ্ছে ধর্মকে ব্যবহার করে প্রতিবাদী কণ্ঠকে শেষ করে দাও। আমরা ধর্মীয় উন্মাদনাকে ব্যবহার করে এই অপকর্মের নিন্দা করি।’
আগামীকাল রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী আসছেন সেই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘উনি যে কোন জায়গায় যেতে পারেন। সারা বছর ইনি ঘুরে বেড়ান। প্রচারকের ভূমিকা পালন করেন। আগে এসেছিলেন আতঙ্ক তৈরি করতে। এবার আতঙ্কিত হয়ে আসছে। মতুয়াদের ভোট ব্যবহার করেছিল বিজেপি। মতুয়াদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছে। এবার নতুন করে ছল চাতুরী করতে আসছেন তিনি। তাহেরপুর আসছেন ওই পৌরসভা সিপিআই(এম)’র দখলে। এসে শিখে যেতে পারেন কি ভাবে কাজ করতে হয়।’
Salim
মানুষের রুটি রুজি নিয়ে চলবে লড়াই, দশ দিনে রাজ্য হবে দশ হাজার বৈঠকি সভা, বললেন সেলিম
বাংলা বাঁচাও যাত্রা চলাকালিন বৈঠকি সভায় মহম্মদ সেলিম।
×
Comments :0