দেড় দশকের তৃণমূলী শাসনে রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যখন কার্যত শাসক দলের খাস তালুকে পরিণত হয়েছে তখন অন্তত একটি বিশ্ববিদ্যালয় মেরুদণ্ড সোজা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীকার রক্ষায় ব্রতী হয়েছে। জমিদারি চালে চলা রাজ্য সরকারের ঔদ্ধত্যপূর্ণ হুকুমকে অগ্রাহ্য করে দেখিয়ে দিয়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কর্তৃপক্ষ চাইলে অধঃপতিত রাজনীতির খবরদারি উপেক্ষা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ও গৌরব রক্ষা করতে পারে। কিন্তু সর্বত্র শাসক দলের অনুগত মেরুদণ্ডহীনরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হত্যাকর্তা হয়ে বসে থাকায় সেগুলি দলীয় আখড়ার ঊর্ধ্বে উঠতে পারছে না।
রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে তৃণমূল মনে করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের দলীয় সম্পত্তি। তারা যখন যেমন বলবে তেমন ভাবেই চলবে ।তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র প্রতিষ্ঠা দিবস ২৮ আগস্ট। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐদিন স্নাতকোত্তরের পরীক্ষার সূচি রয়েছে। জমিদারিসুলভ মানসিকতার কারণে তারা মনে করছে তাদের প্রতিষ্ঠা দিবসে রাজ্যের কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনও পঠনপাঠন বা পরীক্ষা হতে পারে না। কারণ সকল ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের অনুষ্ঠানে যাবে। তাই সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐদিন অঘোষিত ছুটি থাকবে। এতদিন তারা এই ব্যবস্থাই কায়েম করে এসেছে।
এবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শাসকের হুকুম অগ্রাহ্য করে ২৮ আগস্ট পরীক্ষার সূচি তিন মাস আগেই ঘোষণা করে রেখেছে। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষিপ্ত টিএমসিপি পরীক্ষা বন্ধের হুশিয়ারি দেয়। হুশিয়ারিতে ভয় না পেয় উপাচার্য পরীক্ষা বাতিল না করায় সমাজমাধ্যমে উপাচার্যকে যথেষ্ট গালমন্দ ও অপমান করা হয়। অতপর দুষ্কৃতী জড়ো করে পেশিশক্তির দাপট দেখাতে জোর করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে নিরাপত্তা রক্ষিদের ওপর হামলা চালিয়ে উপাচার্যকে ঘেরাও করার চেষ্টা করে। তাতে কাজ না হওয়ায় বিমর্ষ টিএমসিপি-কে অক্সিজেন জোগাতে আসরে নামেন শিক্ষা মন্ত্রী। নজিরবিহীনভাবে শিক্ষা দপ্তর থেকে চিঠি পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে পরীক্ষা বন্ধ রাখতে বলা হয়। ভাবা যায় একটা রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবস উদ্যাপনের জন্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীকারকে অস্বীকার করে নির্লজ্জভাবে পরীক্ষা বন্ধ করার কথা বলছে। কোথায় নেমেছে এরাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা।
চিঠি পেয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয় পরীক্ষা বন্ধ হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় শাসক দলের দলীয় সম্পত্তি নয়। স্বশাসিত সংস্থা। শিক্ষার স্বার্থে, ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে রাজনীতির ঊর্ধ্বে বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নেবে স্বাধীনভাবে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর আবদার অনুরোধও অর্থহীন। মুখ্যমন্ত্রীও কোনও দলের স্বার্থে এমন অনুরোধ করতে পারেন না। মনে রাখতে হবে যারা পরীক্ষায় বসবে তারা টিএমসিপি-র সদস্য নয়। কেউ কেউ সদস্য হতে পারে। তার জন্য সকলের পরীক্ষা বন্ধ করা যায় না। পরীক্ষা তার সূচি অনুযায়ী হবে বরং রাজ্য সরকারের দায়িত্ব পরীক্ষার্থীদের স্বার্থে যানবাহন সচল রাখা যেমন সাধারণ ধর্মঘটের সময় করেছিল। সরকার কোনও এক দলের ছাত্র সংগঠনের হয়ে ওকালতি করতে পারে না।
editorial
মেরুদণ্ড থাকলে রুখে দাঁড়ানো যায়

×
Comments :0