Tea Garden Closed

বন্ধ হয়ে গেল আরও এক চা বাগান

জেলা

বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সিঞ্চুলা চা বাগানের শ্রমিকরা

শম্ভুচরণ নাথ: আলিপুরদুয়ার

উৎসবের আলো আর জ্বলল না, পুজোর মুখে বন্ধ হয়ে গেল কালচিনি ব্লকের চিঞ্চুলা চা বাগান। পুজোর আগে কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়ে গেলেন ১ হাজার ৪০০ শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার। পরিবার পরিজন নিয়ে চরম হতাশায় চা শ্রমিকরা। তরাই ও ডুয়ার্সের চা-শিল্পের একদিকে সঙ্কট, অন্যদিকে বোনাস নিয়ে বিভিন্ন বাগানে চলছে বিক্ষোভ। এর আগে বোনাসের দাবি জানিয়েছিলেন শ্রমিকরা, তা তো মিললই না, এবার সরকারের মদতে চা বাগানই বন্ধ করে দিল বাাগান কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার রাতে কালচিনি ব্লকের চিঞ্চুলা চা বাগান নোটিশ না করে বোনাস দেওয়ার ভয়ে মালিকপক্ষ বাগান বন্ধ করে পালিয়ে গেল।
শনিবার শ্রমিকরা সকালে এসে দেখেন বাগান বন্ধ। কিন্তু কেন বন্ধ হল?  কয়েকদিন থেকেই বকেয়া মজুরির দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে গেট মিটিং এ সামিল হয়েছিলেন চিঞ্চুলা চা বাগানের শ্রমিকরা। বাগান সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শনিবার শ্রমিকদের বকেয়া একটি পাক্ষিক মজুরি দেওয়ার কথা ছিল বাগান কর্তৃপক্ষের। তবে সেদিন তা না মেলায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। পাশাপাশি তাদের বোনাস নিয়ে মালিক পক্ষ কোনো কথা বলছিলেন না। শ্রমিকদের অভিযোগ প্রতিমাসে এক সপ্তাহ দেরি করে দেওয়া হচ্ছে মজুরি। শ্রমিকরা নির্দিষ্ট দিনে মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে বোনাসেরও। 
বাগান বন্ধ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান শ্রমিকরা। সকাল থেকে বন্ধ চা বাগানের গেটের সামনেও বিক্ষোভ হয়। এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় স্থানীয় প্রশাসন।
অন্যদিকে জয়বিড় পাড়া চা বাগানের শ্রমিক অসন্তোষ অব্যাহত পূজো শুরু হলেও এখন পর্যন্ত তাদের বোনাস হয়নি। ২০ শতাংশ বোনাসের দাবিতে এবং বকেয়া মুজুরি দাবিতে আজ থানায় বিক্ষোভ দেখায় এবং স্মারকলিপি দেয়। শ্রমিকদের অভিযোগ দীর্ঘদিন মালিক পক্ষ বিভিন্ন ভাবে তাাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে।

একদিকে যখন মুখ্যমন্ত্রী বলছেন ২০ শতাংশ বোনাস দিতে হবে। তখন একের পর এক বাগান বন্ধ করে রাতেই সরে পড়ছে মালিকপক্ষ। সরকার ও মালিকপক্ষের বোঝাপড়ায় এভাবে পর পর বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চা শ্রমিকদের সঙ্কট বেড়েই চলেছে। এই বাগানের শ্রমিকেরা কয়েক দিন থেকেই বোনাসের দাবিতে গেট মিটিং করেছেন। শ্রমিকদের বক্তব্য, বোনাস থেকে বঞ্চিত করার জন্যই এই কৌশল মালিকপক্ষের। এর আগে গত শুক্রবার বন্ধ হয়ে যায় কালিম্পঙ জেলার গোরুবাথান ব্লকের লোয়ারফাগু চা বাগান ও আলিপুরদুয়ার জেলার কোহিনূর চা বাগান। এক সপ্তাহের মধ্যে ফের বন্ধ হয়ে গেল কালচিনি ব্লকের চিঞ্চুলা চা বাগান।
একদিকে বাগান বন্ধ, ওদিকে একশো দিনের কাজ নেই, নেই পঞ্চায়েতেরও কাজ। শ্রমিক পরিবারগুলি হতাশায় দিশেহারা। চা গাছে নতুন পাতা আসতে শুরু করলে আবার মালিকপক্ষ আসবে শ্রমিকদের উপর অন্যায়ভাবে কাজের বোঝা চাপিয়ে বাধ্য করবে কাজ করতে, এমনই বক্তব্য চা শ্রমিকদের। তাঁদের বক্তব্য, এবার কিভাবে সংসার চলবে তা ভেবে পাচ্ছি না।
আলিপুরদুয়ার জেলা সিআইটিইউ নেতা বিদ্যুৎ গুন বলেন, পরপর বাগান বন্ধ হলেও কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকারই মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই বাগান সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে চলছে। বাগানের শ্রমিকদের বোনাস সহ সব কিছুর দায়িত্ব মালিকপক্ষের। আর সেই শ্রমিকদের বাড়িঘর, ওষুধপত্র সবটাই সরকারের দেওয়ার কথা। কিন্তু কেউ কোনও দায়িত্ব পালন করছে না। মালিকপক্ষের সাথে এক হয়ে ছক কষে বাগান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment