GANASHAKTI EDITORIAL

বাদ রবিঠাকুর

সম্পাদকীয় বিভাগ

rabindranath

আত্মমুগ্ধ প্রধানমন্ত্রীর আত্মপ্রচারের সীমা এতদূর পর্যন্ত প্রলম্বিত হয়েছে যে শান্তিনিকেতন-বিশ্বভারতী থেকে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথকেও মুছে ফেলে আত্মগর্বে গর্বিত হতে চাইছেন। রবীন্দ্রনাথের নিজের হাতে নিজের আদর্শে নিজের ভাবনায় গড়ে তোলা শান্তিনিকেতনকে সম্প্রতি বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। তাকে সামনে রেখে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ উপাসনাগৃহ, ছাতিমতলা, উত্তরায়ণসহ বিভিন্ন জায়গায় শ্বেত পাথরের ফলক বসিয়েছে। সেইসব স্মারক ফলকে স্বয়ং স্রষ্টাই অনুপস্থিত। রবিঠাকুরকে বাদ দিয়ে সেখানে জ্বলজ্বল করছে এক আত্মপ্রচার সর্বস্ব প্রধানমন্ত্রী এবং তার মোহমুগ্ধ ভক্ত উপাচার্যের নাম। ফলক দেখে এমনটাই মনে হবে এই শান্তিনিকেতন বিশ্বভারতী নরেন্দ্র মোদী এবং বিদ্যুৎ চক্রবর্তীরই অবদান। রবীন্দ্রনাথ সেখানে নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক। যেন রবীন্দ্রনাথের কীর্তিকে ইউনেস্কো সম্মান ও মর্যাদা জ্ঞাপন করেনি, করেছে মোদীর কীর্তিকে। দুর্ভাগ্য বাঙালীর, দুর্ভাগ্য ভারতবাসীর এমন একজন খ্যাতির কাঙাল প্রধানমন্ত্রীর আসন আলো করে বসে আছেন। ইনিই একদা বলেছিলেন তিনি প্রধানমন্ত্রী নন, প্রধান সেবক। বলেছিলেন তিনি একজন ফকির, ঝোলা নিয়ে এসেছিলেন ঝোলা নিয়ে চলে যাবেন। ফকিরের এত খ্যাতির লোভ, প্রচারের লোভ! এত  রাজকীয়তা, এত বিলাসিতা!
ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্বাধীন ভারতের ইতিহাস থেকে জওহরলাল নেহরুকে ছেঁটে ফেলার ওয়ান পয়েন্ট প্রোগ্রাম নিয়ে এগচ্ছেন। নেহরুর ভাবনায় নেহরুর উদ্যোগে, নেহরুর হাতে যা কিছু সৃষ্টি যা কিছু নির্মাণ সব কিছুকে নিশ্চিহ্ন করে মোদীময় নতুন ভারত চান তিনি। তাঁর স্বপ্নের ভারতে অন্য কারও অস্তিত্ব থাকবে না। এমনকি তাঁর নিজের দলেরও কেউ না। তিনিই শুরু, তিনিই শেষ, তিনি ভারত। অর্থাৎ ভারতে যা কিছু সবই মোদীরই অবদান বলে চালানোর পরিকল্পিত কৌশলী প্রয়াস চলছে। একইভাবে মুছে ফেলার ও ভুলিয়ে দেবার চেষ্টা চলছে মহাত্মা গান্ধীকেও। শাসক বিজেপি’র মতাদর্শগত অভিভাবক ও পরিচালক আরএসএস’র অন্যতম প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন গান্ধীজী। গান্ধীকে তারা কোনভাবেই সহ্য করতে পারত না। তাদের পত্রিকায় গান্ধীকে রাবন বানিয়ে কার্টুন আঁকা হয়েছিল। আরএসএস’র ধর্মান্ধতার আদর্শে অনুপ্রাণিত এবং হিন্দুরাষ্ট্রে ভাবাবেগে তাড়িত নাথুরাম  তাই গুলি করে হত্যা করে গান্ধীজীকে। সেই নাথুরামকে নিয়ে গর্ববোধ করে হিন্দুত্ববাদীরা। আরএসএস মতাদর্শে শাণিত নাথুরামরা মনে করেছিল গান্ধীজী থাকলে ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হবে না। এই হতাশা থেকেই পরিকল্পনা করে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে তারা গান্ধীজীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার ব্যবস্থা করে।
গান্ধীজীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল অতিনিবিড়। বস্তুত রবীন্দ্রভাবনা কোনোদিকে থেকেই আরএসএস’র ভাবনার সঙ্গে মেলে না। কবির অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। রবীন্দ্রনাথ জাত-ধর্ম-ভাষা-সংস্কৃতির সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে বৈচিত্র্যের সম্মিলনে গঠিত বিশ্বমানবতার জয়গান গেয়েছেন। এহেন রবীন্দ্রনাথ হিন্দুরাষ্ট্র ভাবনার অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক। তাই রবি ঠাকুরকেও তারা ছাড় দিতে রাজি নয়। নেহরু, গান্ধীজীর মত রবীন্দ্রনাথকেও তারা বাতিল করতে অতিমাত্রায় সক্রিয়। একাজ শুরু হয়েছে শান্তিনিকেতন থেকেই। বর্তমান উপাচার্য সেই হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন।


 

Comments :0

Login to leave a comment