People's panchayet

লুটের পঞ্চায়েত হটাও, জনগণের পঞ্চায়েত বানাও

সম্পাদকীয় বিভাগ

দেবব্রত ঘোষ
 

বর্তমানে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা সবটাই দখলে তৃণমূল কংগ্রেসের। নির্বাচনে লড়াইয়ে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নিশ্চয়ই তৃণমূল কংগ্রেস, কিন্তু এই মুহূর্তে দেশের যে কোনও রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরএসএস সঙ্ঘ পরিবারের ভূমিকাকে বাদ দিয়ে বোঝা যাবে না। হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য হিন্দুত্ব রাজনৈতিক প্রকল্পকে হাতিয়ার করে এই শক্তি  এই কাজে আগ্রাসী ভূমিকা গ্রহণ করেছে। হিন্দুত্বের সাথে হিন্দু ধর্মের যে আসমান জমিন ফারাক তাকে এক করে দেওয়ার সমস্ত প্রক্রিয়া এই সময়কালে পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। হিন্দু ধর্মের সৃষ্টি বহু সংস্কৃতির সমাহারে। আচার্য ক্ষিতিমোহন সেন লিখেছেন— বস্তুত এই ধর্মই বহু শতাব্দী ধরে ভারতের ঐক্য বজায় রাখতে সাহায্য করেছে। হিন্দু ধর্মের এই বৈশিষ্ট্য এবং ঐতিহ্যের বিপরীতে ভারতবর্ষের এই ঐক্যকেই ধ্বংস করার অভিযান চালাচ্ছে আরএসএস-বিজেপি।
বিজেপি সরকার চলছে হিন্দুত্ব এবং কর্পোরেট জোটের মাধ্যমে। দু’পক্ষের যখন জোট হয় তখন নিশ্চয়ই উভয়ের স্বার্থ আছে। হিন্দুত্বের স্বার্থ হলো রাষ্ট্র ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রের চরিত্র বদল করা যা কর্পোরেট পুঁজির মদত না পেলে সম্ভব হবে না। বিশেষ করে বিপুল ফান্ডিং এবং সমগ্র মিডিয়া জগৎকে নিয়ন্ত্রণ। কর্পোরেটের প্রধান স্বার্থ হলো রকেট গতিতে লুট করা, বিশেষ করে জাতীয় সম্পদ। এজন্য সরকারকে উদারনীতি প্রয়োগের সমস্ত বাধাকে চূর্ণ করতে বাধ্য করা এবং সংবিধানের রক্ষাকবচগুলিকে দুর্বল করে দিয়ে অমান্য করা, যে কাজ নরেন্দ্র মোদী সরকার করে চলেছে। উভয়ের এই পৃষ্ঠপোষকতাই হলো ফ্যাসিবাদী প্রবণতা।


সংবিধানের উপর আক্রমণ
উদারনীতির ১০০ শতাংশ প্রয়োগ এবং হিন্দুত্বের দর্শন কার্যকর করতে গেলে সংবিধানের মর্মবস্তুকে অমান্য করা ছাড়া সম্ভব নয়। সংবিধানের মর্মবস্তু দাঁড়িয়ে আছে ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, স্বনির্ভর অর্থনীতি, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সামাজিক ন্যায়বিচার-এর উপর।
ধর্মনিরপেক্ষ না হলে গণতন্ত্র থাকে না,  তেমন গণতন্ত্র না থাকলে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকে না এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রকে তখন নস্যা‌‌ৎ করা হয়। আরএসএস-বিজেপি’র দর্শন এবং তাকে কাজে প্রয়োগ ঘটানোর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটছে।
উদারনীতির মূল কথা হলো মুক্ত বাজার অর্থনীতি, সরকারি সম্পত্তির বেসরকারিকরণ,  ব্যক্তির সর্বোচ্চ সম্পদের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া। সেই কাজ হলে স্বনির্ভর অর্থনীতি অর্থহীন হয়ে পড়ে সেভাবে একেও নস্যাৎ করা হচ্ছে।
ভারতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থার অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর চরম বিরোধী আরএসএস। আরএসএস’র বাইবেল ‘বান্‌চ অফ থট্‌স’ বইতে ‘একীভূত রাষ্ট্র চাই’ শীর্ষক একটা অধ্যায় আছে। এখানে বলা হয়েছে— সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী হচ্ছে আমাদের দেশের সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো সংক্রান্ত যাবতীয় আলোচনাকে চিরদিনের মতো কবর দেওয়া, একটিই রাষ্ট্র অর্থাৎ ভারতের মধ্যে সমস্ত ‘স্বশাসিত বা আধা স্বশাসিত রাষ্ট্র, এক বিধান, এক প্রধান’ ঘোষণা করা, যেখানে অংশভিত্তিক, আঞ্চলিক, সাম্প্রদায়িক, ভাষাগত অথবা অন্য কোনও ধরনের গর্বকে আমাদের একীভূত সমন্বয়ের ক্ষতি করার সুযোগ দেওয়া হবে না।
সামাজিক ন্যায়বিচারের মর্মবস্তু হলো সবকিছুকে যুক্তির সঙ্গে বিচার করা, যা ফ্যাসিবাদী শক্তির সম্পূর্ণ চরিত্র বিরোধী। কারণ গণতন্ত্র দুর্বল হলে যুক্তির কোনও পরিসর থাকে না।
তৃণমূল-বিজেপি’র বোঝাপড়া
আরএসএস-বিজেপি তার মতাদর্শ প্রচার এবং সংগঠন বিস্তারের জন্য শুধু নিজেদের দল, সরকার, কর্পোরেট শক্তিকে ব্যবহার করছে তাই নয়, আরও অনেক কৌশল গ্রহণ করেছে, যেমন কিছু রাজনৈতিক দলকেও ব্যবহার করছে এবং সেই রাজনৈতিক দলগুলির সাথেও একটা বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে চলছে। এখানেও উভয়ের স্বার্থ নির্দিষ্ট আছে। যেমন তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি’র বোঝাপড়া। বিজেপি’র স্বার্থ হলো ১) সংসদের ভিতরে সমস্ত জনবিরোধী কার্যকলাপের সমর্থন আদায় যা তৃণমূল করছে, ২) সঙ্ঘ পরিবার এবং আরএসএস’র বিস্তার ঘটানো যা পশ্চিমবাংলায় রাজ্য সরকারের প্রশাসন এবং দল সম্পূর্ণ সাহায্য-সহযোগিতা করছে, ৩) দেশের বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে এদের ব্যবহার করে বিরোধী ভোট কেটে নিজেদের সুবিধা আদায় করা যেমন ত্রিপুরা, গোয়া, মণিপুরে ভূমিকা পালন করল। আর এই লক্ষ্যেই দে‍‌শের কর্পোরেট শক্তি বিজেপি’র পরেই সবচেয়ে বেশি টাকা নির্বাচনী বন্ডে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। তৃণমূলের স্বার্থ হলো — সমস্ত অন্যায়, দুর্নীতিকে ধামাচাপা দেওয়া, বি‍‌শেষ করে মুখ্যমন্ত্রী ও তার ভাইপো এবং সরকার যেন নিরাপদে থাকে। যে কাজ মোদী ও অমিত শাহ করে যাচ্ছে। ফলে তৃণমূলের স্বার্থকেও বিজেপি পুরোপুরি রক্ষা করছে আর অন্যদিক থেকেও তারা যথেষ্ট সতর্ক যে তৃণমূল সরকার বিপদে পড়লে বামপন্থীরা যেন কোনোরকম লাভবান না হয়। বিজেপি যদি লাভবান হওয়ার জায়গায় থাকতো তাহলে তৃণমূল আজ থাকতে পারত না। বিজেপি তৃণমূলের এই বোঝাপড়ার প্রেক্ষাপটেই আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে দেখ‍‌তে হবে এবং বুঝতে হবে যে আরএসএস’র ভূমিকাকে ছোট করে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে দেখার চেষ্টা হলে সেটা ভুল হবে।


২০১৩, ২০১৮ এবং ২০২৩-এর নির্বাচন
২০১৩, ২০১৮ এবং ২০২৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচন এক না। তিনটি নির্বাচনে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ২০১৩ সালে তৃণমূল সরকারে আসার মাত্র দু’বছরের মধ্যে নির্বাচন। সাধারণ মানুষের একটা বিপুল অংশের মধ্যে সরকারের প্রতি প্রবল প্রত্যাশা, এছাড়া নতুন সরকার এবং দলের প্রতি আকর্ষণ ছিল। অন্যদিকে বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির পরিকল্পিতভাবে সমস্ত দিক থেকে লাগাতার অপপ্রচার, কুৎসার মাধ্যমে বামপন্থীদের প্রতি একটা নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছিল। সেই পরিস্থিতির সাথে ছিল নির্বাচনে জালিয়াতি। সবটা মিলিয়ে তৃণমূল সমগ্র বাংলায় পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে দখল করে।
২০১৮ সালের প্রেক্ষিত ছিল অন্য। ২০১৬ সালে তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে বিধানসভা নির্বাচনে বাম, সহযোগী বাম, কংগ্রেস এবং অন্যান্য দলসমূহের সম্মিলিত লড়াইয়ের ফলে তৃণমূল কংগ্রেস জবরদস্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও শেষ পর্যন্ত তারা সরকারে ফিরে আসে। কিন্তু এরপর থেকে পশ্চিমবাংলায় মেরুকরণের রাজনীতিক প্রবলভাবে সামনে আনে বাম বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। প্রচার শুরু হয় বামপন্থীরা এখন পারবে না। তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে বিজেপি। ওদের অনেক শক্তি, ওরা কেন্দ্রের সরকারে আছে। আর উলটোদিক থেকে কেন্দ্রের বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস, কারণ ওরা রাজ্য সরকারে আছে— এই লাইনে প্রচার চল‍‌তে থাকলো। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে স্লোগান দেওয়া হলো— ‘আগে রাম, পরে বাম’ আরএসএস’র তৈরি কিন্তু যাকে গতিবেগ দিতে পুরোপুরি সাহায্য করল তৃণমূল কংগ্রেস। ভোটারদের একটা বড় অংশ বিভ্রান্তির শিকার হলেন দু’রকমভাবে। সংখ্যাগুরু এলাকায় তৃণমূলকে শায়েস্তা করার জন্য মানুষের মধ্যে বিজেপি’র প্রতি সমর্থন আর যে মুহূর্তে ‘আগে রাম, পরে বাম’ কথা আসল সেই মুহূর্তে সংখ্যালঘু অংশের বেশিরভাগ মানুষ তৃণমূলের পাশে জড়ো হলেন। এই বিভাজনের মধ্যে বামপন্থীদের লড়াই করতে হয়েছে তার ওপর নজিরবিহীন সন্ত্রাস, গুণ্ডা, পুলিশ দিয়ে মনোনয়ন দিতে বাধা, মনোনয়ন দিতে পারলেও নির্বাচনী প্রচারে বাধা, নির্বাচন হলেও ভোট লুট এবং সর্বশেষ যেখানে নির্বাচন হলো সেখানেও ফলাফলকে দখল করে নেওয়া হলো। সবটা মিলিয়ে তৃণমূল পঞ্চায়েতগুলি পুনরায় দখল করে নিল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও বিভাজনের প্রতিফলন হলো তীব্র। এরপর থেকে পরিস্থিতি একটু একটু পরিবর্তন হতে শুরু করে।
বামপন্থীদের নির্বাচনে বিপুল বিপর্যয়ের পরেও এরাজ্যে কোভিড পরিস্থিতিতে কাজ এবং বিগত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে তৃণমূল সরকারের নজিরবিহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং মানুষের জীবন-জীবিকার স্বার্থে বামপন্থী দল ও গণসংগঠনের লাগাতার তীব্র লড়াই আন্দোলন, সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে মানুষের সামনে বামপন্থীরা ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে, অন্যদিকে বিজেপি’র এতো এমপি-এমএলএ থাকা সত্ত্বেও কাগজ, টেলিভিশনে বাগাড়ম্বর ছাড়া প্রকৃত ময়দানের লড়াইতে সেভাবে না থাকার কারণে বামপন্থীরা অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। এছাড়াও বিজেপি-তৃণমূলের যে বোঝাপড়ার কথা বামপন্থীরা বলে আসছে তা সংসদীয় সমস্ত কাজে বিজেপি’কে তৃণমূলের সমর্থন, ‍‌বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপি’কে সুবিধা করে দেওয়া, আদানি কাণ্ডে চুপ করে থাকা এবং কেন্দ্রে বিজেপি’র বিরুদ্ধে সমস্ত রাজ‍‌নৈতিক দলগুলির ঐক্যকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য ভূমিকা পালন। অন্যদিকে নজিরবিহীন দুর্নীতি সম্পর্কে বিজেপি’র কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ না নেওয়া সহ আরও অন্য অনেক ঘটনাবলির মধ্যে দিয়ে মানুষ বুঝতে শুরু করেছেন। শান্তিপুরের উপনির্বাচন, পৌরসভার নির্বাচনে যে বাইনারি ভাঙার প্রক্রিয়া দেখা গিয়েছিল, তা তীব্র রূপ পায় সাগরদিঘির নির্বাচনে। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের রাজ‍‌নৈতিক পরিস্থিতিতে এটাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তবে আরএসএস-বিজেপি’কে ছোট করে দেখার কোনও প্রশ্নই নেই। বিশেষ করে আরএসএস প্রতিনিয়ত প্রবলভাবে সক্রিয় আছে বিভাজনের প্রক্রিয়ায়। তৃণমূলও ক্ষমতায় থাকার জন্য সরকার এবং দলকে দিয়ে নানান ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করবে। যেমন ২৯ ও ৩০ মার্চ, ২০২৩ কলকাতায় মমতা ব্যানার্জি আবার নাটকবাজি করে বিজেপি-তৃণমূলের বাইনারি তৈরি করার চেষ্টা, নির্বাচনের প্রাক্কালে দুয়ারে সরকার কর্মসূচির ভাঁওতা। এই কর্মসূচির মাধ্যমে দুটি বিষয়ে ওদের প্রধানত লক্ষ্য — প্রথমত, চোর-জোচ্চোর তৃণমূল কর্মীদের মানুষের মুখোমুখি হতে যে সংকোচ তৈরি হয়েছে তাকে কাটানো, দ্বিতীয়ত, নতুন করে কিছু প্রলোভন, প্রতিশ্রুতি দিয়ে দলের ড্যামেজ কন্ট্রোল করা। কিন্তু এখন ওরা যাই করুক তাতে আগের মতো মানুষকে ঠকানো যাচ্ছে না। যেমন দিদিকে বলো এবং সর্বশেষ দিদির দূত কর্মসূচি ফ্লপ করেছে। দুয়ারে সরকার প্রকল্পে ঋণ প্রকল্পের ঘোষণা বেশিরভাগ মানুষ তাদের অভিজ্ঞতার এই চালাকি ধরে ফেলেছেন, কারণ এর আগে ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট লোন’ নিয়ে যে ঢাক পেটানো হয়েছিল, তার ফল কি হয়েছিল ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবকদের সম্পূর্ণ নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হয়েছে।


মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন
এই প্রেক্ষাপটে তিনটি নির্বাচনেও মানুষের মনোভাবেরও  পার্থক্য স্পষ্ট দেখা যায়। ২০১৩ সালে মানুষের অনেককে বলতে শোনা যেত তোমাদের তো পঞ্চায়েতে দেখেছি এবার ওদের দেখা যাক। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বলতে শোনা গেছে বিজেপি’কে দিয়ে তৃণমূলকে আগে শায়েস্তা করতে হবে। তারপর তোমরা (বামপন্থীরা) আসবে। এবছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে সর্বত্র মানুষের মধ্যে কথা তোমাদের ভালো প্রার্থী দিতে হবে। জোর ধরতে হবে। তোমরা পাড়ায় এসো, মানুষের সাথে কথা বলো। তোমরাই পারবে। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতির জন্য শুধু রাজনৈতিক কার্যকলাপ নেই, আছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও। গ্রামবাংলার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। পঞ্চায়েত লুটের আখরায় পরিণত হয়েছে। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ, বকেয়া আ‍‌ছে মজুরির টাকা বহুমাসের। কৃষকদের অবস্থা গুরুতর, কোনও ফসলের লাভজনক দাম পাচ্ছে না, ঋণের পর ঋণ। ঋণ পরিশোধ না করতে পারার জন্য আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে চলেছে। মাইক্রোফিনান্সের দাপাদাপিতে আরও অসহায় হয়ে পড়েছে গরিব মানুষ। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা কাজের বাজারে, কোনও কাজ নেই। কাজের জন্য হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে প্রতিদিন অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছেন। এছাড়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেই চলেছে। এরই মধ্যে দুর্নীতির নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রামের প্রধান, উপপ্রধান, সদস্য বা কয়েকজন শাসকদলের রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে বেশিরভাগ মানুষের সঙ্কট আর অল্পকিছু তৃণমূল নেতা-কর্মীর তুমুল ভোগ বিলাস, সম্পত্তির মালিক হয়ে ওঠায় একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এর সাথে অবশ্যই রাজ্যের মন্ত্রী এবং তাবড় নেতাদের দুর্নীতি যুক্ত আছে। সুযোগ, সুবিধা, ভয় নানা কারণে এই দ্বন্দ্ব এখনও তীব্র আকার নেয়নি এটা ঠিক কিন্তু এই মুহূর্তে এটাও একটা বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে যাকে অস্বীকার করা যাবে না।
আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে
এই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতেই হবে। সেটা ঘটাতে হলে  গড়ে তুলতে হবে মানুষের সাথে নিবিড় জনসংযোগ এবং এজন্য চাই বুথে বুথে শক্তিশালী সংগঠন এবং অঞ্চলে অঞ্চলে যোগ্যতার সাথে, সাহসের সাথে, যে কোনও পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার মতো নেতৃত্বদানকারী অঞ্চল সংগঠন। প্রচারে শুধু তৃণমূল নয়, সমানভাবে বিজেপি’র কার্যকলাপ, কেন্দ্রের সরকারের তুমুল জনবিরোধী, স্বৈরাচারী ভূমিকা এবং রাজ্যস্তরে ওদের বর্তমান প্রধান নেতাও যে তৃণমূলের রাজত্বের সব দুর্নীতির অন্যতম অংশীদার তা প্রচারে তুলে ধরতে হবে। সাথে সাথে ৩৪ বছরে বামফ্রন্ট সরকারের সাফল্য এবং বামপন্থীদের বিকল্প কর্মসূচি জোরালোভাবে উপস্থিত করতে হবে। তৃণমূল ও বি‍‌জেপি’র বিরুদ্ধে ব্যাপকতর ঐক্য গঠন করে লুটেরাদের হাত থেকে পঞ্চায়েত উদ্ধার করে জনগণের পঞ্চায়েত গড়ে তোলাই এই সময়ের দাবি।
 

Comments :0

Login to leave a comment