Priyanka Gandhi

উদ্ধত মোদী সরকারকে হঠানোর ডাক প্রিয়াঙ্কার

জাতীয়

Priyanka gandhi rahul gandhi congress satyagraha bjp bengali news

নিজের দাদা, গান্ধী পরিবারের পক্ষে বলতে গিয়ে বিজেপি-কেই ফের শূলে চড়ালেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। 

রবিবার রাজঘাটের সামনে কংগ্রেসের সত্যাগ্রহ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রিয়াঙ্কা তাঁর দাদা রাহুল গান্ধীকে বিজেপি যেভাবে হেনস্তা করছে কিংবা তাঁদের বংশ পরিচয় নিয়ে কুৎসা ছড়ানো হচ্ছে তার তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, ‘‘একজন শহিদের সন্তানকে মীরজাফর বলে অহরহ বিষোদগার করা হচ্ছে। টেনে আনা হচ্ছে গান্ধী পরিবারকেও। অথচ এর জন্য কোনও মামলা হচ্ছে না, কেউ অপরাধীও চিহ্নিত হচ্ছে না।’’


রাহুল গান্ধী সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে দিনভর সত্যাগ্রহ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল কংগ্রেস। দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই কংগ্রেসের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা সকাল দশটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত এই সত্যাগ্রহ কর্মসূচিতে অংশ নেন। দু’এক জায়গায় বিরোধী দলগুলিও এই কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে অংশ নিয়েছিল। রাজধানী দিল্লিতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের নেতৃত্বে এই কর্মসূচি পালিত হয় গান্ধীজীর সমাধিক্ষেত্র রাজঘাটের বাইরে। কংগ্রেস সমাধিক্ষেত্রের অভ্যন্তরেই কর্মসূচি পালনের আবেদন জানালেও অনুমতি দেয়নি পুলিশ।


প্রিয়াঙ্কা গান্ধী তাঁর ভাষণে প্রথম থেকেই আক্রমণের নিশানা করে নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি নেতাদের। শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনেও একইভাবে বিজেপি, মোদীকে তুলোধনা করেছিলেন রাহুল গান্ধী।

এদিন দাদার পাশাপাশি তাঁর মা সহ গোটা পরিবারকে নিয়ে মোদী কিংবা বিজেপি নেতারা যেভাবে অত্যন্ত কুরুচিকর মন্তব্য করে চলেছেন তার বিরোধিতা করে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘আমার দাদাকে বিশ্বাসঘাতক বলা হচ্ছে। মা-কেও অপমান করা হচ্ছে। আপনাদের এক মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, রাহুল গান্ধী নাকি জানেনই না যে কে তাঁর মা। প্রতিদিন আমাদের পরিবারকে অপমান করে চলেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে কোনও মামলাও হলো না।’’ 

প্রধানমন্ত্রী কতটা নিম্নরুচির পরিচয় দিয়েছেন সেকথা জানাতে গিয়ে প্রিয়াঙ্কা এদিন বলেছেন, ‘‘আপনাদের প্রধানমন্ত্রী ভরা সংসদকক্ষের মধ্যেই বলেন আমাদের পরিবার কেন নেহরুর নাম নেয় না। তিনি গোটা কাশ্মীরি পণ্ডিতদেরই অবমাননা করছেন ওই কথা মধ্যে দিয়ে। রীতিই হলো পুত্রসন্তান বাবার মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের নাম নিয়েই চলবেন।’’ 

‘সময় হয়েছে দেশের এমন এক ঔদ্ধত্যপূর্ণ সরকারকে হঠিয়ে দেওয়ার’ বলে আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তিনি মনে করেন, রাহুল গান্ধীর নির্বাচনে লড়াইয়ের অধিকার কেড়ে নেওয়া মোটেই দেশ তথা গণতন্ত্রের পক্ষে ভালো হলো না।


গৌতম আদানিকে নিয়ে প্রশ্ন করার জন্যই সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়া হলো রাহুল গান্ধীর, এই অভিযোগ করে প্রিয়াঙ্কা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যারা এই ছক কষেছে তাঁদেরকে যথোপযুক্ত জবাব দেবেন জনগণই। 

নিজের পরিবারের কথা বলতে গিয়ে তিনি দাবি করেন, ‘‘আমাদের পরিবারের রক্ত দিয়ে দেশের গণতন্ত্রের চাষ হয়েছে। আমরা দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য যা কিছু করতে প্রস্তুত। কংগ্রেসের মহান নেতারাই এদেশে গণতন্ত্রের ভিত গড়ে তুলেছিলেন।’’ লড়াইয়ের বার্তা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সময় এসেছে আর আমরা চুপ করে সব মেনে নেবো না।’’ পরিশেষে কংগ্রেস কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘এদের মুখোমুখি হয়ে ঐক্যবদ্ধ হন দেশের ঐক্য রক্ষার দিকটি সুনিশ্চিত করতে এবং এগিয়ে চলুন।’’ তাঁকে তুমুল করতালিতে অভিবাদন জানান কংগ্রেস কর্মীরা।


কংগ্রেস সহ গোটা বিরোধী শিবিরই মনে করে আদানি গোষ্ঠীর কেলেঙ্কারির থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতেই প্রথমে একটা ঠান্ডাঘরে চলে যাওয়া মামলাকে সামনে এনে রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করা হলো। এরপর তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই একদিনের মধ্যে কেড়ে নেওয়া হলো তাঁর সাংসদ পদ। এমনকি ৬ বছর তাঁর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ নস্যাৎ করে দেওয়া হলো। রাহুল গান্ধী শনিবার অভিযোগ করেছিলেন যে গোটাটাই হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর অঙ্গুলিহেলনে। আদানি নিয়ে প্রশ্নের মুখ বন্ধ করে দিতেই তাঁকে সংসদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিরোধীরাও মনে করছেন, রাহুলমুক্ত সংসদই চেয়েছিলেন মোদী।


এদিনের ‘সঙ্কল্প সত্যাগ্রহ’ কর্মসূচিকে নেতৃত্ব দিয়ে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে জানতে চেয়েছেন, ‘‘পলাতক নীরব মোদী। ললিত মোদী নিয়ে কথা বললে বিজেপি’র গায়ে লাগছে কেন?’’ তিনি রাহুলের বিরুদ্ধে ওঠা ওবিসি প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘ওরা এখন ওবিসি’র কথা বলছে। লোলিত মোদী যদি ওবিসি হয়, নীরব মোদী যদি ওবিসি হয়, মেহুল চোকসি যদি ওবিসি হয়, তাহলে তাঁরা জনগণের টাকা নিয়ে পালালেন কেন?’’ এরপরেই মোদী সরকারকে শূলে চড়িয়ে বলেন, ‘‘যে মানুষটি দেশকে রক্ষার জন্য লড়ছেন তাঁকে শাস্তি দিলো বিজেপি, আর যাঁরা দেশের সম্পদ লুট করলেন তাঁদের বিদেশে পালাতে সাহায্য করল।’’

এদিন কেন্দ্রশাসিত জম্মু-কাশ্মীর, আন্দামান ও নিকোবর, পুদুচেরি সহ হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা, তামিলনাডু, পাঞ্জাব, মধ্য প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং গুজরাটে কংগ্রেস কর্মীরা সত্যাগ্রহে শামিল হন।

 

Comments :0

Login to leave a comment