Post Editorial

সাভারকরের হিন্দুত্ব: বিজ্ঞাপন বনাম বাস্তবতা

উত্তর সম্পাদকীয়​

গার্গী চ্যাটার্জি

বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আরও একবার "মুচলেকা বীর" সাভারকর।
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গৌরবময় আত্মবলিদান-আপসহীন লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসের পাশে নিতান্তই হীন-কপট-ভীরুতার পরিচয়ধারক দামোদর সাভারকরকে ফের জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসার এক মরিয়া প্রয়াস চালালো বর্তমান কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
এ ঘটনা ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, দেশের প্রকৃত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান করা।
স্বাধীনতা দিবসে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের করা পোস্ট নিয়ে নিন্দার ঝড় সর্বত্র।
সংস্থার সমাজমাধ্যম এক্স (টুইটার)- হ্যান্ডেলে প্রকাশিত বিতর্কিত সেই পোস্টারে রয়েছেন মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এবং শহীদ-এ-আজম ভগৎ সিং, কিন্তু তাঁদের মাথার উপর স্থান দেওয়া হয়েছে বিনায়ক দামোদর সাভারকরকে। সেই নিয়েই ফের নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত।
নতুন নয়, এর আগেও ২০২১ সালে ‘মহাত্মা গান্ধীর পরামর্শে ব্রিটিশ হুকুমতের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চেয়ে সাভারকরের চিঠি লেখা’র কথা বলে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং।
যদিও তামাম ভারতের ইতিহাস ঘেঁটে, সমস্ত ঘরানার ঐতিহাসিকদের লেখা নথি-তথ্য খুঁজেও এর সপক্ষে কোনও প্রামাণ্য যুক্তি বিজেপি বা সঙ্ঘ পরিবারের লোকজন পেশ করতে পারেনি, বরং যে সত্যিটা সামনে এসেছে সেটা হলো, ১৯১৫ সালের জানুয়ারি মাসে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর আফ্রিকা থেকে পাকাপাকি ভাবে ভারতে আসার অনেক আগেই ১৯১১ থেকে ১৯১৩ সালের মধ্যেই কয়েক দফা ‘মাফিনামা’ ব্রিটিশ সরকারের কাছে দাখিল হয়ে গেছে ‘বীর’ সাভারকরের তরফ থেকে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৪ জুলাই, ১৯১১ সালে আন্দামানের সেলুলার জেলে বন্দি হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে দাখিল করা ‘মাফি নামা’টি এবং তৎকালীন ব্রিটিশ ভাইসরয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য স্যার রেজিনাল্ড ক্র্যাডকের সেলুলার জেল পরিদর্শনের সময় লেখা নোটে উল্লিখিত ১৪ নভেম্বর, ১৯১৩ সালে সাভারকরের তরফ থেকে মুক্তির আবেদনপত্রের হরফগুলি – ‘I am ready to serve the Government in any capacity they like....’।
কেন?
গান্ধী হত্যার ষড়যন্ত্রে নাম জড়ানো, ব্রিটিশ সরকারের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করা, ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের বিরোধিতা করা থেকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রাম যে বহুত্ববাদ ও সাম্যনির্ভর আন্দোলনের অভিমুখ নিয়েছিল সরাসরি তার বিরোধী অবস্থানে থাকা এই সাভারকরকে কেন আজকের বিজেপি সরকার সঙ্ঘ পরিবার আলোচনায় তুলে আনছে?
আজকের জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে সাভারকরকে প্রাসঙ্গিক করে তোলার এই চেষ্টার কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে পরাধীন ভারতবর্ষের বুকে হিন্দু মহাসভা ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সম্পর্ক ও কার্যকলাপ অনুসন্ধান করতে হবে। অনুধাবন করতে হবে মুঞ্জে, সাভারকর ও হেডগেওয়ারের মধ্যের সম্পর্ককে।
সাভারকর যেমন কখনও সরাসরি সঙ্ঘের সদস্য ছিলেন না, বরং ১৯৩৭ সাল থেকে হিন্দু মহাসভার সভাপতি ছিলেন, তেমনই তার পূর্বসূরি মুঞ্জেও হিন্দু মহাসভার সভাপতি (১৯২৭ - ১৯৩৭) ছিলেন, যিনি নাকি মূলত ‘রাজনৈতিক মেন্টর’ ছিলেন ১৯২৫ সালে সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম সরসঙ্ঘ চালক কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের।
এই হেডগেওয়ার ১৯২৫ সালে যখন সঙ্ঘের স্থাপনা করছেন তার আগেই জেলবন্দি সাভারকর ১৯২২ সালে লিখে ফেলেছেন ‘Essentials of hindutva’ বইটি, যেটি আবার সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার পিছনে থাকা ‘বৌদ্ধিক ও দার্শনিক মতবাদের’ অন্যতম আকর গ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত।
সাভারকরের ‘হিন্দুত্ব’ যে মুঞ্জের ‘হাতে গড়া’ হেডগেওয়ারের জীবনে মননে গভীর প্রভাব ফেলেছিল এবং ভারতবর্ষের বুকে সঙ্ঘের মতন একটি ‘জাতি ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ও আধা সামরিক’ অরাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার পিছনে মূল অনুপ্রেরণা, সে কথা বহুল প্রচারিত।
সাভারকরকে নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। যখনই স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রশ্ন ওঠে, যখনই ভারতের মতন ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসনাধীন থাকা একটা দেশের স্বদেশি আন্দোলনকারীদের নাম সামনে আসে, যখনই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের গৌরবগাঁথা চর্চায় আসে, তখনই ব্যাকফুটে চলে যায় বিজেপি।
হিন্দু মহাসভা থেকে সঙ্ঘ, স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজেপি’র পূর্বসূরি দুই সংগঠনই স্বাধীনতা সংগ্রামে ইংরেজদের পক্ষ নিয়েছিল, এই নিয়ে তামাম ঐতিহাসিকদের মধ্যে তেমন কোনও দ্বিমত নেই। সঙ্ঘের বিভিন্ন পুস্তিকা এবং দলিলেও সেই বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। কাজেই দেশের সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে এই বিষয়টিকেই ঢাল করে। এবারেও বিরোধীদের অভিযোগ, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নিজেদের কুকীর্তি চাপা দিতেই নতুন করে ইতিহাস লেখার চেষ্টা করছে শাসক দল। আর তার জন্যেই সাভারকরকে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মাথায় বসানোর চেষ্টা।
এই স্বাধীনতা দিবসেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আরএসএস বন্দনা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিতে ভাটা পড়তেই জোর করে আরএসএস-কে স্বাধীনতা সংগ্রামে জোড়ার চেষ্টা করছেন মোদী। কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে আজাদ হিন্দ ফৌজের বিরুদ্ধে সেনা সংগ্রহ করা- সবেতেই ইংরেজদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল তৎকালীন হিন্দু মহাসভা। এমনকী তেরঙ্গা পতাকার বিরোধিতা করে স্বাধীনতার ৫২ বছর পর্যন্ত নাগপুরে নিজেদের সদর দপ্তরে জাতীয় পতাকা পর্যন্ত উত্তোলন করেনি সঙ্ঘ। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে সেই সংগঠনের স্তুতি করে মোদী দেশের প্রকৃত স্বাধীনতা সেনানীদের অপমান করেছেন বলেও সমালোচনা উঠছে।
একই অভিযোগ রয়েছে সাভারকরকে নিয়েও। আন্দামানে কারাবাসের আদেশের পর থেকেই একাধিকবার ইংরেজ সরকারের কাছে ‘মার্সি পিটিশন’ বা মাফিনামা জমা দেন সাভারকর। এরপর ইংরেজ সরকার তাঁকে মুক্তি দেয়। সেলুলার জেলে সেসময় তীব্র অত্যাচারে দিন কাটাচ্ছেন শয়ে শয়ে বাঙালি, শিখ কিংবা তামিল তরুণ। জেলমুক্তির পর নিজেকে লিখিত ভাবে ইংরেজ সরকারের ‘অনুগত ভৃত্য’ বলেও দাবি করেন সাভারকর। সুভাষচন্দ্র বসু যখন আজাদ হিন্দ বাহিনী নিয়ে সরাসরি ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছেন, তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাভারকার হিন্দু যুবকদের দলে দলে ইংরেজ সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আহ্বান জানান। আজ সেই সাভারকরকেই স্থান দেওয়া হচ্ছে সুভাষ বোসের মাথার উপর। একই ভাবে ব্রিটিশ আদালতে নিজের শেষ পিটিশনে আদ্যোপান্ত কমিউনিস্ট ভগৎ সিং দাবি জানান, তাঁকে যেন যুদ্ধবন্দি হিসাবে গুলি করে মারা হয়। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ক্ষমা চাননি ভগৎ। সেই তাঁকেও এখন সাভারকরের নিচে বসানো হচ্ছে।
বর্তমানে সিনেমায় সাভারকর, সিলেবাসে সাভারকর, কেন্দ্রের বিজেপি নেতা মন্ত্রীদের ভাষণে সাভারকর - কেন? ১৯৩৭ সালে জেল মুক্তির পর সাভারকর যখন তার তৈরি যুব সংগঠন ‘তরুণ হিন্দু সভা’কে আরএসএস’র সাথে যুক্ত করে দিচ্ছেন, সঙ্ঘের প্রসারে হিন্দুত্বের সপক্ষে ঘৃণা ভাষণ দিচ্ছেন তার কিছুটা আগেই ১৯৩১ সালে ইতালির ফ্যাসিস্ত সরকার মুসোলিনির সাথে গিয়ে দেখা করে সেখান থেকে হাতে কলমে ঘৃণা বিভাজন স্বৈরশাসনের পাঠ নিয়ে ফিরে এসেছেন সঙ্ঘের অন্যতম ‘আরাধ্য’ নেতা মুঞ্জে।
হিন্দু মহাসভা যখন একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে পরাধীন এবং পরবর্তীতে স্বাধীন ভারতেও নির্বাচনী রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অবতীর্ণ, তখন সঙ্ঘ গোটা ভারত জুড়ে সমস্ত রাজনৈতিক হিন্দুত্বের শক্তিগুলোকে এক ছাতার তলায়— এক পরিবারভুক্ত করার কাজ করে গেছে হিন্দু জাতিসত্তার ভিত্তিতে। একদম ছোট বয়স থেকে রাজনৈতিক হিন্দুত্বের মতাদর্শে গড়েপিটে নেওয়া, শরীরচর্চা, লাঠি খেলা, বর্শা, তরোয়াল প্রভৃতি অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে নিজেদের প্রচার ও প্রসারের কাজ চালিয়ে গেছে যা আজও বর্তমান।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রথমে হিন্দু মহাসভা তার অতীত কলঙ্কের ভারে ন্যুব্জ হতে হতে ক্ষয়িষ্ণু প্রান্তিক শক্তিতে পৌঁছায়, ধর্মীয় পরিচয়ে চলা রাজনৈতিক দল অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায় ভারতের রাজনীতিতে। তারপর আসে একে একে জনসঙ্ঘ, জনতা দল— যা তিন দশকের ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের অপশাসন, দুর্নীতির বিরোধিতা করে প্রাথমিক ভাবে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছালেও ‘ডুয়াল মেম্বারশিপ’ নিয়ে পরবর্তীতে আরএসএস’র সিদ্ধান্ত মোতাবেক জনসঙ্ঘের সদস্যদের জনতা দল ছাড়তে হয়, সাথে তাদের দিকভ্রান্ত রাজনীতি, অভ্যন্তরীণ মতানৈক্য ও নেতৃত্বের অভাবে বিলীন হয়ে নানান টুকরো টুকরো আঞ্চলিক দলে ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু তখনও ভারতের বুকে হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক ভাবাদর্শের শক্তি নিয়ে কাজ করে চলেছে সঙ্ঘ পরিবার। যার রাজনৈতিক মুখ হিসাবে ১৯৮০ সালে প্রথম আত্মপ্রকাশ ভারতীয় জনতা পার্টির।
প্রাণ সঙ্ঘ পরিবার, অবয়ব বিজেপি গোটাটাই সাভারকর, মুঞ্জে, হেডগেওয়ার সৃষ্ট রাজনৈতিক হিন্দুত্বের পথ অনুসৃত, সাথে ফ্যাসিবাদী-নাজিবাদী দর্শনের অদ্ভুত মিশেল। এক জাতি-এক দেশ। এক রক্ত-এক দেশ। এক দেশ-এক দেবতা থেকে এক দেশ-এক দল-এক নেতা পর্যন্ত পৌঁছানোর পথ।
সাভারকরেরই লেখায় - "..Nothing makes Self conscious of itself so much as a conflict with non-self. Nothing can weld peoples into a nation and nations into a state as the pressure of a common foe. Hatred separates as well as unites.".. যার অর্থ নিজের সঙ্গে ‘অ-নিজের’ সংঘাত ছাড়া আর কিছুই আত্মাকে এত সচেতন করে তোলে না। সাধারণ শত্রুর চাপ ছাড়া আর কিছুতেই বহু মানুষকে একটি জাতিতে এবং বহু জাতিকে একটি রাষ্ট্রে পরিণত করা যায় না। ঘৃণা যেমন মানুষকে আলাদা করে, তেমনই আবার একত্রিতও করে।
ঘৃণার কারণে যেমন বিভেদের সৃষ্টি হয়, তেমনই একটা শত্রুকে বিপরীতে খাড়া করতে পারলে উল্টোদিকের প্রতি সেই ঘৃণাই একতার জন্ম দেয়।
ফলে মুসলিম লিগের জিন্নারও আগে যে সাভারকর জাতের ভিত্তিতে দেশ ভাগের কথা এনেছিল, হিন্দু - মুসলিম দুই পৃথক ধর্মের দোহাই দিয়ে আলাদা আলাদা ভূখণ্ডের কথা তুলেছিল, যা পরবর্তীতে জিন্নার দ্বি-জাতি তত্ত্বকে আরও জোরালো করে। সেই জাত-ধর্মের বিভাজনকে আরও একবার বর্তমান জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রস্থলে নিয়ে আসতে চাইছে বিজেপি সরকার।
বৈষম্য, দারিদ্র, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, সংবিধানের অবমাননা সহ দেশের জনজীবনের সমস্ত জ্বলন্ত সমস্যা, দাবি দাওয়াগুলো পিছনের সারিতে পাঠিয়ে আরও একবার সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগণের বিপরীতে ভারতীয় মুসলিম সমাজকে শত্রুর জায়গায় দাঁড় করাতে চাইছে সঙ্ঘ-বিজেপি। কেননা এই ‘সাধারণ শত্রু’ই ঐক্যবদ্ধ হিন্দু ভোট ব্যাঙ্ক তৈরি করতে বা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু মানুষের মতকে একজায়গায় নিয়ে আসবে বলে মনে করছে শতবর্ষে পদার্পণ করা রাজনৈতিক হিন্দুত্বের শক্তি আরএসএস।
তাই নিন্দিত সাভারকরের প্রকাশ্যে বন্দনা, তাই ভারতীয় সমাজে একটা সময় পর্যন্ত কার্যত ঘৃণার চোখে দেখা গান্ধী হত্যাকারী গডসের নামে মন্দির তৈরি করা চলছে।
সিনেমায়, সিলেবাসে মিথ্যা তথ্য, ইতিহাসের বিকৃতি দিয়ে গুজব ছড়ানো আর সংখ্যালঘু মুসলিম-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর, তাদের উপাসনাস্থলের ওপর ক্রমবর্ধমান হামলা, আক্রমণ, গণপিটুনি ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট হচ্ছে।
আসমুদ্র হিমাচল গোটা ভূখণ্ডের বুকে হিন্দুত্বের বাঁধুনি শক্ত করতে যে একটা কেন্দ্রীয় চরিত্রের প্রয়োজন সেটা অনুধাবন করেই সাভারকরের ‘হিন্দুত্বে’ রামের অবতারণা।
রামকে দেবতা রূপে গোটা দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠিত করতে ১৯৯০-এ আডবানীর ‘রথ যাত্রা’ গুজরাটের সোমনাথ মন্দির থেকে অযোধ্যা— শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম লালার ‘ঘর ওয়াপসি’।
সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে আরও তীব্র করতে চাইছে বিজেপি, চাইছে ধর্মীয় বিভেদের আড়ালে সমস্ত সামাজিক-রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদের লুটকে বৈধতা দিতে। এই কাজে গতি আনতে সমস্ত সাংবিধানিক ও স্বশাসিত সংস্থার মাথায় সঙ্ঘের লোক বসানো হচ্ছে। প্রকৃত ‘ভারত ভাবনা’র বিপরীতে গিয়ে দেশের বহুত্ববাদী, প্রসারিত গণতন্ত্রের হত্যা করছে সঙ্ঘ-বিজেপি।
সাভারকর, নাথুরামদের রক্ত বহনকারী এই রাজনৈতিক হিন্দুত্বের কারবারীদের হাত থেকে ভারতবর্ষকে রক্ষা করার দায়িত্ব ভগৎ সিং- সুভাষ বসু-গান্ধীর উত্তরাধিকারীদেরই নিতে হবে।  

 

Comments :0

Login to leave a comment