আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনায় বিমান চালকদের ত্রুটির যেই যুক্তি এয়ার ইন্ডিয়া কর্তপক্ষ দিয়েছিল তা দুর্ভাগ্যজনক বললো সুপ্রিম কোর্ট। এদিন বিমান দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদালতের নজরদারিতে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। সেই মামলার শুনানি ছিল সোমবার। বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি এনকে সিংহের বেঞ্চে ছিল মামলার শুনানি।
শীর্ষ আদালত এদিন জানিয়েছে, ‘পাইলটদের ত্রুটি’র দিকে ইঙ্গিত করা দুর্ভাগ্যজনক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন।’ শীর্ষ আদালত প্রশ্ন তোলে, পরবর্তী সময় যদি কোনও একজন পাইলটের দিকে আঙুল তোলা হয়, তখন তার পরিবারকে সমস্যায় পড়তে হবে। পরবর্তীকালে তদন্ত রিপোর্টে দেখা যায় কারও ত্রুটি নেই। তখন কী হবে?
বিমানের জ্বালানির সুইচের স্থান পরিবর্তনের কারণেই আহমেদাবাদ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বোয়িং সংস্থার বিমান। এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (এএআইবি) প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে এমনই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে বিমান রানওয়ে ছাড়ার পরেই জ্বালানির সুইচ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যার জেরে ইঞ্জিনগুলিতে জ্বালানি সরবরাহও থেমে যায়। বিকল ইঞ্জিন নিয়ে মাঝ আকাশে আর ভেসে থাকতে পেরে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে বিমান ওড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দু’টি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। জ্বালানির সুইচ ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’ চলে যায়। কিছু সময়ের মধ্যেই বিমানের গতি এবং উচ্চতা কমতে থাকে। রিপোর্ট অনুযায়ী পাইলটেরা দু’টি জ্বালানির সুইচই আবার ‘কাটঅফ’ থেকে ‘রান’এ নিয়ে যায়। ইঞ্জিন-২ সাময়িক ভাবে চালু হলেও। ইঞ্জিন-১ আর চালু করা যায়নি। যার জেরে টেক অফের পরেই দুর্ঘটনায় পড়ে বিমানটি।
গত ২৬ জুন কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে দুর্ঘটনাগ্রস্থ বিমানের থেকে উদ্ধার হওয়া ব্ল্যাক বক্স থেকে সব নথি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
গত ১৬ জুন ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে ‘ককপিট ভয়েস রেকর্ডার’ উদ্ধার হয়েছে। ইঞ্জিনের শব্দের মধ্যেও পাইলটদের কথোপকথন, রেডিও ট্রান্সমিশন, ককপিটের অন্যান্য শব্দ রেকর্ড হয় ওই যন্ত্রে। দুর্ঘটনার তদন্তে যা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১২ জুন দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ রানওয়ে ছেড়ে ওড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মাটিতে ধপ করে নেমে এসেছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮। তারপরও সতর্ক না হয়ে লন্ডনের উদ্দেশে উড়ে যাওয়ার সবুজ সঙ্কেত দেয় আমেদাবাদ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু’কয়েক মিনিটের মধ্যেই পাইলটের ‘মে ডে কল’ এবং আকাশে ওড়ার আগেই বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে মেঘানিনগরে এক মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের ছাদ ঘেঁষে ভেঙে পড়ল বিমানটি। বিকট শব্দ, সঙ্গে দাউদাউ আগুনে জ্বলে গেল চারপাশ। মাটি থেকে তখন বিমানটি মাত্র ৮২৫ ফুট উঁচুতে ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে সব থেকে বৃহৎ বিমান-দুর্ঘটনা এটিই। বিমানে ২৩০ জন যাত্রী এবং ১২ জন বিমানকর্মী ছিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিকের বেঁচে যাওয়ার খবর মিললেও এই ভয়াবহতায় বাকি সকলেরই মৃত্যু হয়েছে। শুধু বিমান যাত্রী নয়, যে হস্টেলের উপর বিমানটি ভেঙে পড়েছে, সেখানকার পাঁচ আবাসিক প্রাণ হারিয়েছেন। জখম হয়েছেন অনেকে। হস্টেলের ডাইনিং হলে অনেকেই তখন খাচ্ছিলেন। কেউ বা পড়ছিলেন, কেউ কথা বলছিলেন বাড়িতে। ‘ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার’ পাওয়া যায় বিজে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের ছাদ থেকে। সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয় বিমান যাত্রী, দু’জন পাইলট, দশ জন ক্রু সদস্য ছাড়াও ওই হস্টেলের পাঁচ জন চিকিৎসক পড়ুয়া সহ আরও ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রথমে স্থানীয় এক কিশোরের বিমান ভেঙে পড়ার ভিডিও দেখে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন রকমের জল্পনার কথাই বলছেন। পাখির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিমানটি ভেঙে পড়েছে বলে প্রথম থেকে একটি তত্ত্ব খাড়া করা হয়। কিন্তু ভিডিও খতিয়ে দেখেও কোনও পাখির অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। আবার একইসঙ্গে দু’টি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার ঘটনাও চূড়ান্ত ব্যতিক্রম বলেই মনে করেন তাঁরা। পাইলট যখন মে ডে কল দিয়েছিলেন, তখন বলেছিলেন, শক্তি পাচ্ছি না। ভিডিও’তেও দেখা গিয়েছে যে, বিমানটি উপরে ওঠার চেষ্টা করলেও পারছিল না এবং দুর্ঘটনার পর একমাত্র জীবিত বিশ্বাস কুমার রমেশও জানিয়েছেন, আচমকাই সবুজ আলো জ্বলে উঠেছিল। খুব জোরে শব্দও হয়। এর থেকে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার কনসোলের ঠিক পিছনে থাকা বায়ু টারবাইন কাজ কারছিল না।
Supreme Court Ahmedabad plane crash
বিমান দুর্ঘটনার দায় বিমান চালকদের ওপর চাপানো দুর্ভাগ্যজনক : সুপ্রিম কোর্ট

×
Comments :0