অন্যকথা — মুক্তধারা, বর্ষ ৩
নজরুলের কবি প্রতিভার প্রথম বিকাশ
তপন কুমার বৈরাগ্য
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ।
ইংরাজীর ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে মে। তিনি জন্মগ্রহণ করেন
পশ্চিমবর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার অন্তর্গত চুরুলিয়া
গ্রামে।বারটা ছিল বুধবার।দরিদ্র পরিবারে তাঁর জন্ম।
পিতা ফকির আহমেদ এবং মাতাছিলেন জাহেদা খাতুন।
ছোটবেলা থেকেই তাঁর জীবনের কোনো স্থিরতা ছিল না।
কখনো লেটো গানের দলে,কখনো লেখাপড়া,কখনো আবার
রুটির দোকানে কাজ।সে যেন এক সংগ্রামী জীবন ।
তিনি যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তেন তখন পূর্ববর্ধমান জেলার
মাথরুন নবীনচন্দ্র বিদ্যায়তনের ছাত্র ছিলেন। তখন এই
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন পল্লীকবি কুমুদরঞ্জন
মল্লিক মহাশয়।নজরুলের সঙ্গে কুমুদরঞ্জন মল্লিকের
এক সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ
উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন;কিন্তু তাঁর
পরীক্ষা দেওয়া হয়নি।এই স্কুলেই তাঁর প্রিয় বন্ধু ছিলেন
প্রখ্যাত সাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়। ১৯১৪ সালে
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে।সালটা ছিল ১৯১৭।
নজরুল তখন দশম শ্রেণিতে পড়েন। পরীক্ষা না দিয়ে
৪৯নম্বর বেঙ্গল পল্টনে যোগ দেন। উদ্দেশ্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধে
অংশগ্রহণ করা।চলে এলেন করাচীর সেনানিবাসে। এই সেনানিবাসে থাকতে থাকতে রবীন্দ্রনাথ,শরৎচন্দ্র,
ফার্সি কবি হাফেজ,ওমর খৈয়ামের কবিতার
সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে।এছাড়া
করাচীতে একজন পাঞ্জাবী মৌলবীর সাথে তাঁর সুসম্পর্ক
গড়ে ওঠে।তাঁর কাছ থেকেই তিনি দীওয়ান-ই-হাফিজ
ফারসী কাব্য পাঠ করেন।তাঁর দু'চোখ খুলে যায়।তিনি
সেই সময় এক মহৎ সাহিত্য ও মহাজীবনের সন্ধান পান।
করাচীতে আরবসাগরের তীরে বসে লিখলেন 'মুক্তি','কবিতা
সমাধি' প্রভৃতি কবিতা।তাঁর কল্পদৃষ্টিতে ভাবের এক বিরাট
দিগন্ত খুলে যায়।সেই সাথে তিনি লিখে ফেললেন' রিক্তের বেদন',
'ব্যথার দান','হেনা' প্রভৃতি গল্প।এই লেখাগুলো ছিল যেমন
অভাবনীয় তেমনি বিস্ময়কর।নজরুলের ছোটগল্পগুলোর
মধ্যে ছিল আবেগের প্রগাঢ়তা ও কল্পনার ঐশ্বর্য।
হেনা গল্পের বিষয়বস্তু স্বাধীনতা রক্ষার জন্য মরণ-পণ যুদ্ধের
বর্ণনা। এই সব রচনা পড়ে পাঠকেরা বুঝতে পারেন যে
বাঙলা সাহিত্যে এক অসাধারণ শক্তিধর প্রতিভার শীঘ্রই
আবির্ভাব হতে চলেছে।
Comments :0