সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে চিঠি দিয়েছিলেন সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের নেতৃত্ব। তাঁদের আন্দোলনে সিপিআই(এম)’র সমর্থন, উপস্থিতির আবেদন রেখেছিলেন মতুয়া মহাসঙ্ঘ। মহম্মদ সেলিম সহযোগিতা, সহমর্মিতা জানিয়ে প্রত্যুত্তরে চিঠি দিয়েছিলেন মতুয়াদের সেই সংগঠনের নেতৃত্বকে। পার্টির পক্ষ থেকে শুক্রবার অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সেই আমরণ অনশন কর্মসূচির মঞ্চে উপস্থিত হন সুজন চক্রবর্তী, সুমিত দে প্রমুখ।
উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে কেন আমরণ অনশনে মতুয়ারা? সংগঠনের পক্ষ সাধারণ সম্পাদক ড. সুকেশ চৌধুরি জানিয়েছেন,‘‘যেসব নীতি, রীতি ও পদ্ধতিতে পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর করার ঘোষণা করা হয়েছে তাতে এই রাজ্যের মতুয়া এবং সমস্ত উদ্বাস্তু সমাজ বিপর্যস্ত হবে। তাঁদের মধ্যকার অধিকাংশ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়বে মনে করে তাঁরা আতঙ্কিত। আমরা গভীরভাবে বিষয়টি পর্যালোচনা করেছি এবং বুঝেছি যে, উদ্বাস্তু মানুষের এই বিপর্ষয়ের মূল কারণ ভারতের বর্তমান নাগরিকত্ব আইনের কিছু বিশেষ ধারা যার অধিকাংশ সৃষ্টি করা হয়েছে বিজেপি সরকারের তত্ত্বাবধানে।’’ তিনি আরও বলেন,‘‘এই দেশে ৫০ বছর বসবাস করছেন এমন অনেক মতুয়া আছেন। অনেকবার ভোটে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁরা। আজ হঠাৎ তাঁদের কার্যত বিদেশি চিহ্নিত করে তাঁদের ভোটাধিকার কেড়ে নেবার চক্রান্ত মেনে নেওয়া যায় না। আর এতে আমাদের সংগঠন আমরণ অনশন আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।’’
শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে মতুয়া ধামে অনশনরত নাগরিকদের সমর্থনে সুজন চক্রবর্তী বলেন,‘‘ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর-এ ফলে গরিব বাস্তুহারা মানুষের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই সময়ে যেসব মানুষ এর আগে সাধারণ নির্বাচনগুলিতে ভোট দিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকার গঠনে অংশ নিয়েছেন তাদের নাম কৌশলে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের ভোটে যাঁরা বিধায়ক, সাংসদ বা কেন্দ্রের মন্ত্রী হয়েছেন তাঁদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে কেন। তাঁদেরও তো পদত্যাগ করা উচিত।’’
মহম্মদ সেলিমকে গত বুধবার চিঠিতে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের পক্ষ থেকে লেখা হয়,‘‘...আমরা জানি আপনাদের পার্টি মতুয়া এবং সমগ্র উদ্বাস্তুদের প্রতি সহানুভূতিশীল, অতীতে নানাভাবে আপনারা আমাদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আপনাদের পার্টির সাংসদেরা নাগরিকত্ব সমস্যার সুরাহার জন্য পার্লামেন্টে সরব হয়েছেন। এই আন্দোলনেও আমরা আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি এই লড়াইয়ে আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়ান অনশন মঞ্চে এসে অনশনকারীদের সাহস জোগান।’’ মহম্মদ সেলিম উত্তরে সেদিনই জানিয়েছিলেন,‘‘অতীতের মতো বর্তমান সময়ে আপনাদের তথা মতুয়া ও উদ্বাস্তুদের আন্দোলনের প্রতি আমরা সর্বতোভাবে সংহতি জ্ঞাপন করছি।...আশা করি, বর্তমান সময়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ এবং উদ্বাস্তুদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় থাকবে।’’
এদিন সুজন চক্রবর্তী, সুমিত দে ছাড়াও অনশন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পার্টি নেতা সত্য কপাট, পার্টির এরিয়া কমিটির সম্পাদক অনুপম বিশ্বাস। সমর্থন জানাতে অনশন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, অমিতাভ চক্রবর্তী, সিপিআই নেতা রনজিৎ কর্মকার প্রমুখ। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে সুকেশ চৌধুরি জানান,‘‘আমাদের মূল দাবি ভারতে বসবাসকারী সবাইকে নাগরিক ঘোষণা করে একটি নূতন আইন প্রণয়ন করতে হবে। তারপর এসআইআর এবং আর যা কিছু করা হোক। তাতে শুধু উদ্বাস্তু মানুষ নন, দেশের ভূমিপুত্ররাও অযথা হয়রানির হাত থেকে মুক্তি পাবেন এবং উদ্বাস্তুরা নাগরিক হিসাবে মর্যাদা পাবেন।’’
এদিন ঠাকুরনগরে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের অনশন মঞ্চে সুজন চক্রবর্তী বলেন, এর আগেও বামফ্রন্ট সরকার মতুয়াদের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করেছে। তাদের পাশে সরকার যেমন ছিল, তেমনি মতুয়া অধ্যুষিত অঞ্চলে উন্নয়নের দাবিতে আন্দোলনে শরিক হয়েছে সিপিআই(এম)। বর্তমান সময়েও আতঙ্কিত মতুয়া সহ গরিব মানুষের মধ্যে ভোটার তালিকায় নাম বাদ যাওয়ার যে আশঙ্কা তৈরি করেছে বিজেপি তার বিরুদ্ধে আন্দোলন জারি রেখেছে। এসআইআর’র নামে সিএএ’র ভয় দেখানো হচ্ছে। অথচ বাড়ি বাড়ি যে ফরম বিলি করা হচ্ছে তাতে কোথাও সিএএর’ কোনও উল্লেখ নেই। আসলে গরিব মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশে গরিব মানুষের কাজ নেই। শিক্ষিত বেকারদের চাকরি নেই। তার কৈফিয়ত না দিয়ে মানুষের মধ্যে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে উদ্বাস্তু, তফসিলি গরিব মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বাদ দিতে চায় বিজেপি। এর বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে।
CPI-M on Matua movement
এসআইআর নিয়ে অনশন আন্দোলনে মতুয়া সম্প্রদায়ের পাশে নেতৃবৃন্দ
বক্তব্য রাখছেন সুজন চক্রবর্তী।
×
Comments :0