SIR

নাগরিকত্বের নথি থেকে সরছে না কমিশন, আধারের অন্তর্ভুক্তি ভোটারদের পরিচিতির নমুনা

জাতীয়

এসআইআর’এর কাজে আধার কার্ডের অন্তর্ভুক্তিকে ভোটারদের স্রেফ পরিচিতির প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করতে চলেছে। 
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বিহারের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন অভিযানে ১২ তম ডকুমেন্ট হিসাবে আধার কার্ডকে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, আধার কার্ডের অন্তর্ভুক্তি শুধুমাত্র পরিচিতির তথ্য হিসাবেই দেখা হবে। কিন্তু নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য নির্বাচন কমিশন যে ১১টি ডকুমেন্টের কথা ঘোষণা করেছে সেই নিয়মের কোনও ব্যাতিক্রম ঘটবে না। 
নির্বাচন কমিশনের এক শীর্ষ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘ আধার কার্ড ভোটারদের পরিচিতির নথি হিসাবে দেখা হবে। কিন্তু ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য নাগরিকত্ব প্রমাণের যে ১১টি ডকুমেন্ট আছে তার কাগজ দিতেই হবে।’’ গোটা দেশের এসআইআর শুরু করার আগে পূর্ব পরিকল্পনা মতো নাগরিকত্বের প্রমাণের নথি ছাড়া ভোটার হওয়ার নীতি থেকে কোনোভাবেই সরছে না কমিশন। 
গত জুন মাসে বিহারকে সামনে রেখে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন অভিযান শুরু করেছিল নির্বাচন কমিশন। তখনই প্রথম সামনে আসে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে হলে নাগরিক হিসাবে প্রমাণ দাখিল করতে হবে ভোটারদের। বিহারের ক্ষেত্রে শেষবার ২০০৩ সালে এসআইআর হয়েছিল। তাই বিহারের ভোটারদের ২০০৩ সালের পরবর্তী পর্যায়ে ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও ১১ টি ডকুমেন্টের কোনও একটি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কমিশন। নাগরিকত্ব প্রমাণের নথি হিসাবে ১১ টি ডকুমেন্ট কীভাবে ভোটাররা সংগ্রহ করবে তা নিয়ে বিহার সহ গোটা দেশজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। মামলা গড়ায় সর্বোচ্চ আদালতে। গত ৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ১২ তম ডকুমেন্ট হিসাবে আধার কার্ডের অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ আসে। 
নির্বাচন কমিশনের সূত্রে জানা যাচ্ছে, আধার কার্ড কোনোভাবেই নাগরিকত্ব প্রমাণের নথি হিসাবে গণ্য করা হয় না। শীর্ষ আদালতও আধার কার্ডের অন্তর্ভুক্তি রায় দেওয়ার সময় তা জানিয়ে দিয়েছে। আধার কার্ডের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে শীর্ষ আদালতের বক্তব্য ছিল, ‘‘ ২০১৬ সালের আধার ( টার্গেটেড ডেলিভারি অব ফিনান্সিয়াল অ্যান্ড আদার সাবসিডাইজড বেনিফিটস অ্যান্ড সার্ভিসেস) আইন মোতাবেক আধার কার্ড নাগরিকত্ব প্রমাণের নথি নয়। ফলে আধার কার্ডকে কোনোভাবেই নাগরিকত্ব প্রমাণের নথি হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না।’’ ফলে আধার কার্ডের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে রায়ের এই অংশের পরেও শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছিল,‘‘  ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ২৩(৪) ধারা মোতাবেক আধার কার্ড পরিচিতির তথ্য হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।’’ এরপরই নির্বাচন কমিশনকে বিহারের ভোটার তালিকায় সংযোজন ও বিয়োজনের কাজে পরিচিতি পত্রের নথি হিসাবে আধার কার্ডকে মান্যতা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশের ভিত্তিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর বিহারের নির্বাচন কমিশনের সিইও’কে একটি চিঠি দেন কমিশন। তাতে পরিচিত নথি হিসাবে আধার কার্ডকে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। 
আধারকে পরিচিতর নথি হিসাবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ব্যবহার করতে বাধ্য হলেও নাগরিকত্বের নথির যে তথ্য কমিশন আগাম চেয়েছে তা থেকে সরছে না। বিহারের পর গোটা দেশে দুর্গাপজোর পরেই এসআইআর চালু করতে চলেছে কমিশন। গত বুধবার নয়াদিল্লিতে দেশের সব রাজ্যের সিইওদের সঙ্গে এসআইআর’এর প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে বসেছিল কমিশনের ফুল বেঞ্চ। সূত্রের খবর বৈঠকে আধার কার্ডের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কমিশন সূত্রের খবর, বিহারের জন্য গত ২৪ জুন জারি করা নির্দেশিকায় ১১ টি ডকুমেন্টের সঙ্গে ১২ তম ডকুমেন্ট হিসাবে আধার কার্ডের কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে আধার আইনের ৯ নং ধারায় উল্লেখিত আধার কার্ড যে কোনোভাবেই নাগরিকত্ব প্রমাণের নথি হিসাবে গণ্য করা হবে না সেটাও সিইও‘দের বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এরাজ্যে এসআইআর শুরু হওয়ার আগেই ভোটার তালিকায় ভুয়ো নামের অস্তিত্ব আগাম টের পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের তদন্তে পূর্ব বারুইপুর ও ময়না বিধানসভা কেন্দ্রে একটি আধার কার্ড ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় একাধিক নামের অন্তর্ভুক্তি নজরে আসে কমিশনের। গোটা ঘটনায় দুই বিধানসভা কেন্দ্রের চার আধিকারিককে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করে কমিশন। ফলে এরাজ্যে ভুয়ো ভোটারদের নাম তোলার কাজে আধার কার্ডের ব্যবহার নিয়ে কমিশন আগে থেকে ওয়াকিবহাল। গত বুধবারই শিলিগুড়িতে সাংবাদিকদের কাছে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, যাদের আধার কার্ড নেই তাদের সরকার দুয়ারে সরকার শিবির করে আধার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেবে। ফলে আধারের অন্তর্ভুক্তি এরাজ্যে কীভাবে মোকাবিলা করবে কমিশন তা সময় বলবে। 
এদিকে এদিনই বিহারে চলতি বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের সঙ্গে বৈঠক করল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-এর এক প্রতিনিধিদল। বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে আরজেডি-র রাজ্যসভার সাংসদ মনোজ ঝা বললেন, “আমরা প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে আলোচনা করেছি। নাম বাদ দেওয়া,  নাম নিয়ে আপত্তি, সময়সীমা, ডাকযোগে ভোট— সবকিছু নিয়েই আরজেডি-র অবস্থান কমিশনের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। আমরা আশাবাদী, আমাদের উদ্বেগের বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, কমিশন প্রক্রিয়াকে সহজ ও স্বচ্ছ করার আশ্বাস দিয়েছে।প্রতিনিধিদলে মনোজ ঝা ছাড়াও আরজেডি সাংসদ সুধাকর সিং এবং দলের নেতা চিত্তরঞ্জন গগন ছিলেন। তাঁরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার ও দুই কমিশনার সুখবীর সিং সাঁধু ও বিবেক যোশীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
পরে নির্বাচন কমিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের প্রধানদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনার ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ছয় মাসে দেশে মোট ৪,৭১৯টি সর্বদল বৈঠক হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ৪০টি সিইও, ৮০০টি ডিইও এবং ৩,৮৭৯টি ইআরও-র বৈঠক। এইসব বৈঠকে প্রায় ২৮ হাজার রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন

মন্তব্যসমূহ :0

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন