সেই অপারেশন সিঁদুরের সময় থেকে বারবার ভারতকে নানাভাবে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করে অপমান-অসম্মান করে গেলেও একবারের জন্যও মুখ খোলেননি। প্রতিবাদ জানাননি বা বিরোধিতা করেননি। কিন্তু ওদিকে মিসিসিপি এবং এদিকে গঙ্গা নদী দিয়ে অনেক জল গড়ানোর পর আচমকাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠলেন। এমনকি গ্রেট প্রধানমন্ত্রী আখ্যা দিয়ে মোদীকে তাঁর চিরকালের বন্ধু বলেও ব্যক্ত করেছেন। সোশাল মিডিয়ায় ট্রাম্পের এমন বার্তা পেয়ে সুদীর্ঘ নীরবতা ভঙ্গ করে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মোদী প্রত্যুত্তরে জানিয়ে দেন আলোচনা করে বাণিজ্য জট খোলার কথা। মোদী-ট্রাম্প দু’জনেই জানান তাঁরা ব্যাকুল হয়ে বসে আছেন কবে দু’জনে একসঙ্গে বসে কথা বলবেন। লক্ষণীয় যতদিন ট্রাম্প ভারতকে ক্রমাগত কটাক্ষ করেছেন, আক্রমণ করেছেন, অপমান করেছেন মোদী কিছুই বলেননি। চীনে মোদী-শি-পুতিন এক ফ্রেমে হাজির হবার পর প্রথম একটু নরম হয়ে মোদীর প্রশংসা করেছিলেন ট্রাম্প। তারপর এটা দ্বিতীয়বার। আর অভিমান চেপে রাখতে পারেননি। বন্ধুর মুখে ফের প্রশংসা শুনে বিগলিত হয়ে বার্তা পাঠালেন।
ট্রাম্প মোদীর যথেচ্ছ প্রশংসা করে দুই এক সপ্তাহের মধ্যেই শুল্ক বিরোধের মীমাংসা হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দেন। মোদীও মনে করেন আলোচনাতেই কেটে যাবে জট। কিন্তু জট খুলবে কোন শর্তে তার কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। দু’দেশেরই স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট অবস্থান আছে। কাউকে না কাউকে নতি স্বীকার করতেই হবে। ট্রাম্পের কাণ্ড কারখানা দেখে মনে হয় না তিনি তাঁর জায়গা থেকে একচুলও সরবেন। তাহলে মোদীকেই দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে হয়। ট্রাম্পের দাবি ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য বিপুল। ভারত কার্যত বিনা শুল্কে বিপুল পণ্য আমেরিকায় বিক্রি করে। কিন্তু মার্কিন পণ্য ভারতে ঢুকতে দেয় না বিপুল শুল্ক চাপিয়ে এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপ করে। ট্রাম্প চান দু’দেশের বাণিজ্য সমান সমান করতে ভারত মার্কিন পণ্য আমদানি করুক বাধা তুলে দিয়ে। অথবা ভারতের পণ্য আমেরিকা ঢোকা আটকানো হবে। আমেরিকা তাদের যে সব পণ্য ভারতে বিক্রি করতে চায় তার অবাধ ছাড়পত্র দিলে ভারতে কৃষি, পশুপালন, ছোট শিল্প ভীষণভাবে মার খাবে। অগণিত মানুষ রুজি হারাবেন। এই জায়গায় সমাধানসূত্র বার করতে হলে মোদীকে গোপনে মার্কিন শর্ত মানতেই হবে।
একটা বিষয় পরিষ্কার ভারতের অর্থনীতি আমেরিকার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। তাছাড়া বিশ্ব শক্তির ভারসাম্যের প্রশ্নে মোদীরা আমেরিকার দিকে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য। দায়ে পড়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে গেলেও মোদীদের আদর্শগত হৃদয় জুড়ে বিরাজ করে ওয়াশিংটন। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের জুনিয়র অংশীদারিতে অতিমাত্রায় মোহ। তাই দেশের কৃষক সহ সাধারণ মানুষের স্বার্থকে আড়াল করে ট্রাম্পের সঙ্গে ফের গলাগলি ও কোলাকুলি করলেও আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না।
Editorial
ট্রাম্পের টানে মোদী

×
মন্তব্যসমূহ :0