GST Modi

চাপ ট্রাম্পের, জিএসটি সংস্কারের ভাষণে দেশের বাজারে জোর মোদীর

জাতীয়

জিএসটি-তে চুপসেছে ছোট ব্যবসা।

চার ধাপের বদলে দু’ধাপে জিএসটি চালু হচ্ছে সোমবার থেকে। তার আগে, রবিবার, দেশবাসীকে ‘সঞ্চয় উৎসব’ পালনের পরামর্শ দিয়েছেন মোদী।
আমেরিকার শুল্ক যুদ্ধের আবহে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ পণ্য ব্যবহার এবং উৎপাদনে জোর দেওয়ার লক্ষ্যও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর দাবি, জিএসটি বা পণ্য পরিষেবা কর সংস্কারের ফলে সুবিধা হবে দেশের নির্মাতাদের। তিনি বলেছেন, অতিক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রকে পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে আসতে হবে। 
জিএসটি সংস্কারের ফলে এবার চালু থাকবে ৫ ও ১৮ শতাংশের ধাপ। বিলাস পণ্য ও ক্ষতিকর দ্রব্যে ৪০ শতাংশ কর থাকবে।
জিএসটি কমার ফলে জনতার সুবিধা কতটা হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করিয়েছেন যে দাম সমানে বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের। তার ওপর বসে জিএসটি। হার কমলে খানিক কম দাম ক্রেতাদের দিতে হয় ঠিকই, তবে খরচ তাতে বিশেষ কমে না। 
অর্থনীতিবিদ ঈশিতা মুখার্জির বক্তব্য, আয় এবং রোজগার বাড়ানোর দিকে সাফল্য নেই মোদী সরকারের। দাম এমনিতেই চড়া। ফলে জিএসটি কমলে আমজনতার ক্রয়ক্ষমতা বিশেষ বাড়বে না। 


মোদী ভাষণে ‘নতুন প্রজন্মের জিএসটি’-কে বলেছেন, ‘‘বিকাশের দৌড়ে সমান সমান ভাগ নিশ্চিত করবে। বিকাশের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।
কৃষক, মহিলা, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত সকলের সুবিধা হবে। সকলে সঞ্চয় করতে পারবেন।’’ 
জিএসটি চালুর পর থেকে ছোট মাঝারি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা সবচেয়ে বেশি অভিযোগ জানিয়েছে। একেবারে ছোট উৎপাদককেও করের জন্য হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
সেই ক্ষোভ প্রশমনে মোদী বলেছেন, ‘‘জিএসটি’র আগে আলাদা আলাদা করের বোঝায় নাজেহাল ছিল দেশবাসী। সার্ভিস ট্যাক্স, সেলস ট্যাক্স- নানারকম কর দিতে হতো। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মালপত্র পাঠাতে করে ঝামেলায় জর্জরিত হতে হতো। কতবার ঠেকতে হতো। কতরকমের ফর্ম ভরতে হতো। জিএসটি চালু হওয়ায় সেই অসুবিধা দূর হয়েছে।’’
ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়ীরা যদিও খাপ্পা মোদীর সময়ে চালু জিএসটি’র জটিলতায়। করের মেটানোর প্রশাসনিক পদ্ধতির জটিলতা নিয়ে বিভিন্ন স্তর থেকে জানানো হয়েছে ক্ষোভ। নতুন সংস্কারে সেই সমস্যা মিটবে কতটা তা স্পষ্ট হয়নি। 
মোদী বলেছেন, ‘‘কেবল ৫ ও ১৮ শতাংশ কর হওয়ায় সস্তা হবে ওষুধ, সাবান, পেস্ট, বিমা সস্তা হয়ে যাবে। ১২ শতাংশ কর ছিল এমন বিভিন্ন পণ্যের ৯৯ শতাংশেরই কর কমে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।’’
চিকিৎসক ডাঃ ফুয়াদ হালিম ওষুধের দাম প্রসঙ্গে সরকারি বক্তব্যে প্রশ্ন তুলেছেন। জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের যুক্ত এই চিকিৎসকের বক্তব্য, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকাই নিচ্ছে না দেশের সরকার। মারাত্মক মাত্রায় বেড়েছে সব ধরনের ওষুধের দাম। জিএসটি কমবে তার একাংশে। তবে তারপরও দাম চড়াই থাকবে সাধারণ মানুষের আয়ের তুলনায়।
মোদী বলেছেন, ‘‘১২ লক্ষ পর্যন্ত আয় কর ছাড় চালু হয়েছে আগে। মধ্যবিত্তের জীবনে বিপুল পরিবর্তন। এবার গরিবেরও সুবিধা। নয়া মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তের ‘ডবল বোনানজা’। ঘর তৈরি, টিভি ফ্রিজ, গাড়ি কিনতে খরচ কম পড়বে। হোটেলে ঘর ভাড়া কমবে। দোকানদাররা উৎসাহিত, ছাড় দেবেন গ্রাহকদের।’’ 
এর সঙ্গেই মোদী বিদেশের ওপর নির্ভরতা কমানোর বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ভারতকে আত্মনির্ভর করার জন্য দায়িত্ব নিতে হবে ছোট ও মাঝারি শিল্পকে। যা আমরা দেশে বানাতে পারি তা দেশেই বানানো উচিত। জিএসটি সহজ হওয়ায় ছোট, কুটির এবং মাঝারি শিল্পের সুবিধা হবে। বিক্রি বাড়বে, কর কমবে।’’
মোদী বলেন, ‘‘ভারতের উন্নতমানের উৎপাদন হতো, সেই গৌরব ফিরে যেতে হবে। সারা বিশ্বে গুণমানের কদর হয়, সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। 
স্বদেশির মন্ত্র থেকে দেশের শক্তি মিলবে। প্রতিদিনের জীবনে বহু বিদেশি জিনিস জুড়ে গিয়েছে। তা থেকে মুক্ত পেতে হবে। ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ পণ্য কিনতে হবে।’’ 
মোদী বলেন, ‘‘স্বদেশির অভিযান রাজ্যে রাজ্যে কারখানা উৎপাদন যাতে বাড়ে, বিনিয়োগের আবহ যাতে বাড়ে। তবেই ভারত বিকশিত হবে।’’
নরেন্দ্র মোদীর মেয়াদেই আন্তর্জাতিক স্তরে আমেরিকাকে তোষামোদে মেতে থেকেছে তাঁর প্রশাসন। কিন্তু ৫০ শতাংশ শুল্কের বোঝা থেকে এইচ ওয়ান বি ভিসা, ভারতকে কার্যত কোণঠাসা করতে নেমেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিতে ভারতের কৃষি বাজারে অবাধ সুযোগ পেতে মরিয়া আমেরিকা। সেই পরিস্থিতিতে ‘নির্ভরতা কমানোর’ ভাষণ মোদীর।

Comments :0

Login to leave a comment