সরকারি নজরদারিকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য আরএসএস-কে ‘কিছু ব্যক্তিবর্গের সমষ্টি’ বলে চালাচ্ছেন মোহন ভাগবত। আরএসএস-কে জন পরিসরে নিজের সম্পর্কে সব তথ্য স্পষ্ট করে হাজির করতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী নথিভুক্ত করতে হবে এই সংগঠনকে।
সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপত্র ‘পিপলস ডেমোক্র্যাসি’-র প্রকাশিতব্য সংখ্যার সম্পাদকীয়তে এই দাবি তোলা হয়েছে।
গত ৯ নভেম্বর বেঙ্গালুরুতে আরএসএস’র একশো বছর সংক্রান্ত আলোচনায় সঙ্ঘ প্রধান ভাগবত বলেছিলেন যে আয়কর বিভাগ এবং আদালত আরএসএস-কে ‘ব্যক্তিবর্গের সমষ্টি’ বলেছে। তাই আরএসএস আয়কর ছাড় পায়।
কেবল আয়কর ছাড় নয়, আরএসএস’র কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক নজরদারির আওতার বাইরে থাকে নথিভুক্তি না হওয়ার জন্য। বিজেপি’র ভিত্তি সংগঠন ফ্যাসিবাদী হিন্দুরাষ্ট্রের প্রবক্তা আরএসএস পুরোদস্তুর রাজনৈতিক সংগঠন হলেও সেই পরিচয় আড়ালে রাখে।
সম্পাদকীয়তে মনে করানো হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে আরএসএস’র প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। বলা হয়েছে, ‘‘আরএসএস-কে ‘দেশের সেবায় নিয়োজিত’ এনজিও বলে চালানোর চেষ্টা করেছিলেন মোদী। কিন্তু আরএসএস সংবিধান এবং আইনে নির্দিষ্ট বিধি অনুযায়ী চলে না।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, এটা ঠিকই যে আরএসএস’র প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ ছিলেন। কিন্তু বাস্তব এটিই যে আরএসএস কখনও ব্রিটিশ সরকারের বিরোধিতা করেনি। আরএসএস প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হলো ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘সশস্ত্র হিন্দুত্ববাদ’। মাধব সদাশিব গোলওয়ালকর এই আদর্শগত ভিত্তিকে ব্যাখ্যাও করেছিলেন। আরএসএস বরাবর ঐক্যবদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছে।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, মোদী সরকার অর্থ পাচার রোধ আইন এবং ইডি-কে ব্যবহার করেছে কোনও প্রমাণ ছাড়াই বহু মানুষকে গ্রেপ্তার করতে। বহু ঘটনা রয়েছে যেখানে আদালতে কড়া ভর্ৎসনার মুখে পড়েছে ইডি। কিন্তু আরএসএস’র বেলায় জামাই আদর। আরএসএস’র বিপুল অর্থ, সম্পত্তি, জমিজমাকে ব্যক্তিগত দান বলা হচ্ছে। ভাগবত এড়িয়ে যেতে চাইছেন যে এগুলি কেবল কয়েকজন ব্যক্তির নিজস্ব সম্পত্তি নয়। এর সঙ্গে জনতার থেকে অর্থ নেওয়ার সম্পর্ক রয়েছে।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জনতার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দপ্তর তৈরি করলে বা জমি কিনলে সরকারি নজরদারির আওতায় থাকতে হয়। কর সংক্রান্ত নথি জমা দিতে হয়। অথচ আরএসএস’র বেলায় সব মকুব।
সম্পাদকীয় প্রশ্ন তুলে যে নীতিগত অবস্থান দৃঢ় হলে কেন এই নজরদারি এড়াতে মরিয়া আরএসএস।
সম্পাদকীয়তে উগ্র হিন্দুত্ববাদী এই সংগঠনের কার্যক্রমও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্তত পাঁচটি বিচারবিভাগীয় কমিশনের রিপোর্টে সাম্প্রদায়িক হিংসায় আরএসএস-র যোগাযোগ নির্দিষ্ট করে জানানো হয়েছে। ১৯৬৯’র আমেদাবাদ দাঙ্গায় জগনমোহন রেড্ডি রিপোর্ট, ১৯৭০ ভিওয়ান্দি দাঙ্গায় ডিপি মদন রিপোর্ট, ১৯৭১’র তালচেরি দাঙ্গায় জোসেফ ভিথিয়াথিল রিপোর্ট, ১৯৭৯’র জামশেদপুর দাঙ্গায় জিতেন্দ্র নারায়ণ রিপোর্ট, ১৯৮২’র কন্যাকুমারী দাঙ্গায় বেণুগোপাল রিপোর্ট - এর সব ক’টিতেই নির্দিষ্ট করে আরএসএস’র ভূমিকার উল্লেখ করা হয়েছিল।
CPI-M on Mohan Bhagwat's Claim
আরএসএস’র বিপুল অর্থ, সম্পত্তির নজরদারিতে ফাঁকি কেন, প্রশ্ন তুলল সিপিআই(এম)
×
Comments :0