আর কয়েকমাস পরই কারও মাধ্যমিক পরীক্ষা, কারও বা উচ্চমাধ্যমিক। এই সময়ে যখন পরীক্ষার প্রস্তুতি তুঙ্গে থাকার কথা,তখন ধূপগুড়ির বহু পড়ুয়া বইয়ের পাতা উল্টাতেই পারছে না। কারণ সেই গত শনিবারের অতিভারী বৃষ্টিপাত এবং জলঢাকার বাঁধভাঙা জল কেড়ে নিয়েছে তাদের পড়াশোনার সম্বল, ভাসিয়ে দিয়েছে আগামী দিনের স্বপ্ন। ভুটান পাহাড়ে শনিবার রাতের বৃষ্টিতে জলঢাকার বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় গধেয়ারকুঠি পঞ্চায়েতের চরচরাবাড়ি, হোগলারটারি, কুল্লাপাড়া, বেতগাড়া সহ একাধিক এলাকা ভয়াবহভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বন্যার তোড়ে ঘর-বাড়ির পাশাপাশি দুর্গত এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্ত বই-খাতা ভেসে গেছে বা জল-বালির নিচে বিলীন হয়ে গিয়েছে। মন খারাপে ডুবে আছে সেই এলাকার পড়ুয়ারা। ডাউকিমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সুব্রত সরকার। শনিবার রাতে মন দিয়ে পড়াশোনা করার পর বইগুলি ঘরের তাকে রেখে ঘুমিয়েছিল। পাশেই রাখা ছিল তার দিদি, কলেজের ছাত্রী শেফালির বইগুলোও। কিন্তু বাঁধ ভাঙতেই নদীর জল ঢুকে সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আজ রেল লাইনের উপরে ক্যাম্পে বসে সুব্রত বলছে, কীভাবে সামনে উচ্চমাধ্যমিকের প্রস্তুতি নেবে, তা ভেবে পাচ্ছে না। সুব্রতর আক্ষেপ, “নদীর জল ঢুকতেই প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম আমরা। কিন্তু বাড়ি ঘরের পাশাপাশি বইগুলিকে আর বাঁচানো যায়নি।” শুধু সুব্রত বা শেফালি নয়, চরচরাবাড়ি এলাকার বহু পরীক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সকলেরই সামনে পরীক্ষা—পড়াশোনা হবে কী করে, সেই চিন্তায় আকুল তারা।
গধেয়ারকুঠি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী কাবেরী। কুর্শামারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির রাজ মন্ডল। এদের বইগুলিও এখনও বালির তলায় চাপা পড়ে আছে। রাজ ও কাবেরীর বাবা, পেশায় দিনমজুর শ্রীবাস মন্ডল অসহায় কণ্ঠে বললেন, “ছেলেমেয়েদের বইখাতা জলকাদায় সব শেষ। এখন কারও কাছ থেকে বইখাতা যদি পাওয়া যায় তাহলে ভালো হয়। এখন চাল কেনার ক্ষমতা নেই, আর বই... জানি না কী করব।” একদিনের বানভাসিতে গধেয়ারকুঠির দশম শ্রেণির ছাত্রী অপর্ণা রায়েরও সমস্ত বই বন্যার জলে ভেসে গিয়েছে। অপর্ণা জানাল, “সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা রয়েছে। অনেক টাকার বই ছিল। বইগুলি নতুন করে কেনা ছাড়া উপায় নেই।” বন্যার আঘাতে ঘরবাড়ি হারিয়ে সর্বস্বান্ত পরিবারগুলোর পক্ষে নতুন করে বইপত্র কিনে দেওয়া অসম্ভব। ফলে আসন্ন পরীক্ষা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে এই পড়ুয়াদের। দুর্গত এই ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর আর্জি জানাচ্ছে এলাকাবাসী। জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের শিক্ষা দপ্তর থেকে কিছু বই ছাত্র-ছাত্রীদের দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও গত বৃহস্পতিবার এসএফআই’র পক্ষ থেকে বন্যা দুর্গত এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে যতটা সম্ভব খাতা, কলম ও শিক্ষাসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ধূপগুড়ির এসএফআই নেতা সুব্রত রায় জানিয়েছেন, “বন্যা দুর্গত এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে আমরা আছি। প্রয়োজনে আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক-এর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে কোচিংয়ের ব্যবস্থা করব।” এলাকার এই সকল ক্ষতিগ্রস্ত পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ যাতে বন্যার জলে ভেসে না যায়, তার জন্য সরকার এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলির দ্রুত ও ব্যাপক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
Comments :0