অরিজিৎ মণ্ডল: হলদিয়া
মানুষের ঐক্য গড়েই লাল ঝাণ্ডাকে মজবুত করতে হয়। আর যারা দেশ আর বিশ্বকে লুট করছে, সেই লুটেরারা ভয় পায় লাল ঝাণ্ডাকে।
বৃহস্পতিবার হলদিয়ায় সিআইটিইউ’র ডাকে সমাবেশে একথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সিআইটিইউ ১৩দশ রাজ্য সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সমাবেশ হয়েছে শিল্পাঞ্চল হলদিয়ায়। যোগ দিয়েছেন সংগঠিত এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবীরা। যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন অংশের মানুষ।
সেলিম বলেন, লাল ঝাণ্ডা প্রশ্ন তোলে মজুরি নেই কেন। প্রশ্ন তোলে, কেন শ্রমজীবীর মাথার ওপর ছাদ থাকবে না, অসুস্থ হলে কেন ছুটি মিলবে না, কেন কাজ স্থায়ী হবে না, কেন বছরের পর বছর অস্থায়ী করে রেখে দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন তোলে বলেই শাসকশ্রেণি কখনও পুলিশ, কখনও দুষ্কৃতী, আবার কখনও সাম্প্রদায়িকতা, জাত-পাতের শক্তিকে ব্যবহার করে খতম করতে চায় লাল ঝাণ্ডাকে। কিন্তু লাল ঝাণ্ডাকে খতম করা যয় না। লাল ঝাণ্ডা লুটের টাকা নিয়ে চলে না।
সেলিম আমেরিকার চলতে থাকা বিক্ষোভের উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প ভেবেছিলেন দুনিয়াটাকে নিয়ে ফুটবলের মতো খেলবে। সহযোগী হয়েছে আমাদের দেশের মোদী সরকার। ট্রাম্প প্রশাসন ছাত্রদের হাতকড়া পরিয়ে দেশে ফিরিয়ে দিচ্ছে। ছাপ্পান্ন ইঞ্চির মুরোদ নেই প্রশ্ন তোলার যে কেন অত্যাচার করছে আমেরিকা। লস এঞ্জেলসে অভিবাসী বিরোধী ধরপাকড়ে নেমে কড়া প্রতিরোধের মুখে পড়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তাঁর উগ্র জাতীয়তাবাদের রাজনীতি প্রতিরোধের মুখে পড়ছে। মানুষ নেমে লড়াই করছে আমেরিকায়।
সেলিম বলেন, দুনিয়ায় শ্রমিকদের দাবি এক। সেই দাবি লুটের বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে।
মহেশতলার প্রসঙ্গ টেনে সেলিম বলেন, ধর্মকে আরএসএস-বিজেপি ব্যবহার করছে। কিন্তু কেবল ধর্মকেই বিভাজনে ব্যবহার করা হচ্ছে তা নয়। বাংলাভাষী মানুষ অন্য রাজ্যে কাজ করতে গেলে ভাষার নামে অত্যাচার হচ্ছে। বাংলাদেশী বলে প্রচার হচ্ছে। এখানেও বলছে হিন্দিভাষীরা কেন আসছে, বিহারী কেন আসছে। ধর্মকে যেমন ব্যবহার করতে পারে, প্রাদেশিকতাকেও ব্যবহার করতে পারে।
তিনি বলেন, মুর্শিদাবাদে আমরা দেখলাম বিষ ঢোকানো হলো। আবার যেখানে হিন্দু মুসলমান নেই সেখানে খ্রীস্টানের নামে ভাগাভাগি করবে। আদিবাসী, তফসিলির মধ্যে ভাগ করবে। ফলে বামপন্থাকে শক্তিশালী করতে হলে ভাগাভাগি রুখতে হবে।
সেলিম ধন্যবাদ জানান হলদিয়ার জনতাকে। তিনি বলেন, শ্রমিক সম্মেলনের জন্য হলদিয়ার শ্রমিক-কর্মচারী, শিক্ষক, ছোট ব্যবসায়ী, মহিলা-ছাত্র-যুবরা যেভাবে এগিয়ে এসেছেন তাঁদের ধন্যবাদ জানাতে হয়। লাল রুমালও দেখা যাবে না। তখন ছিল তৃণমূলে। এখন বিজেপি-তে। যে দলেই থাকুক বলেছিল শাসক শ্রেণির দম্ভ দেখাতে। যারা সাম্রাজ্যবাদের পা চাটে তারা লাল ঝাণ্ডাকে বরদাস্ত করতে পারে না।
রাজ্যের প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, পহেলগামের পর এখানে বিজেপি-তৃণমূল মিলে আক্রমণ করেছিল মার্কসবাদী আর ধর্মনিরপেক্ষদের, ‘সেকু-মাকু’ প্রচার চলল। এজন্যই তৃণমূলকে তৈরি করেছিল বিজেপি। আরেকদিকে কিষেণজীকে মদত দেওয়া হয়েছিল এজন্য। আরেকদিকে এরাজ্যে সাম্প্রদায়িকতা, দাঙ্গার বিরুদ্ধে মমতা ব্যানার্জি একটিও তদন্ত কমিশন করেননি। মুর্শিদাবাদ হোক বা বসিরহাট, কোথাও করেননি। প্রতিদানে বিজেপি সিবিআই-ইডি’র মুখ বন্ধ রাখবে। কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বর ধরা পড়লেও চুপ থাকবে।
সেলিম বলেন যে বিভাজন এবং জীবিকার দাবিতে লড়াই বামপন্থীদেরই লড়তে হবে। তিনি সিআইটিইউ’র নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন, ট্রেড ইউনিয়নকে যেমন কারখানার ভেতর মজুরি বা শ্রমিকশ্রেণির অধিকারের জন্য লড়াই করতে হবে, তেমনই কারখানার বাইরে যুবদের সংগঠিত করার দায়িত্বও নিতে হবে। নিজেদের দাবিতে যেমন লড়াই হবে তেমনই অন্য অংশগুলির জন্যও করতে হবে আন্দোলন।
MD Salim Haldia
ঐক্য গড়ে মজবুত করতে হবে লাল ঝাণ্ডাকে: সেলিম

×
Comments :0