Madrasa lack of teachers

ভরসা স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক, রাঁধুনিরা নিচ্ছেন ক্লাস, শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে মাদ্রাসা

জেলা

চোপড়ার মদনগছ সিনিয়র মাদ্রাসা শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে।

তপন বিশ্বাস 
সরকারি বিদ্যালয়। শিক্ষকের অভাবে রাঁধুনিরা ক্লাস নেন। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মোট বারোটি শ্রেণি মিলিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ১২০০। প্রতিদিনের রুটিনে সাতটি করে ক্লাস থাকলেও পড়ানোর জন্য রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সহ স্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন মাত্র তিনজন। ভরসা পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক। এমনই চিত্র দেখা যাচ্ছে উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া ব্লকের মদনগছ সিনিয়ার মাদ্রাসার।

অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষকের অভাবে ওই সিনিয়র মাদ্রাসার লেখাপড়া লাটে ওঠেছে পরিবর্তনের সরকার আসার পরে। বাম আমলে ওই মাদ্রাসায় ১৭ জন শিক্ষক ছিলেন। ১৪ জন ইতিমধ্যে অবসর নিয়েছেন। তিনজনের মধ্যে দেড় বছরের মাথায় আরও একজন অবসর গ্রহণ করবেন। ২০১৬ সালে বাংলা ও ইংরেজির একজন করে শিক্ষক যোগদান করলেও কিছু দিনের মধ্যেই তারা বদলি হয়ে নিজের বাড়ির কাছে চলে যান। ফলে মাদ্রাসার পাঁচ জন রাধুনীর মধ্যে দুইজন প্রাথমিক স্তরে শিক্ষকতা করেন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক অভিভাবক বলেন, "সারাদিনে একটা দুটো বেশি ক্লাস হয় না। এক সময় এই মাদ্রাসা থেকে অনেক কৃতি ছাত্র বেরিয়েছেন। তৃণমূলের শাসনকালে কঙ্কালসার চেহারা হয়েছে মদনগছ সিনিয়র মাদ্রাসার।'' 
তিনি আরও বলেন, "ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অনেক কাজ থাকা সত্ত্বেও তিনি থিওলজির ক্লাস নেন। একজন আরাবিক ও অপরজন রয়েছেন জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক। বাংলা ও ইংরেজি কোন শিক্ষকই নেই।" মিড ডে মিলের রাধুনীদের ক্লাস নেয়া প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আজিমুদ্দিন বলেন, ''কিছু করার থাকে না। অনেক সময় স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষকরা আসতে দেরি করলে রাধুনীদের মধ্যে দুইজন প্রাথমিক স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়া দেখিয়ে দেন।" তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, "এছাড়া উপায় কী বলুন?"

মাদ্রাসার জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক যোগেশ চন্দ্র বর্মন বলেন, "প্রতিটি শ্রেণির জন্য দিনে অন্তত সাতটি করে ক্লাস নেওয়ার কথা। সেই হিসেবে রুটিন তৈরি করতে হয়। কিন্তু মাত্র তিনজন শিক্ষক হওয়ায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ একসময় এই সিনিয়র মাদ্রাসা অনেক ভালো ভালো ছাত্র উপহার দিয়েছে। এখনও মাদ্রাসার স্পোর্টসের বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা চ্যাম্পিয়ন।"

জানা গেছে, ১৯৮২ সালে স্থাপনের পরই মিলেছে সরকারি অনুমোদন। ২০১২ সাল থেকে সুপারিন্টেন্ডেন্টের পদ খালি। ২০১৩ সালে মেলে ফাজিলের অনুমতি। তবে শত আর্জিতেও এখন শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। একাদশ শ্রেণির ছাত্র মোঃ রিজওয়ান জানিয়েছে, "দিনের শুরুতে একটা ক্লাসের পর আর হবে কী না, তার ঠিক থাকে না। দরজার দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে হয়। পরীক্ষার সময়ে খুবই সমস্যা হয়।"
এ বিষয়ে একজন শিক্ষক বলেন, ''কোনওরকমে জোড়াতালি দিয়ে সামলাতে হচ্ছে। পরীক্ষার দিন একজন শিক্ষক দু'-তিনটে রুমে নজরদারি চালান।"
মদনগছ সিনিয়ার মাদ্রাসার প্রশাসক তথা চোপড়া কবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) বরুণ শিকদার জানিয়েছেন, ''ওই মাদ্রাসার শিক্ষকের সমস্যার রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতনকর্তৃকে জানানো হয়েছে।" 
 

 

Comments :0

Login to leave a comment