এসআইআর নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে জলপাইগুড়ি শহরে বুথে বুথে ‘ভোটাধিকার রক্ষা শিবির‘ শুরু করলো সিপিআই(এম)। এই রাজ্যে দুর্গাপুজোর পরেই যে এসআইআর হতে চলেছে তার একরকম চূড়ান্ত এবং নিশ্চিত করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘এসআইআর শুরুর চূড়ান্ত দিনক্ষণ নয়াদিল্লি থেকে ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। তার আগে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তার সঙ্গে ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি প্রকাশিত ভোটার তালিকা মিলিয়ে নেওয়ার জন্য ডিইও’দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ আসলে ২০০২ সালে যেহেতু এরাজ্যে শেষবার ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন হয়েছিল, তাই ফের এই প্রক্রিয়া শুরুর আগে সেই তালিকার ভোটারদের নাম, তাঁদের বিধানসভা কেন্দ্র, সিরিয়াল নম্বর, পার্ট নম্বর নথিভুক্ত করা জরুরি। একইসঙ্গে বর্তমান ভোটার তালিকায় সেই ভোটারদের উপস্থিতি কোথায় আছে, সেই তথ্যও মিলিয়ে নেওয়ার কাজ দরকার।
এদিন কলকাতায় অনুষ্ঠিত একটি গণকনভেনশন এসআইআর প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, মোদী সরকার নির্বাচন কমিশনকেও কুক্ষিগত করেছে, এখন নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন পরিচালনার বদলে দেশকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর লক্ষ্যে কাজ করতে নেমেছে। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ও পৌর নির্বাচনে ভোট লুটেও এরাজ্যের নির্বাচন কমিশনের দলদাসত্ব দেখেছি, এখন ভারতের নির্বাচন কমিশনও ভোট লুট প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে গিয়েছে। মানুষের সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ লুটের প্রক্রিয়া কায়েম রাখতেই শাসকের ভোট লুটের প্রক্রিয়া। এর গোড়ায় আছে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া, গোড়াতেই সেটা রুখতে হবে সবাই মিলে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা থেকে মৃতদের নাম বাদ দিতে চাইলে সরকারের কাছ থেকে নথীভূক্ত মৃতদের নামের তালিকা নিয়েই ভোটার তালিকা সংশোধন করতে পারতো। তার বদলে নাগরিকদের ব্যতিব্যস্ত করে রুটিরুজি, শিক্ষা স্বাস্থ্যের দুর্দশার থেকে নজর ঘোরাচ্ছে। সংবিধান অনুসারে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সর্বজনীন ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, তার বদলে তারা ভোটাধিকার সীমিত করতে নেমেছে।
এসআইআর নিয়ে রাজ্যের মানুষ বিভ্রান্ত। এই বিভ্রান্তি দূর করতে এদিন বুথে বুথে ‘ভোটাধিকার রক্ষা শিবির‘ শুরু করলো সিপিআই(এম)। বুধবার জলপাইগুড়ি শহরের শিরীষতলার ভবেশ চন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে একটি শিবির হয়। ভোটার তালিকা সংক্রান্ত বিভিন্ন জিজ্ঞাসা ও সমস্যা নিয়ে এই শিবির হয়।
শিবিরে ২০০২ এবং ২০২৫ সালের ভোটার তালিকা সংক্রান্ত ভোটারদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসা ও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। জলপাইগুড়ি পৌরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের ভবেশ চন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের এই বুথের অসংখ্য মানুষ এদিনের শিবিরে ২০০২ ও ২০২৫ সালের ভোটার লিস্টে তাদের নাম রয়েছে কিনা সেই খোঁজ নেন। শিবিরে সিপিআই(এম) কর্মী নেতৃবৃন্দ এস আই আর নিয়ে বিজেপি- আরএসএস এবং তৃণমূল কংগ্রেস কি করতে চাইছে তা মানুষকে বুঝিয়ে বলেন। পরবর্তীতে কি করতে হবে এবং কি কি তথ্য সঙ্গে রাখতে হবে তাও মানুষকে এদিন বুঝিয়ে দেন।
শিবিরে উপস্থিত সিপিআই(এম) সদর পশ্চিম এরিয়া কমিটির সম্পাদক শুভাশিস সরকার, জেলা কমিটির সদস্য তপন গাঙ্গুলী, রঘুনাথ মজুমদার, উত্তম সোম, সুজিত চৌধুরী, প্রবীর চক্রবর্তী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। শুভাশিস সরকার বলেন বিজেপি- আরএসএস নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে এসআইআর‘র মাধ্যমে শ্রমজীবী, প্রান্তিক, খেটে খাওয়া মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। বারে বারে নির্বাচন কমিশনকে তালিকা তুলে দেওয়ার পরেও রাজ্যের ভোটার তালিকায় মৃত, স্থানান্তরিত, সন্দেহজনক ভোটারদের নাম বছরের পর বছর রেখে দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস, যাতে ভোটের সময় ভোট লুটে সুবিধা হয়। তিনি বলেন মৃত, স্থানান্তরিত, সন্দেহজনক নামগুলি বাদ দিয়ে ভোটার তালিকাকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ করতে হবে কিন্তু কোনমতেই যাতে কোনো প্রকৃত ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ না যায়। প্রকৃত ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ গেলে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন শুরু করবে সিপিআই(এম)। বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে গোড়া থেকেই বিরোধীরা আশঙ্কা জানাচ্ছিলেন গরমিলের। খসড়া তালিকা প্রকাশ হতেই দেখা যায় ৬৫ লক্ষের নাম বাদ গিয়েছে। বেআইনি প্রক্রিয়া দেখা গেলে বাতিল হবে এসআইআর। বিহারে ভোটার তালিকায় এসআইআর সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের প্রভাব জাতীয় স্তরে এই প্রক্রিয়ার ওপরও পড়বে বলে গত সোমবার শুনানিতে এই পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে দুই বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং সূর্য কান্তের বেঞ্চ। এদিন এই শিবির পরিচালনা করবার জন্য সিপিআই(এম) কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন এলাকার অসংখ্য ভোটার।
CPIM SIR
ভোটাধিকার রক্ষা শিবির জলপাইগুড়িতে, কমিশনকে কুক্ষিগত করেছে মোদী সরকার বললেন সেলিম

×
Comments :0