ANTI-SOCIAL COLLEGE SOCIAL

‘উই লাভ পাপ্পুদা’! কলেজের অনুষ্ঠানে দুষ্কৃতীবরণে তীব্র ক্ষোভ

রাজ্য কলকাতা

TMCP SONA PAPPU CRIMINAL CRIME BENGALI NEWS এই সেই ‘উই লাভ পাপ্পুদা’ ব্যানার

‘পরিচয় ২০২৩’। 

খাতায় কলমে নজরুল মঞ্চে দক্ষিণ কলকাতার প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজের সোশ্যাল। সেখানে গান করেন অনুপম রায় এবং তাঁর ব্যান্ড। অভিযোগ, সেই অনুষ্ঠানে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একটি গোষ্ঠী কসবা, তিলজলা-তপসিয়া এলাকার কুখ্যাত সমাজবিরোধী বিশ্বজিৎ পোদ্দার ওরফে সোনা পাপ্পুকে মঞ্চে তুলে সংবর্ধনা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ কর্মীদের হাতে ‘উই লাভ পাপ্পুদা’ লেখা ছোট ছোট পোস্টারও দেখা যায়। 

২০১৭ সালে পলাশ জানা নামে এক যুবককে খুনের অভিযোগ উঠেছিল সোনা পাপ্পুর বিরুদ্ধে। বেশ কিছুদিন লুকিয়ে থাকার পরে জলপাইগুড়ি থেকে তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর ২০২১ সালে অপর দুষ্কৃতী মুন্না পান্ডেকে খুনের ছক কষে পাপ্পু। মুন্না পান্ডে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার দিনই তাঁর উপর হামলা চালায় পাপ্পুর নেতৃত্বে ২৬ জনের একটি দল। যদিও কোনওক্রমে প্রাণে বাঁচেন মুন্না পান্ডে। ওই ঘটনার ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ফের গ্রেপ্তার হন বিশ্বজিৎ পোদ্দার ওরফে সোনা পাপ্পু।

বুধবারের এই ঘটনাকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে কলেজে। কলেজের পড়ুয়া এবং শিক্ষাকর্মীদের একটি অংশ জানাচ্ছে, কলেজে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ না থাকায় ১২ জন পড়ুয়াকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির উপর দায়িত্ব পড়ে গোটা অনুষ্ঠান পরিচালনার। প্রফুল্লচন্দ্র কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, এই  ১২ জনের কমিটিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে রাজদীপ পাল এবং অরিজিৎ দাস নামে দুই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ কর্মী। কমার্সের ছাত্র এই দুইজন ২০১৭ সালে কলেজ পাশ করে গিয়েছেন। এখন আর ছাত্র নন কলেজের। 

একাংশের বক্তব্য, রাজদীপ পাল ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সক্রিয় ভাবে বিজেপি করতেন। বিজেপি ভোটে হারার কয়েক ঘন্টার মধ্যে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। রাজদীপ এবং অরিজিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সোনা পাপ্পুর দলবলের সাহায্যে কলেজে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করছেন তাঁরা। বহু ছাত্র-ছাত্রীর বাড়ি গিয়েও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। 

কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা জানাচ্ছেন, ‘পরিচয় ২০২৩’-কে সামনে রেখে ঢালাও দুর্নীতি হয়েছে। নজরুল মঞ্চে মেরেকেটে ৩ হাজার আসন সংখ্যা। অভিযোগ, পাস ছাপানো হয়েছিল ৭ হাজারের বেশি। কলেজের নোটিশ বোর্ডে নোটিশ দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পাস বিলির কথা বলা হলেও, ৫০-৬০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পাস পাননি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তাঁরা। 

আসন সংখ্যার কয়েকগুণ বেশি পাস বিলি হওয়ার ফলে চরম বিশৃঙ্খাল তৈরি হয় নজরুল মঞ্চে। ফিরে আসে ২০২২ সালের ৩১ মে’র স্মৃতি। সেদিন নজরুল মঞ্চেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ কর্মীদের অভব্যতার জন্য প্রবল বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল। অসুস্থ হয়ে পড়ে প্রাণ হারান সঙ্গীত শিল্পী কেকে। এদিনও বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। অনুষ্ঠান চলাকালীন একাধিকবার নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মীরা। 

এরই মাঝে সোনা পাপ্পুকে মঞ্চে ডেকে সংবর্ধনা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ঘটনাস্থলে উপস্থিত লালবাজারের গোয়েন্দারা এবং গরফা থানার পুলিশ সোনা পাপ্পুকে মঞ্চে উঠতে বারণ করে। পাপ্পুকে মঞ্চে না উঠলেও, তাঁর ভক্ত টিএমসিপি কর্মীরা মঞ্চেই ‘উই লাভ পাপ্পুদা’ লেখা ব্যানার এবং পোস্টার তুলে ধরে। 

রাজদীপ পাল নিজের ফেসবুক প্রোফাইলেও সেই ছবি আপলোড করেন। রাজদীপ পাল সেখানে সোনা পাপ্পুকে বিশিষ্ট সমাজসেবী বলেন। বেশ কিছু টিএমসিপি কর্মী সোনা পাপ্পুর ফ্রেমে বাঁধানো ছবি নিয়েও কলেজ সোশ্যালে হাজির হন। যদিও পোস্ট করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেটি ডিলিট করেন রাজদীপ। তার আগেই স্ক্রিনশট ছড়িয়ে যায়।

তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থাকায় একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও প্রতিবারই জামিন পেতে অসুবিধা হয়নি পাপ্পুর। পাপ্পু শেষবার গ্রেপ্তার হয় ২০২২ সালের ৭ জুন। এলাকায় অশান্তি পাকানোর অভিযোগে বালিগঞ্জ থেকে তাঁকে কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

খুনের পাশাপাশি কসবা এলাকায় অবৈধ নির্মাণের সিন্ডিকেট চালানো, এলাকায় অশান্তি পাকানোর অজস্র অভিযোগ রয়েছে বিশ্বজিৎ পোদ্দারের বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি সমাজসেবী হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। স্থানীয় বিভিন্ন অংশের ক্ষোভ, তৃণমূলের হয়ে প্রতি নির্বাচনেই তাঁর বাহিনী ‘ভোটে খেটে দেয়।’  একইসঙ্গে রামনবমী এবং হনুমান জয়ন্তীতেও তাঁর এবং তাঁর বাহিনীর ভূমিকা রয়েছে। 

এমন একজন দাগী দুষ্কৃতীকে কীভাবে কলেজ সোশ্যালের মঞ্চে তোলার চেষ্টা হল, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পাশাপাশি প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও উঠছে বিস্তর প্রশ্ন। 

এই ঘটনা সামনে আসায় কলেজে যেতে ভয় পাচ্ছেন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, কলেজে কার্যত গুন্ডারাজ চলছে।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একটি অংশের দাবি, কলেজ সোশ্যালকে সামনে রেখে সবমিলিয়ে ৮-১০ লক্ষ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। একইসঙ্গে তাঁদের অভিযোগ, রাজদীপ, অরিজিৎ, সোনা পাপ্পুর মত বহিরাগতদের ব্যবহার করছেন কলকাতা কর্পোরেশনের ৯০ এবং ৯১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর চৈতালি চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ ৯০ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। এর আগে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। আসনটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় তৃণমূল তাঁর স্ত্রী চৈতালি চট্টোপাধ্যায়কে ৯০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী করে। 

এই ঘটনা প্রসঙ্গে চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। 

Comments :0

Login to leave a comment