Editorial on Gujrat

গুজরাট স্টোরি

সম্পাদকীয় বিভাগ

‘কেরালা স্টোরি’ নিয়ে জোরা‍‌‍‌লো বিতর্কের মধ্যেই আপাত নিরীহ একটি প্রশ্ন সামনে এসে গেছে। যে প্রযোজক-পরিচালকরা ‘কাশ্মীর ফাইলস’ বা ‘কেরালা স্টোরি’র মতো সিনেমা তৈরি করেছেন তারা কি তেমনভাবেই ‘গুজরাট স্টোরি’ নাম দিয়ে একটি সিনেমা বানাবেন? কাশ্মীর ফাইলস এবং কেরালা স্টোরি প্রচারে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেমন বাজারে নেমে পড়েছিলেন ঠিক তেমনি কি গুজরাট স্টোরির প্রচারে মাঠে নামবেন? অবশ্য গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে একাধিক তথ্য চিত্র তৈরি হলেও প্রধানমন্ত্রী কখনও খুশি হননি। প্রবল রাগে সেগুলির বিরুদ্ধে গর্জন করেছেন এবং দলীয় ও প্রশাসনিক সর্বাত্মক প্রভাব খাটিয়ে সেগুলিকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করেছেন। সদ্য প্রচারিত বিবি‍‌সি’র তথ্য চিত্র নিয়ে তো রে রে করে তেড়ে এসেছে গেরুয়াবাহিনী। মোদী ভক্তরা যে যেভাবে পেরেছে বি‍‌বিসি’কে, চিত্র নির্মাতাদেরকে পরোক্ষে বিবিসি’কে নাজেহাল ও সন্ত্রস্ত করতে নামানো হয়েছে সরকারি সংস্থাকে। এই ছবিগুলি ঘোষিতভাবেই তথ্যচিত্র। মনগড়া কাহিনি চিত্র নয়। সত্য ও তথ্যের দাঁড়িয়েই তথ্যচিত্রগুলি তৈরি হয়েছে। তাতে বিপদ বেড়েছে মোদীদের। দলীয় সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে গুজরাট দাঙ্গার যাবতীয় নির্মমতা-নৃশংসতা-অমানবিকতা-বর্বরতাকে আড়াল করার চেষ্টা হলেও তথ্যচিত্রে সেগুলি জীবন্ত হয়ে সরাসরি আঙুল তুলছে মোদী-শাহ’দের দিকে।
কিন্তু কাশ্মীর ফাইলস বা কেরালা স্টোরি তৈরি হয়েছে হিন্দুত্ববাদী মতবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে সংখ্যালঘু বিদ্বেষ ছড়িয়ে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের লক্ষ্যে। রীতিমতো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পরিকল্পনা করে তৈরি করা হয়েছে এই ছবি। জম্মু-কাশ্মীরের মোদী-শাহদের ব্যর্থতা আড়াল করতে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ঐতিহাসিক সমস্যাকে। আর তাকে ব্যবহার করে সারা দেশে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে তৈরি হয়েছে কাশ্মীর ফাইলস। আর এই ছবি বহুল প্রচারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নি‍‌য়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বি‍‌জেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ছবিটি করমুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। গুচ্ছ গুচ্ছ ছক-ষড়যন্ত্র করেও যখন কাশ্মীরকে হিন্দুত্বের পদে মাথা নোয়ানো যাচ্ছিল না তখন গোটা দেশের কাশ্মীরকে ঘৃণিত-নিন্দিত করতে হাতিয়ার করা হয় একপেশে এবং অর্ধসত্য তথ্যভিত্তিক সিনেমাকে।
কেরালা স্টোরিও অনেকটা সেরকম। বিগত কয়েক বছরে কেরালা থেকে দু’-একটি মহিলার সন্ত্রাসবাদে যোগ দেবার ঘটনাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে গল্প বানিয়ে এটা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা হয়েছে কেরালা সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি। তারা কেরালার মেয়েদের ফুসলিয়ে নিয়ে যায় এবং হয় বিদেশে চালান করে অথবা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীতে ঢুকিয়ে দেয়। এই কাহিনি চিত্র রিলিজের সঙ্গে সঙ্গে গেরুয়াবাহিনী প্রচারের ঝড় তোলে কেরালা থেকে ৩২ হাজার মহিলা নিখোঁজ। তারা সব সন্ত্রাসবাদী হয়ে গেছে। এহেন প্রচারে নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কর্ণাটকে নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কায় উগ্র হিন্দুত্ববাদী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রধানমন্ত্রী কেরালা স্টোরি দেখার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো খোদ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর রাজ্য গুজরাট থে‍‌কে গত পাঁচ বছরে ৪১ হাজার মহিলা নিখোঁজ হয়েছেন সরকারি হিসাবেই। পুলিশ তাদের কোনও হদিশ দিতে পারেনি। তবে কি এরাও সন্ত্রাসবাদী হয়ে গেছে? মোদী-শাহ’রা জানাবেন কি? হনুমান চালিশা পড়তে বা হিমালয়ে ধ্যান করতে তারা নিশ্চয়ই নিখোঁজ হয়নি। নারী পাচারের যে র্যাতকেট সারা দেশে সক্রিয় তাদের অন্যতম ঘাঁটি মোদীর গুজরাট। এই ৪১ হাজার নিখোঁজ মহিলাদের নিয়ে একটা গুজরাট স্টোরি তৈরি হোক না। আর প্রধানমন্ত্রী তার প্রচারে রাস্তায় নামুন।
 

Comments :0

Login to leave a comment