Editorial on medicin study

নিকৃষ্ট বাংলার রূপকার

সম্পাদকীয় বিভাগ

নবান্নের সভাঘরে ‘উৎকৃষ্ট বাংলা’র গুরুত্বপূর্ণ সভায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে দিশা মুখ্যমন্ত্রী দেখিয়েছেন তারজন্য নিকৃষ্ট বাংলার রূপকারের শিরোপাই তাঁর পাওয়া উচিত। কর্মসংস্থানের এমন শর্টকাট রাস্তা মমতা ব্যানার্জির উর্বর মস্তিষ্ক ছাড়া অন্য কোনও মাথা থেকে বেরোনো সম্ভব নয়। রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষমতা দখল নেবার পর গত এক দশকেরও বেশি সময়ে তিনি সর্বক্ষেত্রে বাংলাকে ডিগ্রি থেকে ডিপ্লোমায় নামিয়েছেন। তাই রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামোয় সিভিকের ছড়াছড়ি। পুলিশের পদে দক্ষ-যোগ্য লোকদের বাদ দিয়ে অদক্ষ বা কম দক্ষদের নিয়োগ করা হচ্ছে সিভিক পুলিশ রূপে। একই ব্যবস্থা শিক্ষা ক্ষেত্রেও। স্কুলে যোগ্য প্রার্থীদের শিক্ষক পদে নিয়োগ না করে অর্থাৎ শূন্যপদ খালি রেখে স্কুলে পঠনপাঠন চালানো হচ্ছে পার্শ্বশিক্ষকদের দিয়ে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও খালি পড়ে আছে হাজার হাজার অধ্যাপক পদ। নিয়োগ না করে কাজ চালানো হচ্ছে অস্থায়ী শিক্ষকদের দিয়ে। প্রায় প্রতিটি সরকারি দপ্তরে কয়েক লক্ষ পদ খালি। বছরের পর বছর কোনও নিয়োগ নেই। কাজ করানোর ব্যবস্থা হচ্ছে অবসরপ্রাপ্তদের নামমাত্র বেতনে পুনর্নিয়োগ করে এবং অস্থায়ী ঠিকা কর্মী নিয়োগ করে। বিশালাকার স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও হাজার হাজার ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর পদ শূন্য। নিয়োগের কোনও ব্যবস্থা নেই। কর্মীর অভাবে প্রায় ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এবার মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় তিন বছরের প্রশিক্ষণ দেওয়া ডাক্তার এবং ১৫ দিনের ট্রেনিং নেওয়া নার্স নিয়োগ হবে। একই সঙ্গে সাতদিনে প্রশিক্ষণে তৈরি করা হবে পুলিশ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন সময় নষ্ট না করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। তাতে নাকি অনেক লোকের কাজ মিলবে। ঘুরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এটাই বোঝালেন কাজ দেওয়াই তার মূল লক্ষ্য। তেমনি তাড়াহুড়োর কারণে সর্বত্র কর্মীর হাহাকারে স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সরকারি পরিষেবা ভেঙে পড়েছে। শিক্ষকের অভাবে স্কুল, কলেজে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। পুলিশের অভাবে আইন শৃঙ্খলা শোচনীয়। এখন প্রশ্ন হলো সর্বত্র এই যে কর্মীর অভাব, লক্ষ লক্ষ পদ শূন্য এর দায় কার? মমতা ব্যানার্জি কি দায় এড়াতে পারেন? দু’দফা সরকার চালিয়ে এখন তৃতীয় দফা চলছে। প্রতি বছর নিয়ম করে এবং পরিকল্পনা করে যদি শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ করা হতো তাহলে তো আজকে এমন কর্মীর অভাব হতো না। আসলে মমতা যোগ্যতা ও দক্ষতার ক্রমোন্নয়নে বিশ্বাস করেন না। কারণ কর্মীদের যোগ্যতা ও দক্ষতা বাড়লে তার সঙ্গে তাল রেখে তাদের বেতনও বাড়ে। কিন্তু বর্ধিত বেতন দূরের কথা ন্যূনতম বেতন দিতেও মুখ্যমন্ত্রী নারাজ। তাই শূন্যপদে স্থায়ীভাবে দক্ষ ও যোগ্য কর্মী নিয়োগ না করে তিনি স্বল্প মজুরির অযোগ্য-অদক্ষ-অস্থায়ী ‘সিভিক কর্মী’ নিয়োগের পন্থা উদ্ভাবন করেছেন। এই পন্থায় তার অনেক লাভ। সরকারের সামান্য টাকা খরচ করে অনেক বেশি সংখ্যক কর্মীকে নিয়োগ করা যায়। তাদের ডিএ, গ্র্যাচুইটি, পেনশন সহ কোন খাতে ব্যয় করতে হয় না। অস্থায়ী বলে যখন তখন যে কোনও অজুহাতে বসিয়ে দেওয়া যায়। নিয়োগে কঠোর বিধি মানতে হয় না বলে বেছে বেছে দলের ও নেতার প্রতি অনুগতদের নিয়োগ করা যায়। স্থায়ী নিয়োগ হলে নির্দিষ্ট যোগ্যতামান দরকার এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। সিভিক নিয়োগে তার কোনো কিছুর বলাই নেই। এইভাবে দলীয় কর্মীদের সরকারি কাজে যুক্ত করে গোটা প্রশাসনকে দলের দপ্তরে পরিণত করার প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে রাজ্যের প্রায় সব থানাতেই পুলি‍‌শের থেকে সিভিক পুলিশের সংখ্যা বেশি। কোনও কোনও থানা তো দলের হয়ে নিয়ন্ত্রণ করে সিভিক পুলিশরা। এইভাবে সর্বত্র সস্তায় অদক্ষ ও অযোগ্যদের কাজে লাগিয়ে সামগ্রিক মানের অবনমন ঘটানো হয়েছে। এরাজ্যে দক্ষ ও যোগ্যদের কোনও গুরুত্ব নেই। কাজও নেই। দলের অনুগত নিম্ন মেধাদের দিয়ে সরকারি পরিষেবা চলছে। সময়ের সঙ্গে সমাজ এগোয়, বিকশিত হয়, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ পিছাচ্ছে নিকৃষ্টতার দিকে।

Comments :0

Login to leave a comment