Infiltration

ভোট বৈতরণী পারের কড়ি অনুপ্রবেশ

সম্পাদকীয় বিভাগ

বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এবছরই হয়ে যাবে বিহারের নির্বাচন। দক্ষিণ ভারতে কেরালা, তামিলনাডু ও পুদুচেরিতে মোদীদের জয়ের ক্ষীণতম সম্ভাবনাও নেই। বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের নামে পাইকারি হারে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতা পুনর্দখলের যে ছক কষা হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে তাতে হিতে বিপরীত হবার আশঙ্কা দানা বাঁধছে বিজেপি নেতাদের মনে। ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ভোট চুরির মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের জন্য বিজেপি’র পরিকল্পনাকে সামনে এনে বিরোধীরা যেভাবে মোদী-শাহ’দের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তাতে বিহারে শাসক জোট অনেকটাই ব্যাকফুটে। বিরোধীদের প্রচার ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে বিহারের মানুষের মধ্যে। এই অবস্থায় উন্নয়নের ঢাক পিটিয়ে বিশেষ কিছু লাভ হবে বলে ভরসা করতে পারছে না। ভোটের আগে বারবার রাজ্যে গিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণার চিরাচরিত ধামাকাও এখন আর কাজে দিচ্ছে না। ফাঁকিবাজি আর বোকা বানানোর কৌশল মানুষ ধরে ফেলেছে। বিহারে যদি সব কৌশল মাঠে মারা যায় তাহলে উদ্বেগ বাড়বে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে।
যেভাবেই হোক আসামে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় বি‍‌জেপি। আর পশ্চিমবঙ্গে তাদের আশা সরকার গড়তে না পারলেও অন্তত আগের জয় রক্ষা করা। কিন্তু উন্নয়নের হাজার ফিরিস্তি দিয়েও যখন টের পাওয়া যাচ্ছে তাতে কাজের কাজ কিছুই হবার নয় যখন সেই হিন্দু মেরুকরণই শেষ ভরসা। তাই অনুপ্রবেশ ইস্যুই যে এবার মোদীদের প্রধান নির্বাচনী হাতিয়ার হতে চলেছে তা পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে গিয়ে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। দুই রাজ্য বাংলা‍দেশের সীমান্তে। তাই বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ সমস্যাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অতিকায় সমস্যা হিসাবে দেখিয়ে ভোটারদের মন পেতে মুখর হয়ে উঠছে নেতারা। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা, আসামের মুখ্যমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের বি‍জেপি নেতারা অনর্গল বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের আতঙ্ক ছড়িয়ে যাচ্ছেন। কিছুদিন আগে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতও অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বি‍‌জেপি নেতারা বোঝাতে চাইছে সীমান্ত পেরিয়ে দলে দলে বাংলাদেশি মুসলিমরা ভারতে ঢুকে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে জনবিন্যাস বদলে দিচ্ছে। অর্থাৎ মুসলিমরা সংখ্যায় বেড়ে যাচ্ছে। তারা হিন্দুদের কাজ কেড়ে নিচ্ছে, জমি সম্পদ দখল করছে, হিন্দু মেয়েদের বিয়ে পর্যন্ত করছে। আরএসএস-বিজেপি বলছে এতে নাকি ভারতের নিয়ন্ত্রণ মুসলিমদের হাতে চলে যাবে। হিন্দুরা কোণঠাসা হয়ে যাবে।
এমন অনুপ্রবেশ আতঙ্কের কথা এবারের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে লালকেল্লা থেকেও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ঘোষণা করেছেন ডেমোগ্রাফি মিশনের কথা। সরকার এমন জনবিন্যাস পরিবর্তন খতিয়ে দেখবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন একজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকেও এদেশে থাকতে দেওয়া হবে না। বের করে দেওয়া হবে। ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনও অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করার অন্যতম লক্ষ্যে। কিন্তু সন্দেহজনক বিষয় হলো অনুপ্রবেশ নিয়ে এত চিৎকার চললেও দেশে কত অনুপ্রবেশকারী আছে, তাদের কতজনকে চিহ্নিত করা গেছে এবং কতজন ফেরত পাঠানো হয়েছে তার কোনও তথ্য বারবার বলা সত্ত্বেও সরকার দিতে পারেনি। অর্থাৎ গোটাটাই ‍চিলে কান নিয়ে গেছে শুনে চিলের পেছনে দৌড়ানোর মতো। আর লক্ষণীয় ১১ বছর মোদীরা ক্ষমতায়, অথচ আগে কখনও অনুপ্রবেশ নিয়ে এত হইচই হয়নি। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হবার পর অনুপ্রবেশ জিগির চাগাড় দিয়েছে। এটাও বলা হচ্ছে না এত বাংলাদেশি আসছে কী করে। সীমান্তে রক্ষীরা কি ঘুমিয়ে থাকে, না ঘোড়ার ঘাস কাটছে। সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব অমিত শা‍‌হের। অনুপ্রবেশ আটকাতে তিনি যদি ব্যর্থ হন তাহলে মন্ত্রী আছেন কেন?
 

মন্তব্যসমূহ :0

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন