গতবারের ধরনা মঞ্চে এসেছিলেন চন্দ্রবাবু নাইডু। এসেছিলেন তেজস্বী যাদব, কানিমোঝি। এবার কেউ এলেন না।
গতবার ধরনার পক্ষে টুইট করেছিলেন রাহুল গান্ধী। টুইট করেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, চন্দ্রবাবু নাইডুসহ অনেকে।
গতবার ধরনা চলাকালীন ফোন করে সমর্থন, সহমর্মিতা জানিয়েছিলেন অখিলেশ যাদব, মায়াবতী, রাহুল গান্ধী, আহ্মেদ প্যাটেল প্রমুখ। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপাল কৃষ্ণ গান্ধীও ফোন করেছিলেন।
এবার? কেউ ফোন করেননি মমতা ব্যানার্জিকে। কেউ টুইটও করেননি সমর্থনে।
গতবার, অর্থাৎ ২০১৯-র ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি ধর্মতলায় ধরনা দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। ঘনিষ্ট আইপিএস অফিসার রাজীব কুমারকে সিবিআই’র গ্রেপ্তারির চেষ্টার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর ধরনায় বিজেপি-বিরোধী দলগুলির ভালো সাড়া পেয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। এবার ছবি আলাদা। পুরোপুরি আলাদা। এবার মমতা ব্যানার্জির এই ধরনা পাত্তা পেল না অন্যান্য রাজ্যের কিংবা জাতীয় পর্যায়ে বিজেপি-বিরোধী দলগুলির থেকে।
এবার অন্যান্য বিরোধী দলগুলিকে নজরকাড়ার জন্য বারবার বিজেপি-বিরোধী জোটের প্রসঙ্গ তুলেছেন মমতা ব্যানার্জি। যেমন, বৃহস্পতিবারও তিনি বলেছেন,‘‘পরের বছর ভোট হলে সব দলকে একজোট করে লড়াই হবে। আমি সবাইকে এক করে জোট বাঁধব।’’ কিন্তু বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মমতা ব্যানার্জিকে অন্যান্য বিজেপি-বিরোধী দলগুলি আর বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে না— এই প্রশ্নই তুলে দিল দু’দিনের ধরনা। তাছাড়া তৃণমূলের দুর্নীতি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তার খবর দেশের সব রাজনৈতিক দলের কাছেই পৌঁছেছে। তাই রাজীব কুমার ইস্যুতে যারা সক্রিয় হয়েছিল, তারা দুর্নীতিকে সমর্থন করার অভিযোগ থেকে দূরে থাকতে এবার, চার বছর পরে মমতা ব্যানার্জির থেকেই দূরত্ব বজায় রাখলেন।
কতটা অসহায় অবস্থা মমতা ব্যানার্জির? বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দু’দিনের ধরনার সমাপ্তি ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলে ফেললেন,‘‘২দিন হয়ে গেল। বিজেপি’র কোনও চুনোপুঁটি নেতাও ফোন করল না। বলল না, আচ্ছা আমরা দেখব।’’ তবে গত দু’দিন মঞ্চে দলনেত্রীর সঙ্গে প্রায় সেঁটে বসে থাকা এক তৃণমূল নেতা এদিন রাতে বলেছেন,‘‘সৌগতদা যেটা বলেছিল কাল (বুধবার) সেটা সঠিক বলেছিল। দিদির ধরনাই আমাদের শেষ অস্ত্র ছিল। কিন্তু টাকা এল না। পঞ্চায়েত স্তরে যারা ভেবেছিল টাকা এলেই তারা কাজ শুরু করে দেবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে। তারা হতাশ হলো।’’
বুধবার রেড রোডে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির মূর্তির মুখোমুখি ধরনা শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মূলত রাজ্যের প্রাপ্যের দাবিতে। তাছাড়াও ছিল ‘কেন্দ্রীয় এজেন্সির দ্বারা বিরোধীদের হেনস্তা’র মত দাবি। ছিল এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতি তোলপাড় করা ইস্যু —‘আদানির স্বার্থে এলআইসি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে গচ্ছিত জনগণের অর্থ নয়ছয়ের তদন্তর দাবি।’ তবু কোনও ফোন আসেনি। প্রকাশ্যে তাই আক্ষেপ জানান মমতা ব্যানার্জি।
সামনে পঞ্চায়েত ভোট। তাই মুসলমানদের নিয়ে এদিন বেশ কিছুটা বলেছেন মমতা ব্যানার্জি। এদিন বলেন,‘‘রাজ্যে ৩৪% মুসলমান। এখন রমজান চলছে। এই সময়টায় তারা কোনও অন্যায় করে না। আজও হাওড়ায় দাঙ্গা করেছে। তরোয়াল, বুলডোজার নিয়ে মিছিল করার অধিকার কে দিয়েছে? একটা কমিউনিটিকে হামলা করার জন্য গেছো। বুলডোজার নিয়ে বাড়ি ভাঙতে চলে গেছে। এতবড় সাহস!’’ মূলত বিজেপি’র নাম না করে এই সমালোচনার সময় পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন খোদ পুলিশ তথা মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন,‘‘পুলিশকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যারা দাঙ্গা করেছে, আমি কোনও অজুহাত শুনবো না। যারা ঢুকতে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আনঅথরাইজড পথে মিছিল কেন হবে?’’
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন,‘‘নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছিলেন দিল্লি চলো। আমরাও দিল্লি যেতে পারি। যেখানে আটকাবে সেখানে বসে পড়ব। ভিক্ষা করে ট্রেনের টিকিট কাটব। ২দিন ধৈর্য ধরে দেখলাম, ভাবলাম আপনারা ভাববেন।’’ আবার বলেছেন,‘‘ছাত্র যুবরা টিফিনের পয়সা থেকে টিকিট কাটা হবে।’’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী দু’ দফায় ভাষণ দিয়েছেন। প্রথম দফায় ডিএ নিয়ে আন্দোলনরত কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন,‘‘১০৬% ডিএ দিয়েছি। তারপরও চাওয়া বন্ধ হচ্ছে না। কথায় কথায় পেন ডাউন? নাকি পিন ডাউন? এক তারিখ হলে আগে মাইনে পেতেন না। এখন এক তারিখে পেনশনও পান। তারপরও চাই আপনাদের? প্লিজ শাট আপ!’’
এদিনের মঞ্চে ছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান ব্যানার্জি। কিছুক্ষণের জন্য গেছিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ভাষণ দিতে দিতে কেঁদে ফেলেন মুখ্যমন্ত্রীর সামনে। ভাষণ দেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সাংসদ সৌগত রায়, সুদীপ ব্যানার্জি প্রমুখ। তবে এদিন যাননি অভিষেক ব্যানার্জি। তিনি কয়েক দিনের মধ্যেই নয়াদিল্লি যাচ্ছেন, তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে।
Comments :0