WAQF Md Salim

সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশে স্বস্তি: সেলিম

জাতীয়

 ওয়াকফ আইন সংশোধনীর কয়েকটি ধারার ওপরে সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশকে স্বাগত জানিয়েছেন এই মামলার অন্যতম আবেদনকারী সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। গত এপ্রিল মাসে পার্টির পক্ষ থেকে মোদী সরকারের ওয়াকফ আইন সংশোধনীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন তিনি। এদিন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ জানা মাত্র প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ স্বীকৃতি দিচ্ছে যে আমাদের আপত্তির যথাযথ কারণ ছিল। মোদী সরকারের সংশোধনী আইনটি দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের বিরোধী। 
ওয়াকফ আইনের সংশোধনীর অন্তত তিনটি ধারার ওপরে সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশকে স্বস্তিদায়ক বলে উল্লেখ করেছেন মহম্মদ সেলিম। ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ সংশোধনী আইন অনুসারে সমীক্ষার ভিত্তিতে ওয়াকফ সম্পত্তি নির্ধারণে ওয়াকফ বোর্ডকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ওয়াকফ ট্রাইবুনাল গঠন করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু মোদী সরকারের সংশোধনী আইনে এই ক্ষমতা জেলাশাসক বা সমপদমর্যাদার সরকারি অফিসারদের দেওয়া হয়েছে। বকলমে ওয়াকফ সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে যাবতীয় ক্ষমতা সরকার নিজের হাতে নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এর ওপরে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। 
মোদী সরকারের এই সংশোধনীর বিরোধিতা করে মহম্মদ সেলিম বলেছিলেন, সরকার সব জমি সম্পদ কেড়ে নিয়ে বেসরকারি হাতে দিয়ে মানিটাইজেশন করতে চাইছে। কেন্দ্রীয় সরকারের রেল বিমানবন্দর চালাতে পারছে না, বেসরকারি কোম্পানির হাতে তুলে দিচ্ছে। রাজ্য সরকার ট্রাম চালাতে পারছে না, ট্রামের জমি প্রোমোটারদের দিচ্ছে। যেগুলো সরকারের চালানোর কথা সেগুলো বেসরকারি হাতে দিচ্ছে, আর ধর্মীয় যে বিষয়গুলি অসরকারি পরিচালনায় থাকার কথা সেগুলি চালাতে চাইছে? উলটো কাজ? ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনার বদলে সরকার হাসপাতাল আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পরিচালনায় নজর দিক। সংবিধান নাগরিকদের ধর্মবিশ্বাস অনুসারে যা পরিচালনার অধিকার দিয়েছে তাতে হস্তক্ষেপ চলবে না।
এছাড়াও সম্পত্তি দান করে ওয়াকফ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্ততপক্ষে পাঁচ বছর ইসলাম ধর্ম পালনের যে বাধ্যবাধকতা নতুন আইনে মোদী সরকার চাপিয়েছিল তাকেও আপাতত স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রেও সীমা বেঁধে দিয়েছে। সেলিমের মতে, প্রতিটি ধর্মের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অধিকার দেওয়া হয়েছে সংবিধানে। আজকে মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকারে আঘাত হানা সফল হলে কাল শিখদের অধিকারে, তারপরে আদিবাসীদের অধিকারে আক্রমণ হবে। 
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ওয়াকফ সংশোধনী বিল সংসদে পাশ হওয়ার সময়ে নিজের দলের সব সাংসদকে বিলের বিরুদ্ধে ভোটদানের জন্য হাজির করাননি। এমনকি ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিরোধিতা করে মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, এখানে আন্দোলন চলবে না, আন্দোলন করতে হলে দিল্লিতে গিয়ে করো। সেকথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সেলিম বলেছেন, ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে দুর্নীতি বন্ধের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু বিজেপি এবং এরাজ্যের তৃণমূল কেউই তাতে উৎসাহী নয়। ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনের পরে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারই প্রথম ওয়াকফ ট্রাইবুনাল করে ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে দুর্নীতি বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছিল। অন্য রাজ্যে বিজেপি এবং এরাজ্যে তৃণমূল নেতারা সরকারে এসে একের পর এক ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করেছে, নাম পালটেছে। এখন ওয়াকফ আইনের সংশোধনীর নামে বিভাজনের রাজনীতির জন্য সাম্প্রদায়িক উসকানিতে নেমেছে বিজেপি। ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বিপথচালিত করতে একদল ভাড়ায় খাটানো এজেন্টদের দিয়ে বলানো হচ্ছে ‘ইসলাম খতড়ে মে হ্যায়’। আরেকদল সেটা দেখিয়ে বলছে, ‘হিন্দু খতড়ে মে হ্যায়’। আসলে হিন্দু ধর্ম বা ইসলাম ধর্ম নয়, দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র বিপদে। সেই জন্যই আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এবং আইনি পথে প্রতিবাদ করছি।

মন্তব্যসমূহ :0

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন