অনির্বাণ দে: কান্দি
বিভাজন নয়। সব অংশের শ্রমজীবি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই শক্তিশালী করার আহ্বান উঠে এল শনিবার কান্দিতে সিআইটিইউ মুর্শিদাবাদ জেলা সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে। এদিন কান্দির হ্যালিফক্স ময়দানে প্রকাশ্য সমাবেশে সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, আজ যে তৃণমূল। কাল সে বিজেপি। ওদের মধ্যে কোনো লড়াই নেই। দেশের এক প্রান্তে যারা সংখ্যাগুরু। অন্যত্র তারা সংখ্যালঘু। ভাষা হোক ধর্ম হোক। ছবিটা এক। কোথাও ভাষার বিচারে, কোথাও ধর্মের বিচারে ভাগাভাগি করার মধ্যে দিয়ে মানুষকে টুকরো করে দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল, বিজেপি এই কাজের মাধ্যমে নিজেদের লুট চালিয়ে যাচ্ছে।
সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে, লাল ঝান্ডা। আমরা মানুষের মধ্যে ভাগাভাগি করতে দেবো না। গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হচ্ছে সংখ্যালঘুকে আগলে রাখা। বিপন্ন মানুষের পাশে থাকা। এটাই দেশের সংস্কৃতি। কোন ভাগাভাগির লড়াই আমরা মানছি না। গরীব মানুষের কাছে আমাদের দৃঢ অঙ্গীকার এই পৃথিবীকে আগামী প্রজন্মের বাসযোগ্য করে যাওয়ার।
কান্দিতে সম্মেলন প্রসঙ্গে সুজন চক্রবর্তী মনে করিয়ে দিয়েছেন বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন কান্দীর রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী। তুলে ধরেছেন রাজ্যের মিশ্র সংস্কৃতির ছবি। এটাই রাজ্যের স্বাভাবিক সংস্কৃতি। তিনি বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষ লড়াই করে হক আদায় করেছেন। কাজের অধিকার, নিরাপত্তা কেউ দয়া করে দেয় নি। লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে সিআইটিইউ পথ চলেছে। তার আগে থেকে ট্রেড ইউনিয়ন , স্বাধীনতার লড়াইয়ে গ্রামস্তর পর্যন্ত লড়াই নিয়ে গিয়েছেন শ্রমজীবী মানুষ।
এদিন সমাবেশে গ্রামে শহরে গণতন্ত্র, শিক্ষার পরিবেশ, পরিকাঠামোর বিকাশে বামফ্রন্ট সরকারের কাজের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, “ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে পশিচমবঙ্গকে তৈরি করেছেন বামপন্থীরা। মানুষের পঞ্চায়েত, পৌরসভা , গণতান্ত্রিক পথে নির্বাচন সবটা গড়ে তোলা হয়েছে। আর তৃণমূল আরএসএস’র সঙ্গে মিলে চক্রান্ত করেছে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে।’’
তিনি বলেছেন, আরএসএস বলেছে ওঁদের সব থেকে বড় শত্রু কমিউনিস্টরা। তৃণমূল আরএসএস’এঁর সঙ্গে মিলে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে। আর রাজ্যকে ধবংস করার পথে হেঁটেছে। পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে না, স্কুলে পড়াশোনা হচ্ছে না। রাজ্যে চাকরি হচ্ছে না। আগে প্রতি বছর এসএসসি’র পরীক্ষা হয়েছে। স্বচ্ছতা কাকে বলে বামফ্রন্ট দেখিয়েছে। এখন সরকারি স্কুল বন্ধের পথে। গ্রামের কৃষকের ভরসা কেড়ে নিয়েছে তৃণমূল। শিল্প, ব্যবসা, কৃষি, কাজের সুযোগ কিছুই রাজ্যে নিয়ে। অন্যদিকে বিকল্প পথ দেখিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কেরালা। সেখানে এই রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা কাজে যাচ্ছেন।
এদিন সমাবেশে সুজন চক্রবর্তী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিআইটিইউ রাজ্য সম্পাদক জিয়াউল আলম, সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা, সিআইটিইউ জেলা সম্পাদক জ্যোতিরুপ ব্যানার্জি। সভা পরিচালনা করেন মহম্মদ নিজামুদ্দিন।
নেতৃত্ব বলেন, মুর্শিদাবাদের লক্ষলক্ষ বিড়ি শ্রমিক, পরিযায়ী শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিকের বিরুদ্ধে কেন্দ্র এবং রাজ্যের শাসক দল। বিড়ি মালিকরা শাসক দলের নেতার। তাই তৃণমূল মালিকের পক্ষে। তাই লাগু হচ্ছে না সরকার ঘোষিত নূন্যতম মজুরিও।
সিআইটিইউ মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক জ্যোতিরুপ ব্যানার্জি বলেছেন, জেলাজুড়ে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজ চলছে। সেই পথ বেয়েই সম্মেলন। সংগঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গেই শ্রেণির সাংস্কৃতিক চাহিদাকে পূরণ করার লক্ষ্যেও কাজ করছে সিআইটিইউ।
জামির মোল্লা বলেন, দেশজুড়ে শ্রমিকদের উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে কেন্দ্রের সরকার। রাজ্যের সরকার শ্রমিকদের বিরোধী। দুই সরকার সেটিং করে শ্রমিকদের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে। শ্রমকোড বাতিলদের দাবিতে লড়াই, দুই সরকারে লড়াইয়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অধিকার রক্ষা করতেই তৃণমূল, বিজেপিকে হারাতে হবে।
জিয়াউল আলম প্রশ্ন তুলেছেন , একশো দিনের কাজ বন্ধ। কাদের হাতে জব কার্ড জমা আছে ? কাদের হাতে পাশবুক জমা আছে ? তিন বছরে তার বিহিত কড়া গেল না ? শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুরের বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করেছেন রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকার। তিনি আরও বলেছেন, এসআইআর নিয়ে আসছে সরকার। ২০০২ সালে এসআইআর হয়েছিল। কারও মনে ভয় ছিল না। ৬ মাস ধরে বিহারের পিছনে লেগে আছে। এখন রাজ্যের পিছনে লেগেছে। সব ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, শুধু ভোটার লিস্টে নাম আছে কিনা দেখতে হবে। ধর্মীয় বিভাজন করা হচ্ছে। মেহনতী মানুষের সংখ্যা বেশী। দিল্লি থেকে আর নবান্ন থেকে মানুষকে হিন্দু আর মুসলমান হিসেবে দেখা হচ্ছে। খেটে খাওয়া মানুষ হিসেবে দেখা হচ্ছে না। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে মেহনতী মানুষের লড়াই মালিকের বিরুদ্ধে। সেই লড়াইকে তীব্রতর করবে সিআইটিই। এদিন সমাবেশ শেষে সম্মেল উদ্বোধন করেন জিয়াউল আলম। সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন ৪০০ জন প্রতিনিধি।
Comments :0