উৎসবে অনুভবে
গল্প
শারদীর আলোর ডাক
অরিজিৎ মিত্র
নতুনপাতা
একটি ছোট্ট গ্রাম—নাম তার শিউলিপুর। গ্রামের নামের মতোই এখানে পূজোর শুরু হয় ভোরবেলায় শিউলির গন্ধে। কিন্তু এই গ্রামে এক অদ্ভুত প্রথা ছিল—মা দুর্গার প্রতিমা গড়া হতো গ্রামের মাঝের পুরনো বটগাছের নীচে। বিশ্বাস ছিল, সেই বটগাছেই কোনো এক সময়ে সাধক তপস্যা করেছিলেন, আর তাঁর আশীর্বাদে মায়ের আগমন হয় গ্রামের প্রতিটি ঘরে।
গ্রামের মৃৎশিল্পী হরিদাস ছিলেন প্রতিমা গড়ার দায়িত্বে। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় মাটির মূর্তি যেন প্রাণ পেত। কিন্তু এ বছর হরিদাস বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন, হাত কাঁপে, চোখ ঝাপসা। গ্রামবাসীরা চিন্তায় পড়ল—“মায়ের প্রতিমা কে গড়বে এবার?”
ঠিক তখনই সামনে এল হরিদাসের নাতনি—চন্দ্রিমা, এক কিশোরী মেয়ে। সে বলল,
“দাদু, আমি তোমার হাতের ছোঁয়া শিখেছি, আমি চেষ্টা করব।”
গ্রামবাসী প্রথমে হাসল, মেয়েরা কি আর প্রতিমা গড়ে? কিন্তু হরিদাস মাথা নেড়ে বললেন,
“যে হাতে ভক্তি থাকে, সেই হাতেই দেবী আসেন।”
চন্দ্রিমা শুরু করল কাজ। রাতের অন্ধকারে প্রদীপ জ্বেলে, দিনের রোদে ঘেমে—সে প্রতিমা গড়তে লাগল। তার হাতের ছোঁয়ায় মায়ের চোখ, ঠোঁট, ভঙ্গি যেন এক অদ্ভুত দীপ্তি পেল। অনেকেই অবাক হয়ে বলল—“এ মূর্তির দৃষ্টি তো জীবন্ত মনে হচ্ছে!”
অষ্টমীর রাতে মণ্ডপ ভরে গেল মানুষের ভিড়ে। ঢাক বাজল, ধূপ-ধুনোয় মাখা গন্ধে মাতোয়ারা হলো সবাই। প্রতিমার চোখে তাকিয়ে গ্রামবাসী দেখল—যেন সত্যিই মায়ের দৃষ্টি স্নেহে ঝলমল করছে।
হরিদাস অশ্রুসজল চোখে বললেন—
“মা এসেছেন চন্দ্রিমার হাতে। এ শুধু মাটি নয়, এ ভক্তির প্রতিমা।”
তারপর থেকে শিউলিপুরে আর কোনো পুরুষ মৃৎশিল্পী প্রতিমা গড়েনি—চন্দ্রিমা এবং তার পরবর্তী প্রজন্মের নারীরাই সেই দায়িত্ব নিয়েছিল। আর বিশ্বাস জন্মালো—যে হাতে ভালোবাসা ও বিশ্বাস আছে, সেই হাতেই দেবী বাস করেন।
অরিজিৎ মিত্র নবম শ্রেণী কল্যাণ নগর বিদ্যাপীঠ খড়দহ উত্তর ২৪ পরগনা কল্যাণ নগর খড়দহ
Comments :0