YECHURY in BEHALA

সায়রার প্রচারে ইয়েচুরি, জনস্রোত বেহালায়

রাজ্য লোকসভা ২০২৪

লেক মলের সামনে সমাবেশে সীতারাম ইয়েচুরি। ছবি: মনোজ আচার্য।

সিপিআই(এম) দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের প্রার্থী সায়রা শাহ হালিমের প্রচারে অংশ নিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বেহালা থেকে প্রচার মিছিল হয় এদিন। দেশপ্রিয় পার্কের কাছে লেক মলের সামনে জনসভায় ভাষণও দেন ইয়েচুরি।

দক্ষিণ কলকাতা, যাদবপুরের মতো একাধিক কেন্দ্রে প্রচারে বাধা তৈরি করছে তৃণমূল কংগ্রেস। বাধা ভেঙেই প্রচার চালাচ্ছে সিপিআি(এম)। বেহালা থেকে মিছিলে এদিন জনস্রোত দেখা গিয়েছে। মিছিলে অংশ নিয়েছেন বহু মানুষই। রাস্তার দু’পাশে আরও বহুজন সেই মিছিলের পাশে থেকেছেন। 
ইয়েচুরি, এর আগে, স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন যে পশ্চিমবঙ্গে পরাজিত করতে হবে তৃণমূল এবং বিজেপি দুই শক্তিকেই। আর দেশকে বাঁচাতে, সংবিধানকে বাঁচাতে পরাজিত করতে হবে বিজেপি-কে। এদিনই তিনি মনে করিয়েছেন যে রাজ্যে বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ বলতে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের লড়াই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং তাঁর দল তৃণমূল ‘ইন্ডিয়া’-কে দুর্বল করার নানা চেষ্টা চালিয়েছে। তৃণমূলের কার্যক্রমে রাজ্যে জায়গা পেয়েছে সাম্প্রদায়িক বিজেপি।

তিনি বলেছেন, দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংবিধান বিপন্ন। মোদী সরকার ক্ষমতায় ফিরে এলে এই সংবিধানকে বদলে দিতে চায়। এই অবস্থায় দেশ বাঁচাতে হলে বিজেপি’কে ক্ষমতাচ্যুত করতেই হবে। তার জন্যই বাম-কংগ্রেসের জোটবদ্ধ লড়াই। 
বিজেপি বিরোধী মঞ্চ ইন্ডিয়া’ নিয়ে মমতা ব্যানার্জির ধোঁকা সম্পর্কে ইয়েচুরি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই একবার বলেছেন তিনি ইন্ডিয়ার নাম দিয়েছিলেন, কিন্তু ইন্ডিয়াতে আর নেই। এখন আবার বলছেন যে উনি ভোটের পরে ইন্ডিয়া সরকারে শামিল হবেন। সরকারে শামিল হওয়ার নজির ওঁর আছে, সেটা আমরা বাজপেয়ী সরকারের বেলাতেও দেখেছি। কিন্তু বাংলার বুকে বিজেপি’কে পরাস্ত করা ওঁর কর্ম নয়, এই লড়াই বাংলার বুকে করার ক্ষমতা আছে কেবল বাম-কংগ্রেসের জোটবদ্ধ লড়াইয়েরই। দেশ বাঁচাতে পারে বাম-কংগ্রেসের লড়াই। 
এদিন দক্ষিণ কলকাতার লেক মলের সামনে এবং খিদিরপুরে দুটি সভায় ইয়েচুরি বলেছেন, দুই দফার নির্বাচন শেষ হয়ে যেতেই মোদী সুর বদলেছেন। পরাজয় নিশ্চিত বুঝে তিনি সাম্প্রদায়িক বিষাক্ত ভাষণ শুরু করেছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই জন্যই আমরা বলছি, দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে বিজেপি’কে ক্ষমতা থেকে হটাতেই হবে। এরা ক্ষমতায় ফিরলে সর্বনাশ করবে। মুখে মোদী গ্যারান্টির কথা বললেও দেশে স্বাধীনতার পরে এখন বেকারি সর্বোচ্চ। সরকার গরিবকে আরও গরিবে পরিণত করে কর্পোরেট বন্ধুদের ১৬ লক্ষ টাকা ঋণমকুব করেছে। আর যে কালো টাকা ফিরিয়ে আনবে বলেছিল, সেগুলোই এখন নির্বাচনী বন্ডের টাকা হয়ে বিজেপি’তে ফিরে এসেছে।
এদিন সন্ধ্যায় কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস সমর্থিত বামফ্রন্টের সিপিআই(এম) প্রার্থী সায়রা শাহ হালিমের সমর্থনে লাল পতাকা, ফেস্টুন, পোস্টার, লাল বেলুনে সুসজ্জিত একটি মহামিছিলে অংশ নেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বেহালার সখের বাজার থেকে শুরু হয়ে ডায়মন্ডহারবার রোড ধরে উত্তর দিকে মিছিল এগিয়ে বেহালা ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের সামনে শেষ হয়। লাল ঝান্ডা হাতে সিপিআই(এম) কর্মীদের সঙ্গে এদিন মিছিলে পা মেলান তেরঙা ঝান্ডা হাতে কংগ্রেস কর্মীরাও। বিশাল মিছিলের সামনে তারা হাতুড়ি কাস্তে প্রতীক আঁকা লাল শালু নিয়ে পথ হাঁটছিলেন মহিলারা। ফেস্টুনে লেখা ছিল কংগ্রেস সমর্থিত বামফ্রন্ট প্রার্থীকে জয়ী করার আহ্বান। মিছিল থেকে চুরি দুর্নীতির বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিরুদ্ধে, তৃণমূল বিজেপি’কে বিদ্ধ করে স্লোগানের ঝড় ওঠে। প্রায় অবরুদ্ধ ডায়মন্ডহারবার রোডের দু’পাশে দাঁড়িয়ে বহু মানুষ হাত নেড়ে সমর্থন করেছেন মিছিলকে। মিছিলে সীতারাম ইয়েচুরি এবং সায়রা শাহ হালিম ছাড়াও ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা সুদীপ সেনগুপ্ত, দেবাশিস চক্রবর্তী, কৌস্তভ চ্যাটার্জি, নিরঞ্জন চ্যাটার্জি সহ বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ এবং দক্ষিণ কলকাতার কংগ্রেস নেতৃত্বও। 
এই মিছিলে অংশগ্রহণের পরে এদিন রাতেই সীতারাম ইয়েচুরি দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারীতে লেক মলের সামনে একটি নির্বাচনী জনসভায় এবং খিদিরপুরে একটি জনসভায় ভাষণ দেন এবং বাংলার বুকে বিজেপি ও তৃণমূলকে পরাস্ত করতে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানান।

Comments :0

Login to leave a comment