shola craft artist

সঙ্কটের মধ্যেও শোলা শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে দিনহাটার গ্রাম, ব্যস্ততা তুঙ্গে

রাজ্য জেলা

অমিত কুমার দেব

ভাটশোলা বিশেষ মেলে না। তাই শোলা শিল্পে ব্যবহার বাড়ছিল থার্মোকলের। কিন্তু শারদোৎসবের মণ্ডপ সজ্জায় কিংবা প্রতিমার অলংকার সজ্জায় থার্মোকলের ব্যবহার নিয়ে কড়াকড়ি মনোভাব নিয়েছে প্রশাসন। এবার চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ভাটশোলা জোগার করতে সমস্যায় পড়ছেন কোচবিহারের শোলা শিল্পীরা।
তা সত্ত্বেও এই চিরাচরিত শোলা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে শারদোৎসবের আগে কর্মব্যস্ততা রয়েছে কোচবিহারের শোলা শিল্পীদের মধ্যে। শারদোৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই শোলা শিল্প। কারণ প্রতিমার অলংকার কিংবা চিরাচরিত প্রথা মেনে কদম ফুল তৈরিতে এই শিল্পকর্মই ব্যবহার হয়। বংশ-পরম্পরাকে বজায় রেখে তাই আজও শোলা শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন শোলা শিল্পীদের গ্রাম হিসেবে খ্যাত কোচবিহার দিনহাটা-১ ব্লকের ভেটাগুড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মালাকারটারি গ্রামের এই শোলা শিল্পীরা। তাই শারদোৎসবের মুখে দম ফেলার ফুরসত নেই শোলা শিল্পীদের। 
আসামের ফকিরা গ্রাম থেকে এই শোলার মূল উপাদান ‘ভাটশোলা’ এনে থাকেন এই শিল্পীরা। শোলা শিল্পের মূল উপাদান এই ‘ভাটশোলা’। পুকুরের জলের নিচে থাকে শোলার এই অংশ। যার দৈর্ঘ্য হয় প্রায় ৪ ফুট। আগে নিজেদের এলাকায় এই চাষ হলেও এখন উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কারণ নিজেদের এলাকার পুকুরগুলিতে এখন আর ভালো মানের ‘ভাটশোলা’ উৎপন্ন হয় না। ভরসা তাই আসাম। তার জন্য বাড়তি করও দিতে হচ্ছে শিল্পীদের। ফলে সংকট বাড়ছে এই শিল্পে।
চরম আর্থিক অনটনকে সঙ্গী করে আজও শারদোৎসবের আগে ব্যস্ততার ছবি কোচবিহার শহর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামের ১০-১২টি পরিবারে। নাওয়া খাওয়া ভুলে দিনরাত এক করে শোলার বিভিন্ন সামগ্রী প্রস্তুত করতে ব্যস্ত পরিবারের প্রায় প্রত্যেক সদস্য।  গোটা বছরই এই কাজ করে চললেও শারদোৎসবের আগে তাঁদের দম ফেলার ফুরসত থাকে না।  
শোলার সামগ্রীর চাহিদা আগের থেকে কমেছে অনেকটাই। কারণ কর্পোরেট ছোঁয়া লেগেছে বিভিন্ন মৃন্ময়ী মূর্তির গহনাতেও। তবে কোচবিহার জেলার পাশাপাশি আসাম রাজ্যের কোকরাঝাড়, বঙাইগাঁও, গুয়াহাটি সহ এই রাজ্যের শিলিগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ইসলামপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের তৈরি শোলার সামগ্রী প্রতি ছরই কিছু-না-কিছু রপ্তানি হয়। আর এই কারণেই কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পারেন তাঁরা। 
এই পরিবারগুলির সদস্যদের মধ্যে ছোট থেকে বড়, কিংবা পুরুষ থেকে মহিলা সকলেই এই শিল্পকে যেন আত্মস্থ করে নিয়েছেন। শিশুরা শৈশব থেকেই এই শিল্পের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন, এটাই সংশ্লিষ্ট এই গ্রামের ঐতিহ্য।   তবে এই শিল্পীদের আয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন মহাজনদের ফড়েরা। ফড়েদের মাধ্যমেই শোলার তৈরি সামগ্রী বিক্রি করতে হয় এই শোলা শিল্পীদের। এক্ষেত্রে অনেকটাই অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের। সরাসরি মহাজনদের কাছে তারা এই সামগ্রী বিক্রি করতে পারলে, হয়তো অনেকটাই লাভবান হতেন বলে মনে করেন এই শোলা শিল্পীদের একটি বড় অংশ। তবে লাভ এবং লোকসানের দাড়িপাল্লায় নয়, বংশ-পরম্পরার এই ঐতিহ্যকে জীবন্ত রাখতে আজও অক্লান্ত ভাবে শোলার সামগ্রী প্রস্তুত করে চলেছেন  অগণিত শোলা শিল্পীরা।

মন্তব্যসমূহ :0

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন