Population growth

সংখ্যাটা সব নয়

সম্পাদকীয় বিভাগ

Population of india china human development index bengali news editorial

অন্য ক্ষেত্রে না পারলেও অন্তত জনসংখ্যার হিসেবে চীনকে টেক্কা দিয়েছে ভারত। রাষ্ট্রসঙ্ঘ প্রকাশিত বিশ্ব জনসংখ্যা রিপোর্ট অনুযায়ী চলতি বছরের মাঝামাঝি ভারতের মোট জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৪২ কোটি ৮৬ লক্ষ। একই সময়ে চীনের জনসংখ্যা হবে ১৪২ কোটি ৫৭ লক্ষ। অর্থাৎ চীন থেকে ভারতের জনসংখ্যা ২৯লক্ষ বেশি হবে। 

রাষ্ট্রসঙ্ঘের অনুমিত হিসেব আগামী বছরগুলিতে ভারতের জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে তবে বৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে ২০৫০ সাল নাগাদ ১৬৬ কোটি ৮০লক্ষে পৌঁছাবে। আর তখন চীনের জনসংখ্যা কমে হবে ১৩১ কোটি। তারপরও ভারতের জনসংখ্যা বাড়তে থাকবে। থামবে ২০৬০ সালের পর। তখন জনসংখ্যা আরও অনেকটা বেড়ে যাবে। ১৯৫০ সাল, যখন থেকে রাষ্ট্রসঙ্ঘ জনসংখ্যার হিসাব রাখতে শুরু করে তখন ভারতের জনসংখ্যা ছিল ৮৬ কোটি আর চীনের ১১৪ কোটি।


জনসংখ্যায় চীনকে পেছনে ফেলার শাসক আরএসএস-বিজেপি কতটা খুশি সেটা স্পষ্ট নয় তবে আর এসএস নেতারা হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে নিশ্চয়ই খুশি। কারণ বিভিন্ন সময় তারা হিন্দু মহিলাদের অন্তত চারটি সন্তানের জন্মদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের ধারণা মুসলিমদের সঙ্গে টেক্কা দিতে হিন্দুদের সংখ্যা ত্বড়িত গতিতে বাড়ানো জরুরি। হিন্দুত্ববাদীরা মনে করে থাকে কোনও দেশ বা জাতির উন্নতির শর্ত তাদের সংখ্যা। সংখ্যায় বাড়লে তাদের শক্তি বাড়বে, সামর্থ বাড়বে, উন্নত হবে। তাই হিন্দুত্ববাদীরা এই খবরে উদ্দীপ্ত হবে তেমনটাই স্বাভাবিক।


কোন দেশ বা জাতির সামগ্রিক বিকাশ শুধুমাত্র জনসংখ্যার উপর নির্ভর করে না। সংখ্যা কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা নেয় ঠিকই আবার অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতির বাধাও হয়ে দাঁড়ায়। কোন সমাজে মোট জনসংখ্যার মধ্যে কর্মক্ষম বা কমবয়সির সংখ্যা বিশেষ করে কমবয়সির সংখ্যা যত বেশি হবে সেই সমাজের বিকাশের সম্ভাবনা তত বেশি। তেমনি সেই কম বয়সি বা কমবয়সিদের যদি উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা না যায় তাহলে তারা লাভের বদলে ক্ষতি করবে বেশি।

আবার কমবয়সিদের যদি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষিত ও দক্ষ করে তোলা না যায় তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়বে না যা আখেরে বিকাশের রাস্তা সংকীর্ণ করবে। ভারতের মত প্রবল আয় ও সম্পদ বৈষম্যের দেশে যেখানে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রের মধ্যে জীবন কাটান, পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত শিক্ষার সুযোগ নেই, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধার্ত দেশগুলির অন্যতম সেদেশে দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সুখকর হতে পারে না। 

বেশি জনসংখ্যা তখনই লাভজনক তখন তাদের উচ্চ উৎপাদনশীল কাজে যুক্ত করা যায়। ভারতে সেই অবস্থা নেই। যে জনসংখ্যা আছে তাদেরই কাজ দেবার সামর্থ্য নেই। সংখ্যা বাড়লে তাই সঙ্কট বৃদ্ধি অনিবার্য। তাছাড়া সংখ্যা বাড়লে তাদের বসবাস ও জীবন ধারণের জন্য বেশি জমি দরকার। তখন বনাঞ্চল ও জলাভূমি কমবে। পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে। ভারতে ইতিমধ্যে প্রতি জনসংখ্যা পিছু বনভূমি পৃথিবীর সবচেয়ে কম।

অতিরিক্ত মানুষের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজ, বাসস্থান জোগাড় করতে বিপুল বিনিগোগ দরকার। তার জোগান দেবার অগ্রাধিকার দিয়ে এমন পরিকল্পনা করতে হবে যাতে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায় এবং মজুরি ও আয় বৃদ্ধির রাস্তা প্রশস্ত করা যায়। নচেৎ মানুষের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে বেকারি, দারিদ্র, ক্ষুধা। পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হবে বটে কিন্তু অধিকাংশ মানুষের দুবেলা ভাত জুটবে না।

Comments :0

Login to leave a comment