Bangla Bachao Yatra Samsherganj

সেই সমসেরগঞ্জেই বিভাজনের রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ লালঝান্ডার

রাজ্য জেলা বাংলা বাঁচাও যাত্রা

হাইওয়ে ছেড়ে ভেতরের রাস্তায় বারবার দাঁড়িয়ে যাচ্ছে বাইক মিছিল। রাস্তার দু’ধারে খানিক বাদে বাদেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষ। তার মধ্যে সব বয়স আছে। 
ফারাক্কা থেকে সমশেরগঞ্জের রাস্তায় হয়েছে বাইক মিছিল। বাংলা বাঁচাও যাত্রা বারবার স্লোগান তুলেছে সম্প্রীতির।
শুক্রবার সেই ৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২ -র এই দিনেই বাবরি মসজিদ ভেঙেছিল বিজেপি আরএসএস। এদিন আবার মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে মসজিদের শিলন্যাস ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে চলছে প্রচার। 
ঠিক এই আবহেই পরিযায়ী শ্রমিকের কথা, বিড়ি শ্রমিকের মজুরি, শ্রমজীবী হাসপাতালের দাবি তুলে প্রচার চালাচ্ছে সিপিআই(এম)’র ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’।
শুনছেন, আসছেন বহু মানুষ। তাঁদের কেউ দোকান বাজারে কাজ করেন, কারো ছোট ব্যবসা। এসেছেন বিড়ি শ্রমিক। পরিযায়ীরা।
সকালে ফরাক্কায় স্টেশনের পাশে হয়েছে জনসভা। ছিলেন তারিকুল ইসলাম। কাজ করেন কেরালায়, তিরুবনন্তপুরমে। পেশায় রাজমিস্ত্রি। বলেছেন সে রাজ্যে দিনে মজুরি এক হাজার টাকা। নিয়মই হল ঠিকাদারকে থাকার ব্যবস্থা করতে হয়। ৫-৬ মাস বাদে বাদে আসেন বাড়িতে। তারিকুলকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেরালায় অবস্থা কেমন? 
এই পরিযায়ী শ্রমিক বললেন, “ওখানে আমাদের স্বাস্থ্যের, চিকিৎসার ব্যবস্থাও আছে। ভালো ব্যবহার পাই। জায়গাটা ভালো লেগে গেছে।” 
কেরালায় বাম গণতান্ত্রিক ফন্ট সরকার পরিযায়ীদের জন্য আলাদা নীতি চালু করেছে। সে রাজ্যে তাদের বলা হয় অতিথি শ্রমিক। 
ফারাক্কায় বিষয় হয়েছে এনটিপিসির ছাইপুকুর। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ছাই বহু কাজে ব্যবহার হয়। তার টেন্ডার নিয়ে গোলমালও হয়। চায়ের দোকানে বা ছোটখাট জটলায় কথা বললেই শোনাও যায়। 
সমশেরগঞ্জে বাসুদেবপুরে হয়েছে জনসভা। ফারাক্কা তারপরে বাইক মিছিল এবং সমসেরগঞ্জে সর্বত্র দেখা যাচ্ছে কমবয়সীদের অংশগ্রহণ। এখানেই সিপিআইএম মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা বললেন, “বিড়ি মালিকরা এমএলএ, এমপি হচ্ছে। তারা মন্ত্রী হচ্ছে। আর বামপন্থীরা দুর্বল হয়েছে। তাতে বিড়ি শ্রমিকের মজুরি না মেলার অবস্থা হয়েছে। বামপন্থীদের জোর বাড়ানো দরকার স্কুলের জন্য, বিড়ি শ্রমিকের মজুরির জন্য।” 
সমসেরগঞ্জ, জঙ্গিপুরে হয়েছিল প্রাণঘাতী দাঙ্গা। নিহত হয়েছিলেন হরো গোবিন্দ দাস, চন্দন দাস। জনসভার এলাকা থেকে খুব দূরে নয় তাঁদের বাড়ি। 
ধর্ম নিয়ে রাজনীতিকে কাঠগড়ায় তুলে জামিল মোল্লা বলেছেন, “তৃণমূল এবং বিজেপি কিভাবে দাঙ্গা বাধায় তার জ্বলন্ত প্রমাণ সমশেরগঞ্জ। গোলমালের খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বারবার পুলিশ প্রশাসনের সব তরে ফোন করেছি ব্যবস্থা নিতে বলেছি। অথচ পুলিশ চুপ করে দাঁড়িয়ে সব দেখেছে। এই দাঙ্গায় সবচেয়ে বড় অপরাধী মমতা ব্যানার্জির পুলিশ।”
এনআরসি থেকে এসআইআর বা ওয়াকফের উদাহরণ তুলে তিনি বলেছেন মমতা ব্যানার্জি মুসলমানের মসিহা নন। বলেছিলেন এসআইআর হতে দেব না বলেছিল কিন্তু হয়েছে। বলেছিলেন ওয়াকফ সংশোধনী চালু হতে দেব না। আন্দোলন করলে দিল্লি দেখিয়েছিলেন। এখন তাঁর দপ্তর চিঠি পাঠিয়ে কেন্দ্রের পোর্টালে তথ্য হাজির করতে বলছে। তাড়াহুড়োই কাগজপত্র জোগার করতে না পারলে ওয়াকফ সম্পত্তি বেদখল হবে।
জনসভায় এসেছিলেন রাবিউল ইসলাম। ছোট মোট কাজকর্ম করেন। তিনিও এসেছিলেন সমাবেশে। রাবিউল বলেছেন, “আমরা তো ‘সেকুলার’ থাকতেই চাই। গোলমাল তো সবসময় বাধানো হয় বাইরে থেকে।”
একাধিক জনসভায় বক্তব্য রেখেছেন সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম। বক্তব্য রেখেছেন রাজ্য কমিটির সদস্য সোমনাথ সিংহ রায়, ময়ূখ বিশ্বাস, এসএফআইয়ের প্রাক্তন সর্বভারতীয় নেত্রী দীপ্সিতা ধরও। 
দীপ্সিতা বলেছেন, “যে জেলায় পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে অন্য রাজ্যে চলে যান যুবরা, যেখানে হাসপাতাল দরকার, বিশ্ববিদ্যালয় দরকার। এখানে মন্দির মসজিদ রাজনীতির বিষয় হতে পারে? ধর্ম নয় আসলে এর সঙ্গে জড়িত ভোট।”

Comments :0

Login to leave a comment