সরকারি মান্ডিতে ধান কেনা হচ্ছে ধীর গতিতে। অনলাইনে বুকিং সিস্টেমের সার্ভার খুলছে না দিনের বেশিরভাগ সময়েই। বুকিং করতে না পেরে অসহায় কৃষকরা ফড়েদের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হচ্ছেন। ক্ষোভ ঝরে পড়ছে কৃষকদের। সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে গিয়ে এমনই বিপাকে পড়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের কৃষকরা। 
ঢাক ঢোল পিটিয়ে টিভিতে কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে রাজ্য সরকার কৃষকের থেকে থেকে ধান কেনার প্রচার করে। কিন্তু বেশিরভাগ কৃষকই সরকারি মান্ডিতে ধান বিক্রি করতে পারছে না। 
ডিসেম্বরে রাজ্যজুড়ে সরকারি দামে ধান বিক্রি নিশ্চিত করতে লড়াই জারি রাখার ডাক দিয়েছে সিপিআই(এম)। সদ্য সমাপ্ত রাজ্য কমিটি বৈঠকেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফড়িয়া এবং চালকল মালিকদের দাপটে কৃষকরা ধানের দাম পান না। তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজ্য সরকারের মদতে এই চক্র চালানোর অভিযোগ তুলেছে সিপিআই(এম)। দক্ষিণ দিনাজপুর জুড়ে সেই অভিযোগের একের পর এক প্রমাণ মিলেছে। কৃষকনেতারা বলছেন, সার্ভার কখন চলে আর বন্ধ থাকে জানে কেবল ফড়িয়ারা। ধানের মান নিয়ে টালবাহানা করে কৃষককে কম দামে বিক্রির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। 
বংশীহারীর মান্ডিতে দাঁড়িয়ে সারা ভারত কৃষক সভার জেলা সম্পাদক সকুরদ্দিন আহমেদ বললেন, ‘‘জেলার বিভিন্ন মান্ডিতে কৃষকরা ধান নিয়ে গেলে সরকারি কর্মীরা নানা অজুহাত দিচ্ছেন। বলা হচ্ছে, ধানের মান ভাল নেই, ধান ভেজা। আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে যে বিভিন্ন ব্লকে কৃষকরা মান্ডিতে ধান বিক্রি করতে এসে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ধানে জলীয় বাষ্প আছে বলে কৃষককে ফেরত দেওয়া হচ্ছে।’’ 
আহমেদের ক্ষোভ, সরকার বলছে যে অনলাইনে বুকিং করার পর নির্দিষ্ট দিনে ধান আনতে হবে। কৃষকরা অনলাইন সেন্টারে গিয়ে বুকিংই করতে পারছেন না। 
ধান বিক্রির সরকারি পোর্টালের সার্ভার দিনের বেশিরভাগ সময়তেই খোলে না। ফলে ঘন্টার পর  ঘন্টা অপেক্ষা করলেও বুকিং হচ্ছে না। আবার যদিও বা বুকিং হলো তো মান্ডিতে নিয়ে যাওয়ার পর ধানের মান নিয়ে টালবাহানা করছেন সরকারি আধিকারিকরা।’’ 
তপন ব্লকের রামপুরের কৃষক মান্ডিতে ধান নিয়ে আসা কৃষকদের অযথা হেনস্থা করার প্রতিবাদে কৃষকরা মান্ডিতেই একযোগে বিক্ষোভ করেন। অবশেষে কৃষকদের ধান কিনতে বাধ্য হয় প্রশাসন। সাংবাদিকের সামনে কৃষকরা অভিযোগ করেন, এখানে ধানের মান পরীক্ষা করার জন্য যে মেসিনটি আছে সেটা বহু পুরনো এবং অকেজো। মান্ডির পাশে এক মালিক কম দামে ধান কেনার ব্যবস্থা করেছে। অসহায় কৃষকদের সেখানে কম দামে ধান বিক্রি বাধ্য করতে বাধ্য হচ্ছেন। 
বালুরঘাট ব্লকের মাহিনগরের কৃষক নেতা সাজাহান সর্দার বলেন, ‘‘বালুরঘাট হাজিপুরে কৃষক মান্ডিতে মাত্র পঞ্চাশ জনের থেকে ধান কেনা হচ্ছে দিনে। এই সংখ্যা না বাড়ালে তিন মাসেও কৃষক ধান দিতে পারবেন না।’’ কুমারগঞ্জের মান্ডিতে চলছে শাসক দলের মদতে দালাল ও ফড়িয়ারাজ, অভিযোগ করলেন সিপিআই(এম)  কুমারগঞ্জ এরিয়া কমিটির সম্পাদক রণজিত তালুকদার। তিনিও বুকিং সিস্টেম সম্পর্কে একই অভিযোগ করেন। তালুকদার বলছেন, ‘‘কৃষকদের বোকা বানিয়ে সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে যোগসাজশে ফড়িয়ারাই ধান বিক্রি টোকেন পাচ্ছে।  সার্ভার কখন খোলে আর বন্ধ হয় একমাত্র ফড়িয়ারাই জানতে পাড়ছে।’’ 
এই কৃষকনেতা জানান যে কুমারগঞ্জের বিডিওকে সতর্ক করা হয়েছে সারা ভারত কৃষক সভার পক্ষ থেকে। তিনি বলেন অতি দ্রুত সমস্যা না মিটলে প্রয়োজনে ঘেরাও করা হবে বিডিওকে। 
 
 
                                         
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    
Comments :0