Editorial

কাশ্মীর নাকি হাসছে

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial


প্রধানমন্ত্রী সহ গোটা মন্ত্রীসভা এবং দলের শীর্ষ নেতারা যখন দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদীর ‘ঐতিহাসিক ও অনন্য সাধারণ’ সাফল্য উদ্‌যাপনে মাতোয়ারা তখন মোদী-শাহ বর্ণিত শান্ত কাশ্মীরে তল্লাশি অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে প্রাণ হারালেন নিরাপত্তা বাহিনীর তিন শীর্ষ অফিসার। যথারীতি জঙ্গিদের টিকির সন্ধানও মেলেনি। প্রায় একই সময়ে জাতিদাঙ্গা বিধ্বস্ত মণিপুরে সেইতেই জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্য হয়েছে এক পুলিশ অফিসারের। একদিকে সরকার আনন্দ উৎসব করে প্রধানমন্ত্রীর সাফল্যের ঢাক পেটাচ্ছে অন্যদিকে দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীরূপে আত্মবলিদান করছেন নিরাপত্তা রক্ষীরা। যেখানে জওয়ান-পুলিশ জঙ্গিদের হাতে প্রাণ দিচ্ছেন সেখানে নাকি মোদীর নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে অমিত শাহ ও অন্যান্য মন্ত্রীরা অনর্গল দাবি করছেন ও প্রচার করছেন। এই সেদিনও সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করে ২০১৯ সালের আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা অর্থাৎ জম্মু-কাশ্মীরের জন্য বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেবার পর থেকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ কমে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কাশ্মীরে নাকি এখন শান্তি বিরাজ করছে। ভূস্বর্গ নাকি হাসছে। মোদী-শাহরা মিথ্যার সাজানো বেদীতে দাঁড়িয়ে খুশির বান ডাকলেও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ যে কমেনি তার প্রমাণ দক্ষিণ কাশ্মীরের শোকেরনাগে জঙ্গিদের হাতে মরতে হয়েছে তিন পদস্থ জওয়ানকে। গত ৪ আগস্ট কুলগামে জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারাতে হ‍‌য়েছে তিন জওয়ানকে। এবছরই পুঞ্চ ও রাজৌরি জেলায় সন্ত্রাসবাদীদের হামলায় ৫জন দক্ষ কমান্ডো সহ ১০ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কাশ্মীর অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী দৌরাত্ম্য খানিকটা কমলেও জম্মু অঞ্চলে তা অনেকটা বেড়ে গেছে। মোদী-শাহদের কোনও অস্ত্রেই জঙ্গিদের ঘায়েল করা যাচ্ছে না। তাই ব্যর্থতা আড়ালের জন্য ক্রমাগত মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কাশ্মীরে শান্তির কল্পিত ছবি প্রচার করা হচ্ছে। কাশ্মীরে শাসক দলের রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ক্রমাগত প্রশাসনিক হিংস্রতা ও বর্বরতা বাড়ানো হয়েছে। জঙ্গি দমন ও নির্মূলের নামে সাধারণ মানুষকে বন্ধুকের নলের মুখে দাঁড় করাতে বাধ্য ক‍‌রেছে। একের পর এক অধিবাসীদের অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের নিঃস্ব, রিক্ত ও অসহায় করা হয়েছে। আর ক্ষমতা ও ঔদ্ধত্য জাহির করে দেশময় দেশপ্রেম ও হিন্দুত্বের জিগির তোলা হয়েছে মেরুকরণের লক্ষ্যে। জোর করে জম্মু-কাশ্মীরের সাংবিধানিক মর্যাদা কেড়ে বিজেপি ভোটের রাজনীতির ফায়দা তুলেছে বটে তাতে কাশ্মীরের মানুষ অধিকারচ্যুত হয়েছেন। বঞ্চিত হয়েছেন মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার থেকেও। অথচ সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করা যায়নি। বস্তুত সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করা মোদী-শাহদের অগ্রাধিকার কখনোই ছিল না। সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে তারা রাজনীতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তাই কাশ্মীরের জনগণের স্বার্থসিদ্ধি হয়নি, বরং স্বার্থহানি হয়েছে। লাভবান হয়েছে আরএসএস-বিজেপি এবং অবশ্যই নরেন্দ্র মোদী।
 

Comments :0

Login to leave a comment