মোদী সরকারের আমলে দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে, ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ‘আচ্ছে দিন’-এর গল্পের নটে গাছ অনেক দিন আগেই মুড়িয়ে গেছে। ইন্ডিয়াজ কনজিউমার সার্ভে ৩৬০’র সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০২১-এর মধ্যে সবচেয়ে ধনী ২০ শতাংশের আয় বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। উচ্চ মধ্যবিত্ত ২০ শতাংশের আয় বেড়েছে ৮ শতাংশ। মধ্যবিত্ত ২০ শতাংশের আয় কমেছে ৫ শতাংশ। নিম্ন মধ্যবিত্ত ২০ শতাংশের আয় কমেছে ৩৫ শতাংশ। দরিদ্রতম ২০ শতাংশের আয় কমেছে ৫৫ শতাংশ। এই সমীক্ষা বেসরকারি সংস্থার। পরিবারভিত্তিক মাথাপিছু প্রকৃত আয়ের হিসাব এখানে প্রতিফলিত। সরকারি তথ্য অমিল। সরকার প্রায় কোনো পরিসংখ্যানও প্রকাশ করছে না।
এই সমীক্ষার ফল আরেকটি প্রমাণ যে ভারত বিশ্বের অন্যতম বৈষম্যের দেশে পরিণত হচ্ছে। কোনো কোনো হিসাবে ভারত অর্থনৈতিক বৈষম্যে পৃথিবীতে দ্বিতীয়। ‘সকলের বিকাশ’ স্লোগান এখনও চলছে। এখনও প্রধানমন্ত্রী দু’বেলা বলে চলেছেন, তাঁর সরকার সকলের উন্নয়নের কাজ করছে। অথচ হিসাবে দেখা যাচ্ছে বৈষম্যের মাত্রা ব্রিটিশ আমলের থেকেও তীব্র।
উল্লিখিত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, শুধু দরিদ্র মানুষেরই নয়, মধ্যবিত্তের আয়ও কমছে। প্রকৃত আয়ের হ্রাস শতাংশের বিচারে খুবই মারাত্মক। তার একটি বড় কারণ মধ্যবিত্তের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বেকারি এবং স্থায়ী কাজের অভাব। কোনো একটি-দুটি পেশায় তাৎক্ষণিক ভাবে কিছু বেশি বেতন পাওয়া গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা স্থির হয়ে আছে বা মুদ্রাস্ফীতির বিচারে নিম্নগামী। মধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যে ‘ভালো আছি’ অনুভূতি ছড়ানোর জন্য প্রয়াস অব্যাহত। ‘আকাঙ্ক্ষার সমাজ’ তৈরি হয়েছে বলেও মিডিয়ায় লেখালিখি হয়ে থাকে। অথচ সেই আকাঙ্ক্ষার, ভালো থাকার ভিত্তি যে ক্রমে দুর্বল হচ্ছে তা সমীক্ষায় প্রমাণিত।
দরিদ্রতর মানুষের জীবনযাপন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। তাঁদের মধ্যে কর্মহীনতা আরো প্রবল, আয়ের স্থায়িত্ব আরো অনিশ্চিত। মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা তাঁদেরকেই বিপন্ন করে সবচেয়ে বেশি।
প্রকৃত আয়ের এই অধোগতির সামগ্রিক ফলাফল হলো দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। তা যত কমবে, তত দেশে শিল্প উৎপাদন, পরিষেবার স্থবিরতা আসবে। পণ্য বিক্রি না হলে উৎপাদন করে কী হবে? পণ্য উৎপাদনের মন্দা আরো বেশি মানুষকে কর্মহীন করে তুলবে। ভারতীয় অর্থনীতি এই গাড্ডায় পড়ে গেছে।
ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের তরফে বিশেষ করে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বহুগুণ বৃদ্ধি করা দরকার। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা দরকার। কিন্তু কেন্দ্রের সরকার হাঁটছে উলটো পথে। দেশের অর্থনীতির একচেটিয়াভবন বাড়ছে। দু-একটি মুষ্টিমেয় কর্পোরেটের হাতে অর্থনীতির বিপুল অংশই তুলে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে অর্থনীতির অভিমুখ জনগণের প্রয়োজনের বিপরীতমুখী হয়ে যাচ্ছে। কর্পোরেট গোষ্ঠী মুনাফা বৃদ্ধির জন্য যা করার করবে, কিন্তু সচেতন ভাবে দেশের মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ তাদের কাছ থেকে মোটেই আশা করা যায় না। পরিসংখ্যান প্রকাশ বন্ধ করে বৈষম্যের এই প্রকট কুৎসিত চেহারা সরকার গোপন করতে পারবে না।
Comments :0