Madhyamik student decreased

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমায় দায়ী সরকারই

কলকাতা

এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী উবে গিয়েছে! এই ৪ লক্ষ পড়ুয়া বস্তুত সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ছিটকে গেল।
২০২২সালে ১০ লক্ষ ৯৮ হাজার ৭৭৫ জন মাধ্যমিক দিয়েছিল। এবার ৬ লক্ষ ৯৮হাজার ৬২৬ জন মাধ্যমিক দেবে বলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছে। ৪ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মাধ্যমিক না দেওয়ার পিছনে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের যুক্তি, করোনার প্রভাব। করোনাকে অজুহাত করলেও, পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ায় স্পষ্ট হচ্ছে সরকারের সদিচ্ছার অভাব বলে শিক্ষাবিদদের মত। তাঁদের বক্তব্য, করোনা অতিমারী সময়কালে প্রায় সব রাজ্য শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করে দিলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার দু’বছর শিক্ষার দরজা বন্ধ রেখেছিল। সেই সময় অনলাইনে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করেছিল সরকার। এবছর যারা মাধ্যমিক দিচ্ছে তারা করোনা অতিমারী সময়কালের ছাত্র-ছাত্রী। তখন তারা নবম শ্রেণির পড়ুয়া। এই ৪ লক্ষ ছেলেমেয়ে অনলাইন পঠনপাঠনে সুযোগ পায়নি বলেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কেউ ভিন রাজ্যে কাজে চলে গিয়েছে, নয়তো বাবার দোকানে সহায়তার কাজ করছে। এইসব ছেলেমেয়েদের শিক্ষার অঙ্গনে ফিরিয়ে আনার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।
মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেছেন, সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে সঙ্কুচিত করার স্পষ্ট লক্ষণ এই ঘটনা। অতিমারীর পর যেসব ব্যবস্থা সরকারের নেওয়া উচিত ছিল তা যদি নেওয়া হতো তাহলে আমাদের এই দুঃখজনক তথ্যটি শুনতে হতো না। প্রতিবছর যেখানে মাধ্যমিকের সংখ্যা বাড়ে সেখানে প্রায় অর্ধেক কমে যাওয়া মানে সরকারি শিক্ষার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। অর্থনীতির অধ্যাপক ঈশিতা মুখার্জি বলছেন, গ্রাম, শহর দুই ক্ষেত্রেই ড্রপআউট বেড়েছে। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে, ছেলেরা কাজের খোঁজে বাবা-মায়ের হাত ধরে পরিযায়ী হয়ে যাচ্ছে। তাদের কাছে পড়াশোনাটা শৌখিন হয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে গ্রামাঞ্চলে কন্যা পাচার বেড়েছে, মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। মূলত এইসব কারণে স্কুলগুলিতে ড্রপআউট বাড়ছে এবং তার ফলস্বরূপ এই বিপুল পরিমাণ পরীক্ষার্থী কমে গেছে।
নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেছেন, রাজ্য সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই মাধ্যমিকে ৪ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী কমেছে। সরকার চায় না সমাজের গরিব, আদিবাসী তফসিলি পরিবারের ছেলেমেয়েরা সরকারি বিদ্যালয়ে পড়ে। এই ৪ লক্ষের মধ্যে দেখা যাবে বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেমেয়ে। তারা পড়া ছেড়ে কাজে লেগে পড়েছে। অতিমারীর পর এইসব পরিবারের ছেলেমেয়েরা যে শিক্ষার অঙ্গন থেকে ছিটকে যেতে পারে, এই সতর্কতা বারবার সরকারকে দেওয়ার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। অনলাইন পঠনপাঠন সবার কাছে যাবে না তা সতর্ক করার পরেও বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিকল্পের ব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে এবিটিএ’র পক্ষ থেকে সরকার, শিক্ষা দপ্তরকে দেওয়া হয়েছিল। আসলে বর্তমান শাসকদল জাতীয় শিক্ষানীতির নানা ধারা কার্যকর করা শুরু করে দিয়েছে। তাই ৪লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী কমে যাওয়ার পরেও সরকার উদাসীন।
৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী ড্রপআউট হয়ে গিয়েছে, এটা মানতে নারাজ পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু। তাঁর কথা, ৪ লক্ষের মধ্যে দেখা যাবে অনেকেই বেসরকারি বিদ্যালয় ভর্তি হয়েছে। এটা শহরে যেমন হয়েছে, গ্রামেও হয়েছে। ফলে ৪ লক্ষ ড্রপআউট হয়ে গেল এটা বলা যাবে না। গ্রামাঞ্চলে এখন বহু বেসরকারি স্কুল খুলেছে। যদিও সেগুলিতে পঠনপাঠনের মান নিয়ে যথেষ্ঠ প্রশ্ন রয়েছে। এর থেকে আরও বড় প্রশ্ন হচ্ছে, কেন অভিভাবকরা পয়সা খরচ করে বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করতে বাধ্য হচ্ছে। সরকার শিক্ষার বিস্তার চায় না, সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকাঠামো বাড়াতে চায় না বলেই শিক্ষক নিয়োগ করা হয় না। তাই অভিভাবকরা বাধ্য হয়েই কষ্ট হবে জেনেও বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করাতে বাধ্য হচ্ছেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment