General elections 2024

ধর্মীয় মেরুকরণে মোদীর নয়া তাস, রাজা-মহারাজা বনাম নবাব-নিজাম!

জাতীয় লোকসভা ২০২৪

  নির্বাচনী প্রচারে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এবারের সংযোজন রাজা-মহারাজা বনাম নবাব-নিজাম। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের যে মরিয়া চেষ্টা মোদী শুরু করেছেন, তাতে প্রতিদিন তিনি নতুন নতুন জিনিস জুড়ছেন এই কাজে। রবিবার কর্নাটকে তিনি পরপর চারটে সমাবেশ করেছেন বেলগাভি, সিরসি, দেবানগিরি এবং হোসাপেটে। প্রথম সভা বেলগাভি থেকে তিনি বলেছেন, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী রাজা-মহারাজাদের অভিযুক্ত করছেন, কিন্তু নবাব, নিজাম, সুলতান, বাদশাহদের অত্যাচার সম্পর্কে নীরব থাকছেন। মহীশূর সহ কর্নাটকে এবারে বিজেপি’র অবস্থা টলমল বলে মত বিশ্লেষকদের। ফলে এদিন একই দিনে চার-চারটি সমাবেশ করতে হয়েছে মোদীকে। সেখানেই তিনি মেরুকরণের নতুন অস্ত্র রাজা-মহারাজা এবং নবাব-নিজাম টেনেছেন। 
মহীশূর কেন্দ্র থেকে বিজেপি এবার প্রার্থী করেছেন মহীশূরের রাজপরিবারের সদস্য যদুবীর কৃষ্ণদত্ত চামরাজা ওয়াডিয়ারকে। গোটা দেশেই পূর্বতন রাজ পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন রাজ্যে লোকসভা ভোটে বিজেপি’র প্রার্থী। রাজ পরিবারগুলিকে টেনে বিভিন্ন অংশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি মিথ্যা গৌরবের আবেগ তৈরির চেষ্টা অনেক দিন ধরেই করছে সঙ্ঘ পরিবার। সেটা রাজস্থান থেকে ত্রিপুরা পর্যন্ত প্রসারিত। একইভাবে কর্নাটক থেকে কাশ্মীর পর্যন্তও সেই চেষ্টা আছে। এই তালিকায় নতুন সংযোজন নবাব সিরাজদৌল্লা ও মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র। কর্নাটকেও সেই আবেগ চাড়িয়ে দিতেই এদিন মোদী শাসকের ভালোমন্দও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিতেই নির্ধারিত করতে চেয়েছেন। মহীশূর রাজ পরিবারের বর্তমান উত্তরাধিকারী যদুবীর কৃষ্ণদত্ত চামরাজা ওয়াডিয়ারকে বিজেপি এবার মহীশূর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছে। গোটা দেশেই পূর্বতন রাজ পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন রাজ্যে লোকসভা ভোটে বিজেপি’র প্রার্থী। রাজ পরিবারগুলিকে টেনে বিভিন্ন অংশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে একধরনের গৌরববোধ তৈরি করার জন্য বহুদিন ধরেই কাজ করছে সঙ্ঘ পরিবার। কর্নাটকেও এবার সেই কাজ করার চেষ্টা করেছে বিজেপি। মোদীও সেই অস্ত্রেই শাণ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। 
পাশাপাশি কংগ্রেসের ইশ্‌তেহার নিয়ে লাগাতার যে মিথ্যাচার করছেন, এদিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মোদী বলেছেন, কংগ্রেসের শাহজাদা (রাহুল গান্ধী) এবং তাঁর বোন দুই জনেই জানিয়েছেন, যদি তারা ক্ষমতায় আসেন, তাহলে দেশের এক্স-রে করবেন। আপনাদের সম্পত্তি, ব্যাঙ্ক লকার, জমি, গাড়ি, মহিলাদের সোনাদানা, মঙ্গলসূত্রের এক্স-রে করবে। প্রতিটি বাড়িতে তল্লাশি চালাবে এবং আপনাদের সম্পত্তির দখল নিয়ে নেবে। এই সম্পত্তির দখল নিয়ে তারপর তাদের প্রিয় ভোটব্যাঙ্কের মধ্যে তা বিলি করে দেবে। কংগ্রেস তুষ্টিকরণ এবং ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতির মাধ্যমে আমাদের ইতিহাস এবং স্বাধীনতা সংগ্রামকে লিখতে চায়। মোদী বলেন, কংগ্রেসের শাহজাদা বলেছেন, রাজা-মহারাজারা অত্যাচারী ছিলেন। এই প্রসঙ্গেই তিনি শিবাজীকে টেনে আনেন। মহারাষ্ট্র লাগোয়া উত্তর কর্নাটকে শিবাজীর প্রভাব আছে এবং তার সঙ্গেই তিনি মহীশূরের রাজাদের কথাও টেনে এনে বলেন, এদের অপমান করেছেন রাহুল গান্ধী। মোদীর বক্তব্যের পরেই কংগ্রেস তীব্র আক্রমণ করেছেন মোদীকে। দলের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ টুইট করে বলেছেন, করুণ অবস্থার থেকেও খারাপ অবস্থা হয়েছে মোদীর। রাহুল গান্ধীর প্রতিটি বক্তব্য বিদ্বেষপূর্ণ এবং ক্ষতিকরভাবে বিকৃত করছেন তিনি। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, লোক খেপানো এবং উত্তেজিত করার জন্যেই মোদী এই কাজ করছেন বলে উল্লেখ করেছেন রমেশ। রমেশ বলেছেন, মোদীর বিদায় অবশ্যম্ভাবী। সেটা অনুমান করেই মোদী ক্রমশ বেলাগাম মিথ্যা বলছেন। মোদীর ভোট প্রচারের বক্তব্য লজ্জাজনক। 
মোদীর সাম্প্রদায়িক প্রচার নিয়ে এদিন সরব হয়েছেন আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদব। তিনি সোসাল মিডিয়ায় লিখেছেন, যে প্রধানমন্ত্রী গণতান্ত্রিক মূল্য, লোকলজ্জা, মর্যাদা এবং পদের গৌরব ত্যাগ করে সংবিধানকে দূরে ঠেলে দিয়ে স্বয়ং মানুষের মধ্যে মিথ্যা, ভ্রম এবং ঘৃণা ছড়িয়ে সমাজ থেকে ন্যায়, সৌহার্দ, সমতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধকে শেষ করে দেশ এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন তৈরি করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এইরকম এক জন ব্যক্তির এক মুহূর্তও পদে থাকার অধিকার নেই। লালু প্রসাদ যাদব আরও লিখেছেন, আমাদের মহান দেশের ন্যায়প্রিয় সমাজ কখনও এমন বিভাজনকারী ভাবনাকে বরদাস্ত করেনি, করবেও না। কুর্সির জন্য এই মহান দেশ এবং বাবা সাহেবের সংবিধানের বলি চড়ানোর মনোভাব নিয়ে থাকা লোকেদের জনতা এই ভোটে কড়া শিক্ষা দেবে।
বিজেপিকে দুনিয়ার সব থেকে মিথ্যাবাদী পার্টি হিসেবে চিহ্নিত করে, এদিন ‘এক্স’-এ তিনি লিখেছেন, ‘‘যাদের ভিত হলো মিথ্যে, শুধু তারাই বালিকে সিমেন্ট ভেবে ভুল করেন। মিথ্যে দিয়ে তৈরি এই দুর্গের দেওয়াল তারা ক্রমাগত বাড়াতে থাকেন এবং হঠাৎ একদিন তা নিজের ভারেই ধসে পড়ে।’’
 

Comments :0

Login to leave a comment