Bangla Bachao Yatra

মন্দির মসজিদ নয়, রোজগার চাইছে নবগ্রাম

রাজ্য জেলা বাংলা বাঁচাও যাত্রা

সার দিয়ে এক কোণে বসেছিলেন নাসিমা খাতুন আর তার সঙ্গী মহিলারা। পাঁচগ্রামে জনসভা তখন সবে শুরু হয়েছে। সিপিআই(এম)’র ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’-র কথা আগেই শুনেছেন। গ্রামে প্রচারও হয়েছে। 
কী চাইছেন এই মহিলারা? এই যে মন্দির বা মসজিদ নিয়ে এত হইচই, তাঁরা কী ভাবছেন?
কথা থেকে উঠে এলো যে যে দাবি তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো কারখানা, রোজগার আর কাজ। 
মঞ্চের কথা মিলে যাচ্ছিল বসে থাকা জনতার মনোভাবের সঙ্গে। এর মধ্যেই সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম থেকে মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা বলেছেন যে মুসলমানরা কাউকে বলেনি মসজিদ করে দিতে। হিন্দুরাও কাউকে বলেনি মন্দির করে দিতে। বরং সবাই বলছেন কাজের ব্যবস্থা করতে। তৃণমূল বা বিজেপি কেউই সেটা করতে আগ্রহী নয়। 
নবগ্রামে রয়েছে কৃষক মান্ডি। পাঁচগ্রামে এসেছিলেন বহু কৃষিজীবী। কেউ ছোট বা মাঝারি কৃষক, কেউ খেতমজুর। ফসলের দাম না পাওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে যথেষ্ট। প্রকৃত কৃষক স্লিপ পান না। পড়ে আর তৃণমূলের মাতব্বররা নিয়ন্ত্রণ করে মান্ডি।
পাশের জেলা বীরভূমের সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেছেন, "ডেউচা পাচামির বেনিয়মের কথা। কী প্রকল্প কেউ জানে না। বলা হচ্ছে কয়লা খনি, আসলে মতলব ব্যাসল্ট পাথরের ব্যবসা। তাও নিয়ম ভেঙে। বলেছেন, জাল ডিসিআর কেটে কোটি কোটি টাকা তোলার চক্র চালাচ্ছে তৃণমূল। টাকা যাচ্ছে কলকাতায়। 
রাজনীতিতে ঢুকছে অপরাধের টাকা। অপরাধীদের মাথায় তুলছে সেই রাজনীতি।
পাঁচ গ্রামের পর সন্ধ্যায় নবগ্রামে হয়েছে জনসভা। সেখানে এসএফআই রাজ্য সভাপতি প্রণয় কার্জ্যি আর ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক ধ্রুবজ্যোতি সাহা বক্তব্য রেখেছেন। 
ধ্রুবজ্যোতি বললেন, "গ্রামীণ অর্থনীতিকে ধ্বংস করার ব্যবস্থা করেছে তৃণমূল। এরাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার ৩৪ বছরে তিল তিল করে গড়েছিল গ্রামের অর্থনীতি। গ্রামে গ্রামে হয়েছিল স্কুল। জেলা স্তরে হয়েছিল কলেজ। স্কুল বন্ধ হচ্ছে আর খুলছে মদের দোকান। ধ্রুবজ্যোতি বললেন দিদি আসার পর শুরু হলো সারের কালোবাজারি। শুরু হলো মাইক্রিফিনান্সের উৎপাত। বামফ্রন্ট গ্রামে গ্রামে স্কুল তৈরি , কলেজে তৈরি। স্কলে প্রতি বছর শিক্ষক নিয়োগ। মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্র কাছে। স্কুল বন্ধ মদের দোকান। ঠিক করবেন স্কুল হবে না মদের দোকান।"
এসএফআইয়ের প্রাক্তন নেত্রী দীপ্সিতা ধর আক্রমণ করেছেন ধর্ম নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির রাজনীতিকে। বলেছেন যে এ রাজ্যে দাঙ্গা হত না। বাইরের রাজ্যের মানুষও জানত পশ্চিমবাংলায় দাঙ্গা হয় না। জ্যোতি বসু বলেছিলেন সরকার না চাইলে দাঙ্গা হয় না। আজকে তৃণমূলের সরকার চাইছে বলে দাঙ্গা হচ্ছে। এই বাংলাকে বদলাতে হবে। শক্তি বাড়াতে হবে বামপন্থীদেরই। তার জন্য ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’।
নাম জানাতে চাইলেন না তবে সমাবেশে যোগ দেওয়া অবসরপ্রাপ্ত এক পুলিশ কর্মী ক্ষোভ জানালেন সরাসরি। বললেন, "কাজ করবে কি, চোর বাঁচাতে সুপ্রিম কোর্টে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। আর বললেন, মমতার বহরমপুরের মিটিং ফ্লপ হয়েছে। সরকারি টাকায় মিটিং করেন তৃণমূলের প্রচারে।"
পঞ্চায়েত লুট, গণতান্ত্রিক অধিকার দিতে না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এক ওষুধ বিপণন কর্মী বললেন ভোট দিতে না দেওয়াটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে বললেন, ৩৯ বছর বয়স হল। গত কয়েক বছরে যেভাবে হনুমান মন্দির লাফিয়ে বেড়েছে আগে কখনো দেখিনি। মসজিদে এসি লাগাতেও আগে দেখিনি সেভাবে। রাজনীতিতে এমন ধর্মের দাপাদাপিও দেখিনি।
ধ্রুবজ্যোতি বলেছেন, "গণতন্ত্রের অধিকার, শ্রমিক কৃষকের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারে বামপন্থীরাই। হানাহানি নয় ভালবাসার বাংলা, সম্প্রীতির বাংলা দিতে পারে বামপন্থীরাই।"

Comments :0

Login to leave a comment